ক্রেডিট কার্ড ছাড়াই কিস্তিতে স্মার্টফোন কেনা যাবে, কী কী শর্ত
ক্রেডিট কার্ড ছাড়াই কিস্তিতে স্মার্টফোন কিনতে পারবেন গ্রাহকেরা। গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক এই সুবিধা চালু করেছে।
মোট মূল্যের মাত্র ১৫ শতাংশ জমা (ডাউন পেমেন্ট) দিয়ে স্মার্টফোন কেনা যাবে। বাকি টাকা সর্বোচ্চ ৯ মাসের কিস্তিতে মোবাইলের আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে।
উভয় মোবাইল অপারেটর ‘ফোন লক’ পদ্ধতিতে স্মার্টফোন বিক্রি করবে। গ্রামীণফোন জানিয়েছে, কিস্তি পরিশোধের সুরক্ষার জন্য গ্রাহকের কেনা স্মার্টফোনে ‘স্মার্ট লকিং’ পদ্ধতি যুক্ত করা থাকবে। অর্থাৎ এই প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে কিস্তি পরিশোধের জন্য গ্রাহককে নিয়মিত মনে করিয়ে দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কিস্তি পরিশোধ না হলে স্মার্টফোনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘লক’ হয়ে যাবে।
গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক উভয়ে চীনের মালিকানাধীন নাইজেরিয়াভিত্তিক আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান পামপে লিমিটেডের সহযোগিতায় স্মার্টফোন কেনার এই সুবিধা চালু করেছে।
দেশের শীর্ষ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গ্রামীণফোন সেন্টারসহ নির্দিষ্ট পার্টনার আউটলেট থেকে টেকনো ও আইটেল ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন কিস্তিতে কেনা যাবে।
অন্যদিকে বাংলালিংক ১৫ মে কিস্তিতে স্মার্টফোন কেনার সুযোগ চালুর কথা জানায়। বাংলালিংকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলালিংক সেন্টার থেকে টেকনো, আইটেল ও ইনফিনিক্স ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন কিস্তিতে কেনা যাবে।
গ্রামীণফোনের চিফ প্রোডাক্ট অফিসার (সিপিও) সোলায়মান আলম বলেন, দেশে ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে আনতে তাঁরা ক্রেডিট কার্ড ছাড়াই সহজ শর্তে স্মার্টফোন কেনার এই সুবিধা চালু করেছেন।
উদ্যোগটিকে সহজ ও নিরাপদ হিসেবে বর্ণনা করেন পামপে লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জুন জেং। তিনি বলেন, বাংলাদেশের লাখো মানুষকে ডিজিটাল জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে এই উদ্যোগ।
মুঠোফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আইস্মার্টইউ টেকনোলজি বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেজওয়ানুল হক বলেন, আগে আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে যাঁরা স্মার্টফোন কিনতে পারতেন না, তাঁরা এখন সহজ কিস্তি তা কিনতে পারবেন। উদ্যোগটি তাঁদের জন্য এক নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে।
স্মার্টফোনের গ্রাহকসংখ্যা কম
সমপর্যায়ের অর্থনীতির দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে স্মার্টফোনের গ্রাহকসংখ্যা কম। এর পেছনে ক্রয়ক্ষমতার বিষয়টি রয়েছে বলে মনে করেন এই খাতের বিশেষজ্ঞরা। অর্থাৎ একসঙ্গে অন্তত ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে স্মার্টফোন কেনার সামর্থ্য অনেকের নেই।
স্মার্টফোন ব্যবহারে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার বিষয়টি মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈশ্বিক সংগঠন গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশনের (জিএসএমএ) তথ্যেও উঠে এসেছে। জিএসএমএর সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশে ৪০ শতাংশ পুরুষ ও ২৫ শতাংশ নারী স্মার্টফোন ব্যবহার করেন।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আগে থেকেই বলে আসছিলেন, দেশে স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়াতে সবার জন্য সহজ কিস্তিতে তা কেনার সুবিধা চালু করা দরকার।
