পাশাপাশি এই স্কোয়াড এখন ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানিযোগ্য পণ্য পরীক্ষার কাজও করছে। যন্ত্রের সাহায্যে স্ক্যানিংয়ের পর কে-৯ দলের প্রশিক্ষিত কুকুর দিয়ে রপ্তানিযোগ্য পণ্য পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষা শেষে পণ্যগুলো ইউরোপ-আমেরিকায় পাঠানোর ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
১৯৯৮ সালে পাঁচটি প্রশিক্ষিত কুকুর নিয়ে পুলিশে প্রথম ডগ স্কোয়াড চালু করা হয়। ২০০৪ সালে এই স্কোয়াড র্যাবে স্থানান্তরিত হয়। ২০১৫ সালে সিটিটিসিতে কে-৯ নামে ডগ স্কোয়াড চালু করা হয়।
জন্মগতভাবে প্রবল ঘ্রাণশক্তি, শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তির পাশাপাশি প্রভুভক্তির মতো গুণ রয়েছে কুকুরের। এই গুণগুলোর সুবাদে কুকুরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসংক্রান্ত কাজে লাগানো হয়।
সিটিটিসির ডগ স্কোয়াডের কর্মকর্তারা জানান, সারা বিশ্বে ১৩৫ জাতের কুকুর রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ প্রজাতির কুকুর এ কাজে বেশি পারদর্শী। এগুলো হলো জার্মান শেফার্ড, ডাচ্ শেফার্ড, বেলজিয়ান মেলিনয়েজ, ব্রিটিশ ল্যাব্রেডর ও ব্লাড হাউন্ড।
সিটিটিসির কে-৯ দলের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ পরিদর্শক ফখরুল আলম। পুলিশে ডগ স্কোয়াড চালুর দিন থেকে টানা ২৪ বছর ধরে এ-সংক্রান্ত কাজে যুক্ত আছেন তিনি।
ফখরুল আলমের হাত ধরেই সিটিটিসিতে ডগ স্কোয়াড চালু করা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে কে-৯ দলে ৩ প্রজাতির ২৯টি প্রশিক্ষিত কুকুর আছে। কুকুরগুলোকে প্রশিক্ষণ দিয়ে পারদর্শী করে গড়ে তোলা হয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের বলা হয় হ্যান্ডলার। প্রশিক্ষিত কুকুর ও হ্যান্ডলারের সমন্বয়ের ওপর নির্ভর করে কাজের সফলতা। দলে থাকা কুকুরগুলোর মধ্যে একেকটিকে একেক কাজে পারদর্শী করে প্রস্তুত করা হয়। কোনো কুকুর মাদক উদ্ধারে পারদর্শী। আবার কোনোটি বিস্ফোরক শনাক্তে পারদর্শী।
প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষা
কে-৯ ডগ দলের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, একটি কুকুরের প্রশিক্ষণের সবচেয়ে উপযোগী সময় ছয় মাস থেকে এক বছর। তবে বাছাই করা কুকুরগুলোকে ছয় মাস পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এই সময়ে তাদের বাধ্য হতে শেখানো হয়।
প্রশিক্ষণ শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে হ্যান্ডলার প্রথমেই কুকুরকে বাধ্য হওয়ার প্রশিক্ষণ দেন। তারপর যে কাজে কুকুরটিকে ব্যবহার করা হবে, সেই কাজের জন্য প্রশিক্ষণ শুরু হয়। যেমন মাদক উদ্ধারে ব্যবহার করা হলে তাকে বিভিন্ন ধরনের মাদক চেনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিভিন্ন ধরনের মাদকের গন্ধের সঙ্গে তাকে পরিচিত করা হয়। আবার যে কুকুরকে বিস্ফোরক শনাক্তে ব্যবহার করা হবে, তাকে বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরকের গন্ধের সঙ্গে পরিচিত করা হয়।
গত রোববার পুলিশ অর্ডার ম্যানেজমেন্টের (পিওএম) মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কে-৯ দলের কুকুরগুলোকে নিয়ে নানা কসরত চলছে। একপর্যায়ে একজন পুলিশ সদস্য সন্ত্রাসী সেজে অস্ত্র-বিস্ফোরক নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন। একটি কুকুর ক্ষিপ্রতার সঙ্গে তাঁকে আক্রমণ করে। কিছু সময় ধরে দুই পক্ষে ধ্বস্তাধ্বস্তি চলে। সন্ত্রাসী সাজের পুলিশ সদস্যকে মাটিতে ফেলে দেয় কুকুর। তাঁকে পরাজিত করে কুকুরটি। পরে কয়েকজন এসে কুকুরটিকে নিবৃত্ত করেন। অস্ত্র-বিস্ফোরক নিয়ে মাঠে প্রবেশ করা পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করেন।
কে-৯ দলের পরিদর্শক ফখরুল আলম বলেন, কুকুরগুলোকে শুধু প্রশিক্ষণ দিয়েই কার্যক্রম শেষ করা হয় না; তাদের কর্মক্ষমতা-দক্ষতা বাড়াতে নিয়মিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রতি তিন মাস পরপর এই পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেমন ২০টি নমুনা বা জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়। ২০ মিনিটের মধ্যে সব কটি জিনিস খুঁজে বের করতে হয় কুকুরগুলোকে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলো স্বল্প সময়ে এগুলো খুঁজে বের করে ফেলে।
খাবার
স্কোয়াডের কুকুরগুলোকে আলাদা আলাদা কক্ষে রাখা হয়। খাবার দেওয়া হয় এক বেলা। খাবারের পরিমাণ তিন কেজি। খাবারের মধ্যে রাখা হয় গরু ও মুরগির মাংস, গন্ধমুক্ত সাদা চাল, পাউরুটি, রসুন, সয়াবিন, তরল দুধ, ডিম ও বিভিন্ন ধরনের সবজি।
খাবারের বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তা ফখরুল আলম বলেন, কুকুরগুলোকে কর্মক্ষম রাখার জন্যই নির্দিষ্ট পরিমাণে একবেলা খাবার দেওয়া হয়।
বেশি খাবার দিলে কুকুরগুলোর ওজন বেড়ে যায়, অলস হয়ে পড়ে। এতে তারা কর্মক্ষমতা হারায়। ফখরুল আলম জানান, একটি কুকুর গড়ে ১৪ বছর বাঁচে। এর মধ্যে প্রায় ১০ বছর তারা কর্মক্ষম থাকে। এ কারণে ১০ বছর পর কুকুরগুলোকে অবসরে পাঠানো হয়।