সময়ের মুখ

বাবা টাকা ধার করে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফি দিয়েছিলেন

চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি গ্রাম জলাহার। এই গ্রামে জন্ম নেওয়া সাঁওতাল সম্প্রদায়ের প্রভাত টুডু অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এখন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসাদুজ্জামান

প্রভাত টুডু
প্রশ্ন:

সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মধ্যে আপনি কি প্রথম সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী?

প্রভাত টুডু: হ্যাঁ, আমার জানামতে আমিই প্রথম।

প্রশ্ন:

আইনজীবী হয়েছেন। এটাই কি স্বপ্ন ছিল?

প্রভাত টুডু: যখন ছোট ছিলাম, তখন লোকমুখে শুনতাম, জজ, ব্যারিস্টার, উকিলরা অধিকারহীন মানুষের জন্য কাজ করতে পারেন। সেখান থেকেই আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন।

প্রশ্ন:

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হলেন কবে?

প্রভাত টুডু: গত মাসে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আইন পেশা পরিচালনার অনুমতির পরীক্ষায় পাস করেছি।

প্রশ্ন:

এর আগে?

প্রভাত টুডু: ২০১৮ সালে বার কাউন্সিলের সনদ পাই। ওই বছরই ঢাকা জজকোর্টে আইন পেশা শুরু করি।

প্রশ্ন:

পড়াশোনা করেছেন কোথায়?

প্রভাত টুডু: ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) পাস করে মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছি। এরপর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) থেকে ২০১৪ সালে এলএলবি পাস করি। আর ২০১৬ সালে এলএলএম ডিগ্রি নিই।

প্রশ্ন:

তারপরই কি জজ আদালতে আইন পেশা শুরু করলেন?

প্রভাত টুডু: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন ট্যাক্সেস বারের সদস্য হয়েছিলাম। ২০১৭ সালে।

প্রশ্ন:

মাধ্যমিক পাসের পর দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন। সেটা কীভাবে?

প্রভাত টুডু: চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় আসার পথে নাটোরে সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ি। মাইক্রোবাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ভাগ্যক্রমে সেদিন আমি বেঁচে যাই। তবে ডান হাত ভেঙে যায়। মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পাই। এমন অবস্থায় তিন বছর আমি লেখাপড়া করতে পারিনি। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে আবার আমি লেখাপড়া শুরু করি।

প্রশ্ন:

পরিবারে কে কে আছেন?

প্রভাত টুডু: আমরা সাত ভাই-বোন। মা–বাবা রয়েছেন। আমি স্ত্রী ও একটি সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকি।

প্রশ্ন:

মা–বাবার পেশা কী?

প্রভাত টুডু: আমার বাবার নাম শ্যাম টুডু। মায়ের নাম রাজোবালা মুর্মু। বাবা স্থানীয় বেসরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আমাদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন। মা গৃহিণী।

প্রশ্ন:

পরিবারের সদস্যসংখ্যা ছিল ৯। বাবার আয়ে চলত?

প্রভাত টুডু: কষ্ট হতো। মনে আছে, বাবা অন্যের কাছ থেকে টাকা ধার করে আমার মাধ্যমিক পরীক্ষার ফি দেন। চার কিলোমিটার হেঁটে প্রাইমারি স্কুলে যেতে হতো। আর প্রতিদিন ১৬ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের হরিমোহন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে যেতাম।

প্রশ্ন:

আপনার অনুপ্রেরণা কে?

প্রভাত টুডু: আমার মা–বাবা। তাঁদের অনুপ্রেরণায় কখনো লেখাপড়ায় মনোযোগ হারাইনি।

প্রশ্ন:

আপনার ভাই-বোনেরা কী করেন?

প্রভাত টুডু: সবাই পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করছেন।

প্রশ্ন:

আপনি বলছিলেন, আইনজীবী হয়ে অধিকারহীন মানুষের জন্য কাজ করবেন।

প্রভাত টুডু: এখন পর্যন্ত বিনা পয়সায় ৭০ থেকে ৮০ জনের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছি। ভবিষ্যতেও গরিব অসহায় মানুষের পক্ষে বিনা পয়সায় মামলা পরিচালনা করে যাব।