কুড়িগ্রামের চাকিরপশার নদের ইজারা স্থগিত
কুড়িগ্রামের চাকিরপশার নদের ইজারা বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করা হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সায়রাত শাখার নির্দেশে এ বন্দোবস্ত স্থগিত করা হয়। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বৃহস্পতিবার চিঠি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ১০ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের চাকিরপশার নদের জমি বিক্রি ও ইজারা বন্দোবস্ত নিয়ে প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর বৃহস্পতিবার প্রথম আলোতে এ নিয়ে সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ প্রথম আলোকে বলেন, চাকিরপশার নদ ইজারা নিয়ে স্থানীয় লোকজন আপত্তি তুলেছেন। এ ছাড়া জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সুপারিশ ও হাইকোর্টের আদেশ পর্যালোচনা করে তিনি ইজারা কার্যক্রম বন্ধের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। এখন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন।
সম্প্রতি চাকিরপশার নদকে বদ্ধ জলাশয় দেখিয়ে আগামী ১৪৩০ সনের জন্য ইজারার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ১৪২৮-১৪২৯ সনেও একদল অমৎস্যজীবীকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবির মুখে এই ইজারা বাতিল করা হয়। যদিও দখলদারদের বাধায় স্থানীয় মানুষ ও মৎস্যজীবীরা নদে নামতে পারেননি।
নদ সুরক্ষা কমিটির নেতাদের অভিযোগ, ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট চাকিরপশারকে জলমহাল হিসেবে ইজারা না দিতে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সায়রাত শাখা। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদনেও বন্দোবস্ত না দেওয়ার কথা বলা হয়।
গত মঙ্গলবার প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ দাবি করেন, তিনি সম্প্রতি কুড়িগ্রামে যোগ দিয়েছেন। চাকিরপশার নদ নিয়ে জটিলতার বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না। ইজারা বন্ধের জন্য তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন। তাঁর দাবি, সব জটিলতা কাটিয়ে চাকিরপশার নদকে দখলমুক্ত করা হবে।
চাকিরপশার নদটি মূলত তিস্তা নদীর উপনদ। এটি বুড়িতিস্তা নদীর উজানের অংশ। নদটির উৎপত্তিস্থল রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইটাকুড়ি নামক নিম্নাঞ্চল থেকে। স্থানীয় লোকজন জানান, চাকিরপশারের প্রস্থ কোথাও কোথাও ছিল প্রায় এক কিলোমিটার। ২৫-৩০ বছর আগেও এ নদের পানি গিয়ে ব্রহ্মপুত্রে পড়ত। এখন এ নদ উলিপুর উপজেলার থেতরাইয়ে তিস্তা নদীতে গিয়ে মেশে।
নদপারের বাসিন্দাদের অভিযোগ, একসময়ের খরস্রোতা চাকিরপশার নদের জমির বড় অংশটি দখল হয়ে গেছে। নদে অর্ধশত পুকুর করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা। একেকটি পুকুর ৫ থেকে ২৫ একর আয়তনের।
স্থানীয় কিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও রাজারহাটের মীর ইসমাইল হোসেন কলেজের বিরুদ্ধেও নদের জমি দখল ও পুকুর খননের অভিযোগ রয়েছে।