সেবায় মনোযোগ কম, রাজউক যেন এখন ‘ভাঙাভাঙি’র প্রতিষ্ঠান
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) মূলত ঢাকা শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার উন্নয়ন ও পরিকল্পনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা। কিন্তু বাস্তবে এ সংস্থা এখন সাধারণ নাগরিকের কাছে পরিচিত সেবা না পাওয়া, হয়রানি আর ঘুষ–বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে। এটি এখন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার প্রতীক হয়েও দাঁড়িয়েছে। রাজউকের কার্যক্রমে সেবার চেয়ে অভিযানের প্রতি আগ্রহ বেশি বলেই মনে করছেন নগর–পরিকল্পনাবিদ ও সেবাগ্রহীতারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজউক যেন এখন ‘ভাঙাভাঙি’র প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাঁরা বলছেন, রাজউকের কাজ হওয়া উচিত শহরের উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন, ভবন নির্মাণের অনুমোদন, নাগরিক সুবিধার নিশ্চয়তা এবং নিয়ম লঙ্ঘন প্রতিরোধ করা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, একদিকে যথাসময়ে সেবা মেলে না, অন্যদিকে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে ভবন ভাঙা বা দখল উচ্ছেদকেই বড় কাজ হিসেবে দেখানো হয়।
রাজউক একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলেও এর সেবামূলক কয়েকটি বড় দায়িত্ব রয়েছে। মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত সেবামূলক কাজের মধ্যে রাজউক ভবনের নকশা অনুমোদন, জমির ব্যবহার পরিবর্তনের অনুমোদন, প্লটের মালিকানা হস্তান্তর ও নামজারি, ভবন বা স্থাপনার উচ্চতা–সংক্রান্ত ছাড়পত্র, আবাসন প্রকল্প পরিচালনা ও প্লট বরাদ্দ, ইমারত নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর ব্যবহার অনুমোদন, জমি ও ভবনের তথ্য প্রদান, নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও হালনাগাদ, ভবন নির্মাণ তদারকি ও পরিদর্শনের কাজগুলো করে থাকে। এসব কাজের মাধ্যমে রাজধানীর নিয়ন্ত্রিত, পরিকল্পিত ও নাগরিকবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা এই কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য হলেও বাস্তবে এই সেবাগুলোর অনেকটাই জটিলতা, দালালচক্র ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে নাগরিকদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজউকের সেবা নিয়ে গবেষণা করছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ওই গবেষণায় বলা হয়েছিল, এই সংস্থা ঢাকার উন্নয়নের মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হওয়ার পাশাপাশি দুর্নীতির প্রতীকেও পরিণত হয়েছে। পাঁচ বছর আগে প্রকাশিত ওই গবেষণায় আরও বলা হয়, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, অংশগ্রহণ ও দায়িত্বের অপব্যবহার—এসবের কারণে রাজউকের সার্বিক প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা ঢাকার উন্নয়নকেও বাধাগ্রস্ত করছে।
পাঁচ বছর পর এসেও রাজউকের ওই অবস্থার তেমন কোনো একটা পরিবর্তন হয়নি বলে মনে করছেন নগর–পরিকল্পনাবিদ ও সেবাপ্রার্থীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান ও রিজওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক ও নগর–পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান প্রথম আলোকে বলেন, গত পাঁচ বছরেও রাজউকে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার হয়নি, বরং অনিয়মের মাত্রা বেড়েছে। সেবাপ্রত্যাশীরা আজও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দুর্নীতির পাশাপাশি স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার অভাবেই এ অবস্থা চলছে।
