নির্বাচনের আগে ও পরে ভয়ে থাকে সংখ্যালঘুরা

নির্বাচন পূর্বাপর পরিস্থিতি নিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্বেগের কথা বিদেশি দূতাবাসগুলোকে জানানোর পরিকল্পনা।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ঢাকা বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি ওঠে আসে
ছবি: সংগৃহীত

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। সংগঠনটি বলছে, নির্বাচনের আগে ও পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভয়ে থাকে। নির্বাচন এলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদেরকে ‘খেলার ঘুঁটি’ বানানো হয়।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ঢাকা বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডের পাশে বিএমএ মিলনায়তনে এই সভা হয়। সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘুবিষয়ক জাতীয় কমিশন গঠন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন, সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনসহ আওয়ামী লীগ গত নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘুদের বিষয়ে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা বাস্তবায়নের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই সভা করেছে পরিষদ।

সভায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, নির্বাচনের পূর্বাপর সময়ে সংখ্যালঘুদের টার্গেট (লক্ষ্য) করে বিশেষ মহল অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় এবং করে। তাদের লক্ষ্য একটাই—দেশকে সংখ্যালঘু শূন্য করা। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে সংখ্যালঘুদের অবস্থা কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে উদ্বেগ আছে।

নির্বাচন পূর্বাপর পরিস্থিতি নিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্বেগ ও শঙ্কার কথা বিদেশি দূতাবাসগুলোকে জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, পরিষদের উদ্বেগের কথা ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগকে জানানো হয়েছে। সাম্প্রদায়িক দলগুলো ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও তা জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

রানা দাশগুপ্ত বলেন, রাজনীতি এমন এক জায়গায় চলে গেছে, যেখানে দেশের জনগণ অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের দিকে। বিষয়টি সবার জন্য সংকটের ও উদ্বেগের।

সংখ্যালঘু সংকোচননীতি অব্যাহত

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে দেওয়া সে দেশের ছয়জন কংগ্রেস সদস্যের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী অর্ধেকে নেমে আসেনি। তবে এই সরকারের আমলেও সংখ্যালঘু সংকোচননীতি অব্যাহত আছে।

রানা দাশগুপ্ত বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে কংগ্রেসের ছয়জন সদস্য একটি আবেদন পাঠিয়েছেন। তাতে প্রসঙ্গক্রমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন ও সংখ্যালঘু পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। দুঃখজনকভাবে বলা হয়েছে, এই সরকারের আমলে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর হার অর্ধেকে নেমে এসেছে। এই তথ্য ঠিক নয়। ১৯৪৭ সালে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ছিল ২৯ দশমিক ৭ ভাগ। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে ১৯-২০ ভাগে নেমে আসে। ১৯৭৫ সাল–পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু সংকোচননীতি বা সংখ্যালঘু নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়া খন্দকার মোশতাক, জিয়াউর রহমান ও এরশাদ অব্যাহতভাবে চালিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন চালানো হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরও সংখ্যালঘু সংকোচনের ধারার অবসান হয়নি।

সভায় আরও বক্তব্য দেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নিম চন্দ্র ভৌমিক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য যোসেফ সুধীন মণ্ডল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক ও সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার প্রমুখ। ঢাকা বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি চিত্ত রঞ্জন দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য অতুল চন্দ্র মণ্ডল।

কল্যাণ ফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলনের পরিপ্রেক্ষিতে ঐক্য পরিষদের বক্তব্য

গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে যুক্তরাষ্ট্রের ছয় কংগ্রেস সদস্যের দেওয়া চিঠির প্রতি সমর্থন জানায় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট। সংগঠনটি বলেছে, কংগ্রেস সদস্যদের চিঠিতে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের যে চিত্র উঠে এসেছে, বাস্তবতা তার চেয়েও ভয়াবহ।

কল্যাণ ফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা ও তাদের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্যাতনের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করায় সন্তোষ প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তিতে পরিষদ বলেছে, ‘এতে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৩ বছরের সময়কালের কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের ওপর পরিচালিত রোমহর্ষক নৃশংসতার বিবরণ উল্লেখ না করা দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক। আংশিকভাবে নয়, স্বাধীন বাংলাদেশের বিগত পাঁচ দশকের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি তুলে ধরা আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ ও কল্যাণে।’