ভারতীয় যুবক প্রেমাকান্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানায় ‘প্রেমিকা’র বাবা

প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গত ২৪ জুলাই ভারতের তামিলনাড়ু থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন প্রেমাকান্ত
ছবি: প্রথম আলো

‘প্রেমিকা’র সঙ্গে দেখা করতে বাংলাদেশে আসা ভারতের তামিলনাড়ুর যুবক প্রেমাকান্তের (৩৬) বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বরগুনার তালতলী থানায় আবেদন করেছেন মেয়েটির বাবা। গতকাল শুক্রবার রাতে এ আবেদন করেন তিনি।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ওই তরুণীর বাড়ি বরগুনার তালতলী উপজেলায় যান প্রেমাকান্ত। তালতলীতে তিনি জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে ওঠেন। সেখানেই তিনি অবস্থান করছেন। খবর পেয়ে সেখানে স্থানীয় সাংবাদিক এবং উৎসুক লোকজন ভিড় করেন। বিকেল ৪টার দিকে তালতলী থানার দুজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রেমাকান্তর সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তারা প্রেমাকান্তকে বাংলাদেশের বিবাহ আইন অনুযায়ী তাঁর প্রেমিকার এখনো বিবাহের বয়স না হওয়ার বিষয়টি তাঁকে জানান। তাঁরা তাঁকে তালতলী উপজেলা থেকে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এ ছাড়া এখানে অবস্থান করলে তাঁর আইনগত সমস্যা হবে বলেও সতর্ক করেন।

থানায় করা অভিযোগে ওই তরুণীর বাবা বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর মেয়ের সঙ্গে তামিলনাড়ুর নাগরিক নেটওয়ার্কিং ইঞ্জিনিয়ার প্রেমাকান্তর পরিচয় হয় এবং বিভিন্ন সময় কথাবার্তা হয়। এর সূত্র ধরে গত ২৪ জুলাই বাংলাদেশের বরিশালের একটি রেস্টুরেন্টে মেয়েটি তিন বান্ধবীসহ ছেলেটির সঙ্গে দেখা করে। এরপর ২৭ জুলাই কাশিমপুর এলাকায় ছেলেটির ডাকে মেয়ে দেখা করতে গেলে তাঁকে কুপ্রস্তাব দেয় এবং ছেলেটির সঙ্গে ঢাকা যেতে বলে। মেয়েটি রাজি না হওয়ায় ছেলেটির সঙ্গে তর্ক হয়। পরে স্থানীয় লোকজন প্রেমাকান্তকে বরিশাল বিমানবন্দর থানা-পুলিশের হেফাজতে দেন। বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমলেশ চন্দ্র হালদার ভারতীয় দূতাবাস ও মেয়ের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দূতাবাস থেকে ছেলেটিকে তাঁর দেশে ফিরে যেতে বলা হলেও তিনি ফিরে যাননি।

তালতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রেমাকান্তের বিরুদ্ধে আইনি সহায়তা চেয়ে লিখিত আবেদন করেছেন মেয়েটির বাবা। এ বিষয় তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রেমাকান্তের দাবি, ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেয়েটির সঙ্গে পরিচয়। এরপর দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মেয়েটির পরিবারের সঙ্গেও তাঁর সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে।

প্রেমাকান্ত বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে অনেক আগেই তিনি এ দেশে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে আর আসা হয়নি। করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ায় তিনি মনস্থির করেন এ দেশে আসার। ২৪ জুলাই তিনি বরিশালে আসেন। ২৭ জুলাই মেয়েটির সঙ্গে শহরে ঘুরতে বের হলে আরেক যুবক দাবি করেন, তাঁর সঙ্গে মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক আছে। এরপর তিনি প্রেমাকান্তকে মারধর করেন।

মারধরের বিষয়ে প্রেমাকান্ত বরিশাল মেট্রোপলিটনের বিমানবন্দর থানায় গিয়ে ওই দিন অভিযোগ করেন। এরপর তিন দিন তাঁকে নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়। পরে বিষয়টি ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের জানায় বরিশাল বিমানবন্দর থানার পুলিশ। হাইকমিশনের কর্মকর্তারা প্রেমাকান্তের সঙ্গে কথা বলেন। ‘প্রেমিকা’ দাবি করা মেয়েটি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আইন সম্পর্কে প্রেমাকান্তকে জানান। পরে হাইকমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী ছেলেটি নিজ দায়িত্বে ভারতে চলে যাওয়ার কথা বললে ১ আগস্ট ঢাকার একটি বাসে উঠিয়ে দেয় পুলিশ। পুলিশ তাঁকে ঢাকাগামী বাসে তুলে দিলে তিনি মাঝপথে নেমে আবার বরিশালে ফিরে আসেন। সেখান থেকে গতকাল যান বরগুনার তালতলী উপজেলায়।