রাঙামাটিতে তিন বছরে পাঁচ গুণ বেড়েছে সূর্যমুখীর চাষ

সূর্যমুখী চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন পাহাড়ের মানুষ। রাঙামাটি সদরের বোদিপুর গ্রামে খেত পরিচর্যা করছেন এক চাষি। সম্প্রতি তোলাসুপ্রিয় চাকমা

রাঙামাটি সদর উপজেলার বালুখালী ইউনিয়নের দুর্গম গ্রাম দুত্তাং। সদর উপজেলায় হলেও গ্রামটি শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে, যেতে হয় নৌকায় ও পায়ে হেঁটে। দুর্গম এই গ্রামের বাসিন্দা লবা চাকমা এবার প্রথমবারের মতো দুই একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন।

লবা চাকমা বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের উৎসাহে সূর্যমুখী চাষ করেছেন তিনি। এতে ৬০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। দুই একর জমির সূর্যমুখীবীজ বিক্রি করে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় হবে বলে তিনি আশাবাদী। লবা চাকমা আরও বলেন, সূর্যমুখীবীজের কাঙ্ক্ষিত দাম পেলে ধান চাষের তুলনায় অন্তত তিন গুণ লাভ হবে।

লবা চাকমার মতো রাঙামাটির বিভিন্ন এলাকায় সূর্যমুখী চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকেরা। তাঁদের অনেকেই ক্ষতিকর তামাক চাষের পরিবর্তে সূর্যমুখী চাষ করছেন। অনেকে চাষাবাদ করছেন পরিত্যক্ত জমিতে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ বছরে প্রায় পাঁচ গুণ বেড়েছে সূর্যমুখীর চাষ। ২০২২ সালে রাঙামাটিতে পরীক্ষামূলকভাবে আট একর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয়। গত বছর সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে ৬৮ একর জমিতে। এ বছর রাঙামাটির ১০টি উপজেলায় ৪০০ একর জমিতে সূর্যমুখীর চাষাবাদ হয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বছর সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল মাত্র ৭৫ একর। তবে কৃষকদের আগ্রহের কারণে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় চাষাবাদ কয়েক গুণ বেড়েছে। প্রতি একরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২ মেট্রিক টন। জেলায় সূর্যমুখীর ফলন ভালো এবং লাভজনক হওয়ায় ভবিষ্যতে সূর্যমুখীর চাষাবাদ আরও বাড়বে।

সূর্যমুখীখেত থেকে একদিকে যেমন কৃষকের আয় বেড়েছে, তেমনি এসব খেত হয়ে উঠছে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিনোদন স্পট। প্রতিদিনই এসব খেতে ভিড় করেন নানা বয়সী মানুষ। পাহাড়ি শিল্পীদের বিভিন্ন গান ও শর্টফিল্মের ভিডিও করা হচ্ছে এসব খেতে। এ ছাড়া সারা দিনই থাকে মানুষের ছবি তোলার ব্যস্ততা।

দুত্তাং গ্রামের বাসিন্দা কীর্তিধন চাকমা বলেন, ‘আগে জানতাম, কেবল ফুল হিসেবে সূর্যমুখী লাগানো হয়। পরে কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জেনেছি, সূর্যমুখীবীজ থেকে তেল পাওয়া যায়, যা তুলনামূলক দামি। ন্যায্যমূল্যে বীজ বিক্রির সুযোগ পেলে পাহাড়ের কৃষকেরা সূর্যমুখী চাষে অনেক বেশি আগ্রহী হবেন।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটির উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, লাভজনক হওয়ায় রাঙামাটিতে সূর্যমুখীর চাষ বেড়েছে। পরিত্যক্ত জমিতে এবং তামাক চাষের পরিবর্তে সূর্যমুখী চাষে কৃষকেরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। জেলা পরিষদও তাঁদের প্রণোদনা দিচ্ছে।