তবলায় ফুলের টব, পিয়ানোয় ধুলার আস্তরণ

প্রাথমিক শিক্ষায় সংগীত আবশ্যকীয় বিষয়। অথচ নেই প্রশিক্ষিত শিক্ষক। ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে বাদ্যযন্ত্র। অনেক বিদ্যালয়ে বাদ্যযন্ত্রও নেই।

নষ্ট হয়ে যাওয়া তবলায় গাছ লাগানো হয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
প্রথম আলো

বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে তবলা পড়ে আছে। ব্যবহার না করতে করতে ভেঙে গেছে। এক শিক্ষক ভাঙা তবলাকে ফুলের টব বানিয়ে গাছ লাগিয়েছেন। গাছও বেশ বড় হয়েছে। কেউ বাজাতে পারে না বলে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে পিয়ানো। নিচে জুতা, খালি পানির বোতল, পলিথিনে মোড়ানো কাপড়সহ নানা জঞ্জাল। জীবনে কখনো গান শেখেননি, এমন শিক্ষক বেসুরো গলায় শিক্ষার্থীদের গান শেখানোর চেষ্টা করছেন। রাজধানীর দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল এমন চিত্র।

ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে একই চিত্র পাওয়া গেছে। কোনো বিদ্যালয়ে সংগীতের কোনো প্রশিক্ষিত শিক্ষক নেই। অনেক বিদ্যালয়ে বাদ্যযন্ত্রও নেই।

প্রাথমিক শিক্ষায় সংগীত আবশ্যকীয় বিষয়। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সংগীতের জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের আলাদা কোনো পাঠ্যপুস্তক নেই। তবে প্রতি ক্লাসের জন্য একটি করে শিক্ষক নির্দেশিকা দেওয়া আছে।

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত যেসব সংগীত রাখা হয়েছে, সেগুলো শিক্ষার্থীরা আত্মস্থ করতে পারলে তাদের মধ্যে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের চেতনা, মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, শ্রমের প্রতি মর্যাদা ও বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হবে। শিক্ষার্থীর ভর্তির হার বাড়বে, ঝরে পড়া কমবে।’

প্রাথমিকে মোট ১৩টি গান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষক প্রতিটি ক্লাসে সারগাম বা তাল-ছন্দ শেখাবেন। গান, সুর, ছন্দ, তাল ও অঙ্গভঙ্গি করে পরিবেশন করবেন।

তবে শিক্ষকেরা বলছেন, প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকায় সংগীতের প্রতি শিশুদের আগ্রহী করে তোলা কঠিন। বাদ্যযন্ত্র যা আছে, তা–ও শিক্ষকেরা বাজাতে পারেন না। পিয়ানোতে কিছু শিক্ষককে কেবল দুই দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বাদ্যযন্ত্র নিয়ে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের জ্ঞান হলো—কোনটি হারমোনিয়াম, কোনটি তবলা বা কোনটি পিয়ানো, সেটুকু তাঁরা চেনেন।

ছবি: প্রথম আলো

‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন ও বিকাশ’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশের সব উপজেলা বা থানা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তাঁর এলাকার নির্বাচিত ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হারমোনিয়াম, ডুগি ও তবলা কেনার নির্দেশনাসহ আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বলা হয়, এসব বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার, যত্ন ও যথাযথ সংরক্ষণে অবহেলা বা ক্ষয়ক্ষতি হলে তার দায় উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিতে হবে। কিন্তু বর্তমানে কয়টি বিদ্যালয়ে কয়টি বাদ্যযন্ত্র আছে বা কয়টি ব্যবহারের উপযোগী, তার কোনো হিসাব তাঁদের কাছে নেই।

রাজধানীর একাধিক থানা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, অনেক আগের বাদ্যযন্ত্রের হিসাব রাখা তাঁদের পক্ষে কঠিন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে খোঁজ নিলে একেক কর্মকর্তা একেক বিভাগের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

শিক্ষক নির্দেশিকায় যা আছে

শিক্ষার্থীদের সংগীত বিষয়ে কোনো পরীক্ষা দিতে হয় না। তবে বছর শেষে শিক্ষকেরা তাদের মূল্যায়ন করেন। শিক্ষক নির্দেশিকায় বলা হয়, ‘শিক্ষক সুরে গাইবেন, শিক্ষার্থীরা তাঁর সঙ্গে গাইবে। যে শিক্ষার্থী সুরে গাইতে পারবে না, শিক্ষক তাকে চিহ্নিত করবেন।’
নির্দেশিকায় কোন শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের কোন গান শেখানো হবে, তার তালিকা দেওয়া আছে। সংগীতের সা-ষড়জ বা খরজ, রে-ঋষভ বা রেখাব, গা-গান্ধার, মা-মধ্যম, পা-পঞ্চম, ধা-ধৈবত, নি-নিষাদ বা নিখাদ, কাহারবা তাল, দাদরা তাল, একতাল, ত্রিতাল বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে।

শিক্ষকেরা বলছেন, তাঁদের সংগীত সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। গলায় সুর নেই। তাঁরা সংগীতের এসব জটিল বিষয় কীভাবে বুঝবেন?

এই শিক্ষক নির্দেশিকার লেখক ও সম্পাদকদের মধ্যে কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌসী রহমানেরও নাম রয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বহু বছর আগে এ নির্দেশিকা প্রণয়নের সময় আমি বিষয়ভিত্তিক দক্ষ শিক্ষকের কথা তুলেছিলাম। কেননা, নির্দেশিকায় থাকা আর ক্লাসে শিক্ষার্থীদের শেখানোর মধ্যে অনেক তফাত। শুধু থিওরি দিয়ে তো লাভ নেই।’

ছবি: প্রথম আলো

তবলায় গাছ, পিয়ানো বেহাল

২০১১ সালে কোরিয়ার পিয়ানো প্রস্তুতকারী বুইয়ং কোম্পানি বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য পাঁচ হাজার পিয়ানো অনুদান দিয়েছিল। কিন্তু শিক্ষকেরা এসব পিয়ানো বাজাতে পারেন না। একাধিক শিক্ষক বলেন, পিয়ানো স্কুলের জায়গা দখল করে আছে। কোনো কাজে আসছে না বলে নষ্ট হচ্ছে। একই অবস্থা সরকারের দেওয়া হারমোনিয়াম ও তবলার।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ইসলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুন নাহার বললেন, ‘ব্যবহার না করতে করতে তবলার সব নষ্ট হয়ে গেছে, শুধু নিচের কাঠটা ছিল। তাই এতে ফুল গাছ লাগিয়েছি।’

কামরুন নাহার বলেন, তিনি কখনো গান শেখেননি। বহু বছর আগে পিয়ানো নিয়ে তিনি দুই দিনের প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন। প্রশিক্ষক বাদ্যযন্ত্রটির বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সম্পর্কে জানিয়েছেন। পায়ের ওপর চাপ দিয়ে, হাত দিয়ে কীভাবে ধরতে হয়, তা দেখিয়েছেন। এতেই দুই দিন শেষ। দুই দিনে কি আর শেখা যায়?

পিয়ানোর নিচে আবর্জনার স্তূপ
ছবি: মানসুরা হোসাইন

ক্লাস শুরুর আগে সমাবেশের সময় পিয়ানোতে রেকর্ড করে রাখা গান ছেড়ে দিলে বাচ্চারা তার সঙ্গে সুর মেলায়। আর মুঠোফোনে ইউটিউবে গান ছাড়লে বাচ্চারা একটু মজা পায়।