পরিকল্পনা আছে, বাস্তবায়ন নেই
রাজউকের অন্যতম বড় কাজ হলো রাজধানীর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বাস্তবায়ন করা। এই পরিকল্পনায় নির্ধারিত হয়েছে কোন এলাকায় কত তলা ভবন হবে, কোথায় খোলা জায়গা থাকবে, রাস্তাঘাট, নালা-নর্দমা কেমন হবে ইত্যাদি।
রাজউক সূত্র বলছে, ২০২২ সালে ড্যাপ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল রাজধানীকে পরিকল্পিত, বাসযোগ্য ও নাগরিকবান্ধব শহরে রূপান্তর করা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পরিকল্পনা পাস হওয়ার তিন বছর পরও এর বাস্তবায়ন দৃশ্যমান নয়। উল্টো একবার সংশোধনের পর আবারও সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ড্যাপ তৈরি ও পর্যালোচনায় কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে বিশেষজ্ঞ, নগর–পরিকল্পনাবিদ, সরকারি সংস্থা ও বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নিয়েই পরিকল্পনাটি প্রণয়ন করা হয়েছিল। অথচ বাস্তবায়নে কার্যকর কোনো অগ্রগতি নেই। এখনো এলোমেলোভাবে ভবন নির্মিত হচ্ছে, জলাবদ্ধতা, যানজট, খোলা জায়গার সংকট—সব আগের মতোই রয়ে গেছে।
পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা, রাজনৈতিক চাপ, প্রভাবশালীদের স্বার্থ ও প্রশাসনিক অদক্ষতা এর মূল কারণ। ড্যাপ বাস্তবায়ন না হলে ঢাকার সমস্যা শুধু বাড়তেই থাকবে। তাই পরিকল্পনা সংশোধনের নামে সময় নষ্ট না করে কার্যকর বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
বিল্ডিং ফর ফিউচার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারভীরুল হক অবশ্য মনে করেন, ভবনের উচ্চতা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার কারণে ড্যাপ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ নিয়ে স্থপতি ও নগর–পরিকল্পনাবিদদের মধ্যে তর্কবিতর্ক চলছে। নির্বাচিত সরকার না এলে ড্যাপ বাস্তবায়নের কাজ সেই অর্থে শুরু হবে না বলেও মনে করেন তিনি।
ঘুষ ছাড়া ফাইল এগোয় না
ঘুষ ছাড়া ফাইল এগোয় না—রাজউকে অলিখিত নিয়ম অনেকটা এমনই। নির্ধারিত নিয়ম ও কাগজপত্র ঠিক থাকলেও প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করে ঘুষ আদায়ের চেষ্টা চলে বলে অভিযোগ বহু পুরোনো। সংস্থাটি দেশের নগর-পরিকল্পনা ও ভবন নির্মাণ অনুমোদনের প্রধান সংস্থা হলেও সাধারণ নাগরিকের অভিজ্ঞতা প্রায়ই হতাশাজনক।
ঘুষ দিয়ে ভবনের নকশা নিয়মিতই অনুমোদন নেন, এমন একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ভবন অনুমোদন ও ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্রের পুরো বিষয়টি অনলাইনে হলেও বাস্তবে টাকা না দিলে এই ফাইল বছরের পর বছর পড়ে থাকে। অনলাইনে আবেদন জমা দেওয়ার পর রাজউক থেকেই কল করে উৎকোচ দিতে বলা হয়।
একটি ভবনের নকশা অনুমোদন পেতে কত টাকা ঘুষ দিতে হয়, তারও একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন ওই ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, কোন এলাকায় ভবন, জমির পরিমাণ কতটুকু, প্লটের সামনে রাস্তা কতটুকু চওড়া—এসব বিবেচনায় রেখেই ঘুষ নির্ধারণ করা হয়। পাঁচ থেকে ছয় কাঠা জমিতে ভবন নির্মাণ করলে তিনি রাজউকের সংশ্লিষ্ট শাখায় ছয়–সাত লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে থাকেন। আবার জমির পরিমাণ যদি দেড় থেকে দুই কাঠা হয়, তাহলে তিন লাখ টাকার মতো দিতে হয়। আর বড় প্রকল্প হলে ঘুষ দিতে হয় ৫০ লাখ, ক্ষেত্রবিশেষে কোটি টাকা। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তনের আশা করলেও রাজউকে ঘুষ–বাণিজ্য আরও বেড়েছে বলে জানান তিনি।
