জাপানে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের কথা ভাবছে টোকিও: ইতো নাওকি

রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি
ফাইল ছবি

জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেছেন, কিছু রোহিঙ্গাকে জাপানে পুনর্বাসনের কথা ভাবছে টোকিও। বাংলাদেশ যখন মিয়ানমার থেকে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে আসা ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর চাপ কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে তখনই রাষ্ট্রদূত এ কথা জানালেন।

জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইতো বাসসকে বলেন, জাপান বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের অনুরোধ পেয়েছে। এ ছাড়া ইউএনএইচসিআরও রোহিঙ্গাদের জাপানে পুনর্বাসনের সম্ভাবনার বিষয় বিবেচনার পরামর্শ দিচ্ছে আমাদের।

রাষ্ট্রদূত ইতো বলেন, ইতিমধ্যেই টোকিও থেকে ১০০ কিলোমিটার উত্তরে একটি শহরে ৩০০ রোহিঙ্গা বাস করছে। কিন্তু সাধারণ নীতি অনুসারে জাপান বিদেশী শরণার্থীদের বিষয়ে কিছুটা সতর্ক ছিল।

গত রাতে ঢাকা ত্যাগের আগে রাষ্ট্রদূত ইতো বলেন, ‘জাপানে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের একটি ‘বেস’ রয়েছে। তবে এই মুহূর্তে এ নিয়ে আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এর আগে বলেছিলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানকে বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার বোঝা ভাগাভাগির আহ্বান জানিয়েছেন।

মোমেন বলেন, তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যে এই দেশগুলোর প্রত্যেকে ২০১৭ সালে সেনা-সমর্থিত জাতিগত দমন-পীড়নের মধ্যে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতদের মধ্য থেকে অন্তত এক লাখ করে নিতে পারে।

বারবার পীড়াপীড়ি করেও মিয়ানমার এখন পর্যন্ত তাদের আশ্বাস সত্ত্বেও একজন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়নি। ঢাকার অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে প্রতীকীভাবে ২৪ রোহিঙ্গাকে নিয়ে গেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এটাকে ‘সিন্ধুর এক বিন্দু’ বলে অভিহিত করেছেন।

কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ঢাকাকে জানিয়েছে যে তারা প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে কিছু রোহিঙ্গাকে নিয়ে যাবে এবং তাদের মধ্যে ৬২ জনকে প্রথম ব্যাচের জন্য সংক্ষিপ্তভাবে তালিকাভুক্ত করেছে।

জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা জানি প্রত্যাবাসনই এই সমস্যার (একমাত্র) সমাধান এবং মিয়ানমারই একমাত্র দেশ যেটি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে।’

রাষ্ট্রদূত্র ইতো আরও বলেন, টোকিও ‘গভীরভাবে আশা করছে’ মিয়ানমার-বাংলাদেশের আলোচনা প্রক্রিয়া শেষ হবে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।

ইতো বলেন, রাখাইনের পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে জাপান বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে এবং মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। তবে তারা এ ক্ষেত্রে ‘মধ্যস্থতা’ শব্দটি ব্যবহার করতে আগ্রহী।

জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইতো বলেছেন, ‘আমাদের এখনো (রোহিঙ্গা) প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং, আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখব। আমরা জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর প্রতি আমাদের তহবিল অব্যাহত রাখব।’

ইতো বলেন, টোকিও এ বছর রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা তহবিল বরাদ্দের পরিমাণ বাড়িয়েছে। বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত মানুষ ও হোস্ট সম্প্রদায়ের জন্য ২ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলার দিয়েছে। যেখানে গত বছর বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৫০ লাখ মার্কিন ডলার।

রাষ্ট্রদূত ইতো আরও বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জাপানের বৈদেশিক সহায়তা মূলত ইউক্রেনের দিকে সরে যেতে পারে এমন জল্পনা সত্ত্বেও এই বর্ধিত বরাদ্দের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের বিষয়টিতে টোকিও যে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে তা প্রকাশ পেয়েছে।

ইতো বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থায় জাপানের অবদান বাড়ছে। আমি মনে করি এটি স্পষ্ট প্রমাণ যে আমরা এখনো এই (রোহিঙ্গা) সংকটের দিকে মনোনিবেশ করছি। আমরা এখনো কক্সবাজার ও ভাসানচরে রোহিঙ্গা শিবিরের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রার সংকট নিরসনের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে কক্সবাজারে ১২ লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। তাদের বেশির ভাগই মিয়ানমারের সামরি বাহিনীর দমনপীড়নের এসেছে। যেটাকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নির্মূলের প্রকৃষ্ট উদাহরণ’ ও অন্যান্য মানবাধিকার গোষ্ঠী ও সংস্থা এ ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

রাখাইনে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের মধ্যে আস্থার ঘাটতির কারণে প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা দুইবার ব্যর্থ হয়েছে। আর গত পাঁচ বছরে কোনো রোহিঙ্গাই দেশে ফিরে যেতে পারেননি।

প্রত্যাবাসন চেষ্টা বারবার ব্যর্থ হলেও সরকার উন্নত দেশগুলোকে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তৃতীয় কোনো দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে।