‘অসুস্থতাজনিত ছুটির আবেদন করেছিল মেহেরুন’
মিরপুরের শহীদ আবু তালেব উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থী মেহেরুন নেছা দুই মাস আগে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের কাছে করা আবেদনে তার শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়েছিল। গতকাল বুধবার ক্লাস শুরু হওয়ার আগে সকাল ৮টা ১৩ মিনিটে স্কুলের দৈনন্দিন সমাবেশের সময় স্কুল ভবনের পঞ্চম তলার ছাদে উঠে সেখান থেকে পড়ে মারা যায় সে।
প্রধান শিক্ষকের কাছে করা ছুটির আবেদনে মেহেরুন নেছা উল্লেখ করেছিল, গত ২২ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫ দিন সে শারীরিক অসুস্থতার কারণে স্কুলে উপস্থিত থাকতে পারেনি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সে বিশ্রামে ছিল। স্কুলে অনুপস্থিত ১৫ দিন ছুটি হিসেবে মঞ্জুর করতে আবেদন জানিয়েছিল মেহেরুন।
মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের এ ব্লকে বেনারসিপল্লির রাস্তার দুই পাশে শহীদ আবু তালেব উচ্চবিদ্যালয়ের দুটি ভবন। ২ নম্বর ভবনে পড়ত মেহেরুন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক এস এম বোরহানউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিনের মতো গতকাল সকালে ক্লাস শুরু হওয়ার আগে স্কুলের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দৈনন্দিন সমাবেশে যোগ দেন। সকাল সোয়া আটটার দিকে তাঁরা একটি শব্দ শুনতে পান। শিক্ষকেরা ছুটে গিয়ে মেহেরুনকে স্কুলের সামনের অংশের রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন। সেখান থেকে তাকে দ্রুত উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই হাসপাতাল থেকে মেহেরুনকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রধান শিক্ষক বোরহানউদ্দিন বলেন, স্কুলের ছাদের চারদিকে তিন ফুটের মতো উঁচু রেলিং। সেখান থেকে পা ফসকে নিচে পড়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। স্কুল ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে গতকাল সকাল ৮টা ১৩ মিনিটে মেহেরুনকে ওপর থেকে পড়ে যেতে দেখা যায়।
স্কুলের আরেকজন শিক্ষক বলেন, অসুস্থতার কারণে ক্লাস শুরু হওয়ার আগে স্কুলের দৈনন্দিন সমাবেশে যোগ দিতে বিরত থাকার জন্যও মেহেরুন স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিল। তাই গতকাল সব শিক্ষার্থী দৈনন্দিন সমাবেশে গেলেও মেহেরুন যায়নি।
মেহেরুন পরিবারের সঙ্গে বেনারসিপল্লির পাশে মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের এ ব্লকের ২ নম্বর লেনের একটি বাড়ির চতুর্থ তলায় ভাড়া থাকত। তার বাবা গোলাম মোরশেদ বেকার। তিনি এর আগে একটি সিনেমা হলে চাকরি করতেন। দুই বোনের মধ্যে মেহেরুন ছোট। মেহেরুনের বাবা গোলাম মোরশেদ মেয়ের মৃত্যু নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, মেহেরুন স্বাভাবিক ছিল। সে কোনোরকম অসুস্থ ছিল না।
মেহেরুনের লাশের ময়নাতদন্ত করেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মমতাজ আরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেহেরুনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। ওপর থেকে পড়ে গেলে যে ধরনের আঘাত থাকার কথা, মেহেরুনের সেই ধরনের আঘাত রয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করে বের করবেন, ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা। মৃতদেহের রাসায়নিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেখান থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
এ ঘটনায় মেহেরুনের বাবা গোলাম মোরশেদ পল্লবী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্লবী থানার উপপরিদর্শক মাহফুজুর রহমান বলেন, মেহেরুন মাঝে অসুস্থ থাকার কথা তার বাবাকে জানিয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে। তারপরও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করে বলা যাবে।