এখন এই সুবিধা চালু করল গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক। এত দিন দেশে শুধু ক্রেডিট কার্ডধারী ব্যক্তিরাই কিস্তি–সুবিধায় নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় মুঠোফোন কিনতে পারছিলেন।
‘সিম লক’ পদ্ধতি চায় অপারেটররা
উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় কিস্তিতে মুঠোফোন কেনার সুবিধা আছে। সেসব দেশে মোবাইল অপারেটররা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ‘সিম লক’ রেখে কিস্তিতে মুঠোফোন বিক্রি করে। এমনকি ভারতেও এই সুবিধা আছে।
কিস্তিতে কোনো অপারেটরের কাছ থেকে মুঠোফোন কেনা হলে তা পরিশোধের আগপর্যন্ত অন্য কোনো অপারেটরের সিম ব্যবহার করা যায় না ‘সিম লক’ পদ্ধতিতে।
দেশের মোবাইল অপারেটররা দীর্ঘদিন ধরে কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রির সুবিধা চেয়ে এসেছে। তবে এ ক্ষেত্রে তারা ‘সিম লক’ পদ্ধতি চাইছিল।
‘সিম লক’ রেখে গ্রাহকের কাছে মুঠোফোন বিক্রি করা যাবে—প্রায় দুই বছর আগে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সেখানে শর্ত ছিল, মুঠোফোনের মধ্যে দুটি সিমের একটি লক রেখে বিক্রি করতে পারবে অপারেটররা। স্থানীয়ভাবে মোবাইল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে স্মার্টফোন কিনতে হবে। কিস্তির ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্ট হবে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। কিস্তি হবে ৩ থেকে ১২ মাস মেয়াদি। স্মার্টফোনের দাম পরিশোধের পর লক করা সিমের স্লটটি খুলে দিতে হবে।
বিটিআরসি সূত্র জানায়, ‘সিম লক’ রেখে কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রির ব্যাপারে দুটি শর্তের বিষয়ে সম্প্রতি আলোচনা ছিল। প্রথমত, অপারেটররা নিজেরা কোনো ভর্তুকি দিতে পারবে না। কারণ, এতে বাংলালিংক, টেলিটকের মতো অপারেটর প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে। তবে ভর্তুকির সুবিধা যদি রাখতেও হয়, সে ক্ষেত্রে তা ১০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, এ সুবিধা শুধু দেশে উৎপাদিত স্মার্টফোনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। উচ্চমূল্যের স্মার্টফোনে তা দেওয়া যাবে না।
তবে সূত্র জানায়, বিটিআরসি ‘ফোন লক’ পদ্ধতির মাধ্যমে কিস্তি–সুবিধার পক্ষে মত দেয়।
গত ২ এপ্রিল প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘দেশে সবার জন্য কিস্তিতে মুঠোফোন কেনার সুবিধা নেই’ শীর্ষক প্রতিবেদনে অপারেটরদের বরাতে বলা হয়েছিল, একটি সিম উন্মুক্ত রেখে মুঠোফোন বিক্রি করলে অপারেটরের জন্য তা সুবিধাজনক নয়। কারণ, একটি সিম উন্মুক্ত থাকলে গ্রাহক তখন পছন্দের অপারেটরই ব্যবহার করবেন।
অপারেটরদের চাওয়া, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দুটি সিম লক রেখেই মুঠোফোন বিক্রির সুবিধা চালু করা। আবার সিম লক রেখে মুঠোফোন বিক্রির ক্ষেত্রে ছোট অপারেটররা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাবে বলেও তাদের এ বিষয়ে আপত্তি আছে।
জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী রোববার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ানো, অবৈধ স্মার্টফোনের আমদানি বন্ধসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। সে হিসেবে অপারেটর ও স্থানীয় মোবাইল ফোন উৎপাদকদের বলা হয়েছে, ফোন লক রেখে স্মার্টফোন বিক্রির সুবিধা বিবেচনা করতে। তবে সিম লক রেখে স্মার্টফোন বিক্রির সুবিধার সিদ্ধান্ত বিটিআরসি নেয়নি।