ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর বই ভাষাবিজ্ঞানে অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ: জাপানি গবেষক মাকোতো কিতাদা
চর্যাপদের দুই পদ রচয়িতা কাহ্নপা ও সরহপা রচিত পদগুলো এবং সেগুলোর ব্যাখ্যা–বিশ্লেষণ ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্। সেগুলো ‘লে শন্ত্ মিস্তিক দো কানহা এ দো সরহ’ শিরোনামের বই হিসেবে ১৯২৮ সালে প্যারিস থেকে প্রকাশিত হয়। এই বইটিই ভাষাবিজ্ঞানের ইতিহাসে অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। গবেষকদের জন্য এটা পিরামিডের মতো এক গবেষণাকর্ম হিসেবে বিবেচিত হয়।
এভাবে জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কাজের মূল্যায়ন করেছেন জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাকোতো কিতাদা। তিনি নেপালে সংরক্ষিত চর্যাপদ, শ্রীকৃষ্ণকীর্তনসহ বিভিন্ন ধরনের বাংলা ও নেওয়ারি পাণ্ডুলিপি বিশেষজ্ঞ। নেপালের নরেন্দ্রমুণি বজ্রাচার্যের কাছে চর্যাপদের গানের দীক্ষা ও শিক্ষা নিয়েছেন মাকোতো কিতাদা।
রোববার বিকেলে বাংলা একাডেমিতে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ স্মরণে একক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। জাপান থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে একক বক্তৃতা দেন মাকোতো কিতাদা।
মাকোতো কিতাদা বলেন, তিব্বতি ভাষা–সাহিত্য–সংস্কৃতিবিশারদ ও ধর্মের ইতিহাসবিদ পের কভার্নে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর গবেষণাপদ্ধতি অনুসরণ করে মুণিদত্তের সংস্কৃত টিকার ব্যাখ্যাসহ চর্যাপদের ইংরেজি অনুবাদ করেছেন। আজ পর্যন্ত তাঁর সেই অনুবাদকর্মটিই চর্যাপদের পূর্ণাঙ্গ ইংরেজি অনুবাদ বলে পরিগণিত হয়। চর্যাপদ ও দোহাকোষকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি দিতে তাই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর অবদান অনস্বীকার্য।
মাকোতো কিতাদা শার্ঙ্গদেবের সংগীতরত্নকরের ওপর জার্মানের মার্টিন-লুথার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন। তিনি হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের পণ্ডিত অমিত রায়ের কাছে সেতার ও সরোদে তামিল নিয়েছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত সরোদে যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করেন মাকোতো কিতাদা। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ স্মরণে একক বক্তৃতার শেষে তিনি চর্যাপদের একটি গানও পরিবেশন করেন। তিনি পুরো বক্তব্য তিনি দিয়েছেন বাংলা ভাষায়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠায় ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতো মনীষীদের মহৎ স্বপ্ন কাজ করেছে। একাডেমিও মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে নানা মাত্রায় স্মরণে রেখেছে। বাংলা একাডেমির মূল ভবনের নামকরণ করা হয়েছে তাঁর নামে। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ স্মারকগ্রন্থ ও শহীদুল্লাহ রচনাবলি, যা পাঠকসমাজে বিপুলভাবে আদৃত হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ তাঁর সারা জীবনের সাধনায় আমাদের মাঝে মাতৃভাষা বাংলার প্রতি অপরিসীম মমতার সঞ্চার করেছেন। তিনি ভাষাতাত্ত্বিক কারণে যেমন আমাদের কাছে স্মরণীয়, তেমনি বাংলা ভাষার পক্ষে লড়াইয়ের জন্যও স্মরণযোগ্য। বৈরী বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে তিনি বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়েছেন এবং আরবি ও রোমান হরফে বাংলা প্রচলনের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন।’
১৩ জুলাই ছিল ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ৫৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে এ একক বক্তৃতার আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। একাডেমির শহীদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে বক্তৃতা অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেন স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মাসাহিকো তোগওয়া। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির পরিচালক নূরুন্নাহার খানম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংস্কৃতি উপবিভাগের উপপরিচালক সাইমন জাকারিয়া।