কেবল ভবন অনুমোদনের ক্ষেত্রেই নয়, প্রায় প্রতিটি পদে পদে রাজউকে ঘুষ দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। যেমন পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে কেউ যদি প্লট হস্তান্তর বা বিক্রি করতে চান, সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সেবাপ্রার্থীকে ঘুষ দিতে হয়। গত বৃহস্পতিবার পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের দপ্তরের সামনে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করেছেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। সেখানে আসা সেবাপ্রত্যাশীদের কত টাকা ঘুষ দিতে হয়, তা সুনির্দিষ্টভাবে না বললেও ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
সেবা পেতে নাগরিকদের ভোগান্তি, ঘুষ–বাণিজ্য ও নানা অব্যবস্থাপনা বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো। এ জন্য গত বৃহস্পতিবার তাঁর দপ্তরে গিয়ে জানা যায়, তিনি মন্ত্রণালয়ে একটি সভায় অংশ নিয়েছেন। পরে তাঁর মুঠোফোন নম্বরে কল করলে তিনি ফোন ধরেননি। প্রশ্ন লিখে খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো জবাব দেননি তিনি।
সেবার চেয়ে অভিযানেই আগ্রহ
রাজউকের উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ শাখা সূত্র বলছে, গত এক বছরে সংস্থাটি চার শতাধিক উচ্ছেদ অভিযান বা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। এসব অভিযানের মাধ্যমে অবৈধ ভবন ভাঙা, স্থাপনা অপসারণ ও জরিমানা আদায় করলেও সেবা কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়নি।
অনেকের মতে, রাজউক যেন এখন ‘ভাঙাভাঙি’র প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভবন নির্মাণের পর ব্যত্যয় খুঁজে ওই স্থাপনা ভাঙতে রাজউক যতটা তৎপরতা দেখায়, নির্মাণের সময় ওই স্থাপনা ঠিকভাবে তৈরি হচ্ছে কি না, সেটা আর ঠিকমতো তদারক করে না।
রাজউকে বিভিন্ন শাখায় সেবা নিতে আসা অন্তত সাত ব্যক্তির সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার কথা বলেছে প্রথম আলো। এর মধ্যে এইচ এম আসাদ নামের এক সেবাপ্রত্যাশী ওই দিন দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে তাঁর ভাতিজি একটি প্লটের বরাদ্দ পেয়েছিলেন। ওই প্লটের ফাইল রাজউক থেকে গায়েব হয়ে যাওয়ার পর ১০ বছর ধরে তিনি সংশ্লিষ্ট শাখায় দৌড়াদৌড়ি করছেন। সম্প্রতি রাজউকের বর্তমান চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়ে তিনি এর একটা বিহিত করতে পেরেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সেবাদানকারী সংস্থা হিসেবে রাজউকের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত নাগরিকের স্বার্থ, কিন্তু তারা মূলত ‘দেখানোর মতো’ অভিযানেই বেশি সক্রিয়। এতে ভোগান্তি বাড়ছে, কমছে মানুষের আস্থা। যেমন ২০২৩ সালের জুনে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায় শত বছরের পুরোনো ডিআইটি পুকুর উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছিল রাজউক। পরে তদারকি না করার কারণে আবারও পুকুরটির চারপাশ দখল করে নানা স্থাপনা তৈরি হয়ে গেছে। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার আবার সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। তবে সব কটি স্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারেনি সংস্থাটি।
