বিজয়ের ডিসেম্বর দেশে দেশে
তানজানিয়া: আফ্রিকান ঐক্যের মশালবাহী বিজয়
ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে কীভাবে তারা সেই দিনটিকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।
ডিসেম্বর মাস এলেই বিশ্বজুড়ে মুক্তির ধ্বনি শোনা যায়। আজ ৯ ডিসেম্বর, পূর্ব আফ্রিকার বৃহত্তম দেশ তানজানিয়ার স্বাধীনতা দিবস। ১৯৬১ সালের এই দিনে ট্যাঙ্গানিকা (তানজানিয়ার মূল ভূখণ্ড) ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি লাভ করে এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নেয়। এই দিনটি তানজানিয়ার জনগণের কাছে শুধু স্বাধীনতার দিন নয়, এটি তাদের আত্মমর্যাদা ও আফ্রিকান ঐক্যের প্রতীক।
তানজানিয়ার স্বাধীনতার স্থপতি জুলিয়াস নায়াররে, যিনি ‘মওয়ালিমু’ বা শিক্ষক নামেই বেশি পরিচিত। বিশ্বাস করতেন, স্বাধীনতা মানে কেবল পতাকার পরিবর্তন নয়, এর অর্থ হলো সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। তাঁর নেতৃত্বেই দেশটি অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশদের কবল থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে। রক্তপাতহীন এই বিজয় ছিল আফ্রিকার ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত।
স্বাধীনতার কয়েক বছর পর ১৯৬৪ সালে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র জানজিবারের সঙ্গে ট্যাঙ্গানিকা একীভূত হয়ে বর্তমানের ‘তানজানিয়া’ (Tanzania) গঠন করে। নামটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে দুই অংশের মিলন—‘Tan’(Tanganyika) ও ‘Zan’ (Zanzibar)। ৯ ডিসেম্বরের এই দিনে দারুসসালামের জাতীয় স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজ, ঐতিহ্যবাহী নাচ আর গানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো জাতি।
তানজানিয়ার পতাকার সবুজ রং দেশটির উর্বরতা শক্তি, সোনালি রং খনিজ সম্পদ, কালো রং আফ্রিকান জনগণ আর নীল রং ভারত মহাসাগরের প্রতীক। তবে সবচেয়ে বড় প্রতীক হলো তাদের ‘উহুরু টর্চ’ বা স্বাধীনতার মশাল। ১৯৬১ সালে কিলিমাঞ্জারো পর্বতের চূড়ায় এই মশাল জ্বালিয়ে জুলিয়াস নায়াররে বলেছিলেন, ‘আমরা এই মশাল জ্বালালাম, যাতে এটি সীমানার বাইরেও আলো ছড়ায় এবং যেখানেই হতাশা আছে সেখানে আশা জাগায়।’
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তানজানিয়া ছিল সেই গুটিকয়েক দেশের একটি, যারা আমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছিল। নায়াররের সরকার ১৯৭১ সালেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। তাই ৯ ডিসেম্বর তানজানিয়ার বিজয় দিবস আমাদের কাছেও বিশেষ এক আবেগের নাম। তাদের স্বাধীনতাসংগ্রাম আমাদের শেখায়, ঐক্য আর অহিংস পথেও শোষণমুক্তির বিজয় অর্জন করা সম্ভব।