আগামী মঙ্গলবার বেইজিংয়ে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হতে যাচ্ছে। সেখানে আলোচনায় অর্থনৈতিক বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে। বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রকল্পে চীনের ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ৩০ বছরে নেওয়ার অনুরোধ জানাবে। দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ কমাতে ও ঋণ পরিশোধ সহজ করতে এ উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ।
বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান। ২০ থেকে ২৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় চীন সফর উপলক্ষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্কে অর্থনৈতিক সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের অনেক প্রকল্পে চীনের ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্রকল্প চলমান। এ ছাড়া আরও অর্থনৈতিক আলোচনা আছে। যেমন আমরা ঋণের শর্তাবলি নিয়ে কথা বলব। এর মধ্যে সুদহার কমানো বা ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো। আলোচনার মধ্যে প্রথমে ব্যবসায়িক বিষয়গুলো আসবে। চীনের সঙ্গে আমাদের প্রধানত আমদানির সম্পর্ক এবং এগুলো আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ, আমাদের অনেক রপ্তানি সেই আমদানি পণ্যগুলোর ওপর নির্ভরশীল। কাজেই চীনের সঙ্গে আমাদের যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
সুদের হার হ্রাস ও ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রতিটি প্রকল্পে ঋণের সুদের হার এক না। আমরা সাধারণভাবে সুদের হার কমানোর অনুরোধ করব। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ১৫ থেকে ২০ বছর। আমরা ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ৩০ বছরে নিয়ে যেতে চেষ্টা করব, যাতে অর্থনীতির ওপর চাপ কম আসে ও পরিশোধ সহজ হয়। এর পাশাপাশি কমিটমেন্ট ফি (অঙ্গীকার মাশুল) যাতে পুরোপুরি তুলে দেওয়া যায়, সেই চেষ্টাও থাকবে।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘চীনের কাছে চাইব, যখন আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরও ইউরোপের মতো যেন আমাদের জন্য তিন বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা বহাল রাখে। এখনো চীন আমাদের অধিকাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে, কিন্তু উত্তরণের পরে এটা পরিবর্তন হতে পারে। তাই এটি আমাদের আলোচনার মাধ্যমে আগেই ঠিক করে নিতে হবে।’
বাংলাদেশ তিস্তা প্রকল্পে চীনের অর্থায়ন চেয়েছিল। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ নিয়ে এগোলেও ভারতের অস্বস্তির কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। এবারের সফরে এ নিয়ে আলোচনা হবে কি না, জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, সফরে নদী ব্যবস্থাপনা নিয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের করা সমঝোতা স্মারকের নবায়ন হবে। তিস্তা প্রকল্পের চেয়ে বড় কথা হলো আমাদের নদী নিয়ে যে সমোঝাতা স্মারক আছে, ওটার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আমাদের সেটা নবায়ন করার সিদ্ধান্ত আছে। সুনির্দিষ্ট প্রকল্পের বিষয়ে আরও অনেক বিস্তারিত আলোচনা লাগবে। তবে বাংলাদেশ অবশ্যই তার নিজের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেবে, এটা আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে টেকসই নদী ব্যবস্থাপনা নিয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে পাওয়ার চায়নার একটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ ওই সমঝোতা স্মারক এবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরে নবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে।
বিগত সরকারের সময়ে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা ও বাজেট সহায়তা নিয়ে বর্তমান সরকারের অবস্থানের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কোনো কিছু বাদ রাখব না, সব কিছু নিয়ে আলাপ-আলোচনা করব। সেই আলোচনা আছে ও থাকবে। যেহেতু আমাদের সমস্যা আছে আমরা বাজেট সহায়তা নিয়ে কথা বলব। দেখি, তারা কতটুকু সহায়তা দিতে পারে।’
চীনের বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগে (জিডিআই) বিগত সরকার যুক্ত হতে চায়নি। উপদেষ্টার সফরে জিডিআই–সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই কিংবা অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘কিছু জিনিস আছে যেগুলো চলমান আছে আলাপ-আলোচনা। এটা বহাল থাকবে এবং আমরা ইতিবাচকভাবে দেখব। এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখনই সমঝোতা স্মারকে যাব কি না, আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের সহায়তা চাওয়া নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা করব। আমরা চাইব, চীন আমাদের সহায়তা করুক। চীনের ওখানে যথেষ্ট প্রভাব আছে। রোহিঙ্গা সমস্যা এক দিনে সমাধানের বিষয় না। এখন যে পরিস্থিতি মিয়ানমারে সেখানে স্থিতিশীলতা না ফিরলে কিন্তু প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না, এটা মেনে নিতে হবে। তাদের জোর করে পাঠাতে পারবেন? একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, আমরা সেই পরিবেশ সৃষ্টিতে চীনের সহায়তা চাইব। আমরা চাইব রাখাইনে একটা স্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হোক।’