ঢাকার একটি আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের আইন কর্মকর্তা ইফসিতা সাদিক প্রথম আলোকে বলেন, রাজউককে বিভিন্ন ভবন নির্মাণের পর খবরদারি করতে দেখা যায়। একটি ১৫ থেকে ২০ তলা ভবন হয়ে যাওয়ার পর রাজউক সেখানে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করে। এতে ভবন নির্মাণের ব্যয়ের পাশাপাশি এর নান্দনিকতাও নষ্ট হয়ে যায়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রাজউকের সমন্বয়হীনতার কারণে আইনের পাশ কাটিয়ে ভবন নির্মাণ অনেকেই করেন। এতে ওই ভবন ধসে পড়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।
জনবলসংকট, সমন্বয়ের অভাব
রাজউকের কাঠামোতে জনবলসংকট দীর্ঘদিনের। সংস্থাটির প্রশাসন শাখার তথ্য বলছে, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো অনুযায়ী তাদের জনবল থাকার কথা ১ হাজার ৯৮০ জন। বর্তমানে জনবল আছে প্রায় সাড়ে ১ হাজার ৩০০। তথা অনুমোদিত মোট পদের প্রায় ৩১ শতাংশ শূন্য। বিশেষ করে প্রকৌশলী, স্থপতি ও নগর–পরিকল্পনাবিদ পদে লোকবলের অভাব প্রকট। এতে নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে, ফাইল নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে।
এ ছাড়া ঢাকা শহরের উন্নয়ন কার্যক্রম রাজউক ছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, ডেসকো, তিতাস, এলজিইডি, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ একাধিক সংস্থার আওতায় পড়ে। কিন্তু এসব সংস্থার মধ্যে নেই কার্যকর সমন্বয়। ফলে এক সংস্থা রাস্তা খুঁড়ে কাজ করে, আরেক সংস্থা তা জানেই না। এতে উন্নয়নকাজে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, সময় ও অর্থ অপচয় বাড়ে।
পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, জনবল বৃদ্ধি ও আন্তসংস্থাগত সমন্বয় ছাড়া রাজউকের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। শুধু কাগজে পরিকল্পনা থাকলে নগরের সমস্যার সমাধান হবে না। আবাসনশিল্প–সংশ্লিষ্ট গবেষক সানজিদ রশীদ প্রথম আলাকে বলেন, রাজউকের দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর কারণে দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। রাজউক ভবন, অঞ্চল অফিসসহ সব বিভাগের কাজে দক্ষতা আনা প্রয়োজন।
সেবা দেওয়ার মানসিকতায় বড় পরিবর্তন আনতে হবে
বিশেষজ্ঞ ও সেবাগ্রহীতারা মনে করেন, রাজউকের কাজের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়ানো, জনবল নিয়োগে গতি আনা, সেবার মানোন্নয়ন ও দালাল নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মনোযোগ দেওয়া দরকার।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক মো. আকতার মাহমুদ বলেন, রাজউকের মূল কাজ তিনটি। সেগুলো হচ্ছে পরিকল্পনা করা, নকশা অনুমোদন দেওয়া এবং উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের কাজ করা। এর মধ্যে পরিকল্পনার কাজে জনভোগান্তি নেই। উন্নয়ন-নিয়ন্ত্রণে ও ভবনের নকশা অনুমোদনের কাজে ভোগান্তি বেশি। নকশা অনুমোদনের কাজটি অনলাইনে করে বস্তুত অর্থে স্বচ্ছতা দেখানো হলেও এ কাজে ঘুষ–বাণিজ্য কমেনি। ভোগান্তিও কমেনি। উন্নয়ন-নিয়ন্ত্রণ শাখায় সেবা পেতে নাগরিকদের নানা হয়রানিতে পড়তে হয়। সংস্থাটি ঠিকভাবে চলছে কি না, সেবা পেতে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে কি না—এসব বিষয়ের দেখভাল করা প্রয়োজনীয়। এটি মন্ত্রণালয় করতে পারে। তা না হলে অন্য কোনো উপায় বের করা উচিত।
আকতার মাহমুদ বলেন, রাজউক যদি নাগরিকের কাছে বিশ্বস্ত, দক্ষ ও আধুনিক একটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হতে চায়, তাহলে সেবা দেওয়ার মানসিকতা, দক্ষতা ও স্বচ্ছতা—তিনটি দিকেই বড় পরিবর্তন আনতে হবে।