তেজগাঁওয়ের বি কে আফতাব মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তবলা নষ্ট। কাপড়ে ঢাকা পিয়ানোর ওপর ধুলার আস্তরণ, পুরোনো জুতা, পানির বোতলসহ নানা জঞ্জাল পড়ে আছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্কুল অব হারমোনির প্রিন্সিপাল ও প্রধান সমন্বয়কারী প্রকৌশলী অগাস্টিন অঞ্জন ব্যাপারী প্রথম আলোকে বলেন, কোরিয়ার দেওয়া পিয়ানোগুলো একেকটির দাম লাখ টাকার মতো ছিল। যিনি গান সম্পর্কে কিছুটা জানেন, এই ডিজিটাল পিয়ানো বাজানো শিখতে তাঁর অন্তত তিন মাসের প্রশিক্ষণ দরকার। এক বা দুই দিনের প্রশিক্ষণে এটি শেখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

কোনো বাদ্যযন্ত্র নেই

কুষ্টিয়ায় ৬ নম্বর পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৪০ শিক্ষার্থী আছে, তবে শিক্ষক মাত্র ৫ জন। স্কুলে কোনো বাদ্যযন্ত্রই নেই। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক হোসনে আরা জামান ২০১৮ সালে কয়েক দিনের জন্য সংগীতচর্চার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। সেখানে ১৩টি গান শেখানো হয়েছিল। মঈন উদ্দীন আবদুল বাতেন নামের আরেক শিক্ষক ২০২০ সালে একইভাবে প্রশিক্ষণ নেন। তাঁদের কেউই আগে কখনো গান শেখেননি বা বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কেও তাঁদের কোনো ধারণা নেই।

আবদুল বাতেন বলেন, ‘প্রশিক্ষণে ১৩টি গান শেখানো হয়েছে। আমার তো গানের কোনো তালিম নেই। বাচ্চাদের কীভাবে শেখাব?’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আখতার বানু বলেন, তাঁদের বাদ্যযন্ত্র কেনার কোনো তহবিল নেই। তাই কেনা হয়নি।

সিলেটের লামাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্পিকারে মুঠোফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গান শেখানো হয়। সপ্তাহে এক দিন এভাবেই সংগীতের ক্লাসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সুর মেলান। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলল, তারা যে যার মতো গান করে। এ নিয়ে শিক্ষকেরা তাদের কিছু বলেন না।

দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মা নাজমিন বেগম বলেন, তিনি সন্তানকে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান শেখাতে একজন শিক্ষক রেখেছেন। স্কুলে গান শেখার কোনো সুযোগ নেই।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমানারা বেগম বলেন, ২০১৩ সালের দিকে বিদ্যালয়ে একটি বহনযোগ্য স্পিকার বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেটি দিয়েই সংগীতের ক্লাস নেওয়া হয়। কোনো বাদ্যযন্ত্র দেওয়া হয়নি। যে শিক্ষক সংগীতের প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন, তিনিও দুই বছর হলো অবসরে গেছেন।

গান জানেন এমন কেউ থাকলে সোনায় সোহাগা

আগেই গান শিখেছেন, এমন কেউ শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চিন্তামুক্ত থাকে। তেজগাঁওয়ের বি কে আফতাব মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসমত আরা সুলতানা ছাত্রজীবনেই ব্যক্তিগতভাবে গান শিখেছিলেন। সম্প্রতি বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, ইসমত আরা হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাইছেন, আর শিক্ষার্থীরা তাঁর সঙ্গে দুলে দুলে গাইছে।

তবে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যদি মাত্র একজন শিক্ষক থাকেন, তাঁর অবস্থা কেমন হতে পারে? চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী বদ্ধ গেড়ামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছিল একজন শিক্ষক দিয়ে। প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর আগস্টে একজন শিক্ষককে সাময়িকভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আবু হাসান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাচ্চাদের অন্যান্য ক্লাসই নিতে পারি না, সংগীতের ক্লাস কখন নেব? নিজে কখনো গান শিখিনি। কোনো প্রশিক্ষণও পাইনি। নেটওয়ার্ক থাকে না বলে মুঠোফোনে ইউটিউব বা অন্য কোনোভাবেও শিক্ষার্থীদের সংগীতের ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না।

শিক্ষার্থী মিথিলাই ভরসা

২০১১ সালে জামালপুর শহরের বানিয়া বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হারমোনিয়াম ও তবলা দেওয়া হয়। তবে কখনো এসব বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার হয়নি।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিথিলা ভালো গান গায়। মিথিলা বলল, শিক্ষকেরা ক্লাসে এসে শিক্ষার্থীদের কাছে গান শুনতে চান। সেসহ আরও কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গান শোনায়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম সরোয়ার জাহান প্রথম আলোকে বলেন, বড় কোনো অনুষ্ঠান থাকলে বাদ্যযন্ত্র বাজাতে লোক ভাড়া করে আনতে হয়।

প্রশিক্ষকেরা কতটা দক্ষ

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় মাঠপর্যায়ে শিক্ষকদের দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের জন্য ৬৭টি পিটিআই (প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট), ৫০৫টি উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিস এবং শিক্ষকদের স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণের জন্য ৪৮২টি উপজেলা/থানা রিসোর্স সেন্টার আছে। দেশে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৬২০টি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৯-২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণে সংগীত বিষয়ে (ছয় দিন) ২৩ হাজার ৯২৮ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

তবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও পিটিআইয়ের ইনস্ট্রাক্টরেরাই প্রশিক্ষণের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা বলছেন, গানের যিনি প্রশিক্ষক, দেখা যায় তাঁরও সংগীতে দখল নেই।

সংগীতসহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রশিক্ষণ পেলে শিক্ষকদের মর্যাদা বাড়ে, বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বিদেশ যাওয়া সহজ হয়। আর প্রশিক্ষণে অংশ নিলে কিছু আর্থিক সুবিধাও পাওয়া যায়। সে জন্য এসব প্রশিক্ষণে প্রধান শিক্ষকের পছন্দের শিক্ষকেরা বারবার সুযোগ পান।

শিক্ষকেরাই অভিযোগ করলেন, সংগীত, চারুকলা ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষকদের যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, তাতে অর্থের ও সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু হচ্ছে না।

কিশোরগঞ্জ পিটিআইয়ের চারুকলার ইনস্ট্রাক্টর মাহজাবিন মৌ প্রথম আলোকে বলেন, গান, চারুকলা, শারীরিক শিক্ষা—এ ধরনের বিষয়ে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষক থাকা খুব জরুরি। চলতি বছরের মার্চে পিটিআইয়ে বিজ্ঞান, চারুকলা ও কৃষি (নন ক্যাডার) বিষয়ে ইনস্ট্রাক্টর পদে যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তখন মাহজাবিন নিয়োগ পান।

সংগীতে শিক্ষক নিয়োগ

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে সম্মতি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তারা গত ৮ মে সম্মতি জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে একটি চিঠি দিয়েছে। এতে বলা হয়, সংগীতে ২ হাজার ৫৮৩ জন শিক্ষক নিয়োগ পাবেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) মো. মুহিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সংগীতসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগে পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। নানা প্রক্রিয়া শেষে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। এতে সময় লাগবে।

মুহিবুর রহমান বলেন, ‘করোনার ধকলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অনেক খারাপ অবস্থা হয়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা নিজের নামও লিখতে পারে না। বাক্য পড়তে পারে না। আগে ওদের যোগ–বিয়োগ শেখাতে পারব কি না দেখি।’

তবলা, হারমোনিয়াম, পিয়ানো নষ্ট হওয়ার বিষয়ে মুহিবুর রহমান বলেন, করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের গান বা এ ধরনের বিষয়ে এখন তেমন গুরুত্ব দেওয়া যাচ্ছে না। স্কুলগুলোতে ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যবহার করেন না বলে নষ্ট হচ্ছে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন তৌহিদী হাসান, কুষ্টিয়া, আবদুল আজিজ, জামালপুর ও মানাউবী সিংহ, সিলেট]