সাড়ে ২৬ ঘণ্টা পর ট্রেন চালু, সময়সূচি কিছুটা এলোমেলো
টানা সাড়ে ২৬ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর গতকাল বুধবার ভোর থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সারা দেশে প্রায় আড়াই শ যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেনের যাত্রা বাতিল করতে হয়েছে। চালুর পর ট্রেনের সময়সূচি কিছুটা এলোমেলো হয়ে পড়েছে।
মাইলেজের (দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে মূল বেতন হিসেবে বাড়তি অর্থ ভাতা) ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক দেওয়া এবং নিয়োগপত্রের দুই শর্ত প্রত্যাহারের দাবিতে গত সোমবার মধ্যরাত থেকে কর্মবিরতি পালন করেন রেলের রানিং স্টাফরা। এতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দফায় দফায় আলোচনার পর মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন আন্দোলনরত কর্মীরা। রেলের রানিং স্টাফরা হলেন ট্রেন পরিচালনায় যুক্ত পরিচালক (গার্ড), ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক ও টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, কর্মবিরতি প্রত্যাহারের পর গতকাল সকাল সাড়ে ছয়টায় ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে প্রথম ট্রেন হিসেবে ধূমকেতু এক্সপ্রেস রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এরপর বেশির ভাগ ট্রেন কিছুটা বিলম্বে ছেড়ে যায়। রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে রানিং স্টাফরা যোগ দেওয়ার পর প্রস্তুতিতে সময় পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া সকালের দিকে বেশির ভাগ ট্রেনের সূচি থাকায় কিছুটা চাপ তৈরি হয়। আজ বৃহস্পতিবার সূচি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে তাঁরা আশা করছেন।
কর্মবিরতি প্রত্যাহারের পর রেলওয়ের রানিং স্টাফদের ‘মাইলেজ সুবিধা’ বাড়ানোর সংশোধনী দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশোধনীতে দাবি পূরণ হয়েছে কি না জানতে চাইলে রানিং স্টাফ ও কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দাবির কিছুটা পূরণ হয়েছে। আনলিমিটেড মাইলেজ সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু ৭৫ শতাংশ আনুতোষিক সুবিধাটা দেওয়া হয়নি।’
রেলওয়ে সূত্র জানায়, কর্মবিরতি চলাকালে নির্ধারিত প্রায় আড়াই শ মালবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়েছে। এর মধ্যে আন্তনগর ট্রেনের সংখ্যা শতাধিক। বাকিগুলো মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন। এর বাইরে দিনে ১০টির মতো মালবাহী ট্রেন চলাচল করে থাকে। এসব ট্রেনে মূলত খাদ্যপণ্য, জ্বালানি ও কনটেইনারবাহী মালপত্র পরিবহন করা হয়। অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানিও রেলপথে পরিবহন করা হয়। কর্মবিরতির সময় সবই বন্ধ ছিল। রেলের হিসাবে, যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন থেকে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ কোটি টাকার বেশি আয় হয়। কর্মবিরতির কারণে রেল এক দিনের আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, কর্মবিরতির কারণে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত যত ট্রেন চলাচল করার কথা, সব কটিরই টিকিট ফেরত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ অগ্রিম যাঁরা টিকিট কেটেছিলেন, তাঁদের পুরো টাকা ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সকালে ট্রেন চলবে নাকি বন্ধ থাকবে—এই অনিশ্চয়তার কারণে বেশির ভাগ যাত্রী তাঁদের যাত্রা বাতিল করে টিকিট ফেরত দিয়েছেন। তবে কেউ কেউ অভিযোগ করেন, বুধবার সকালে যাত্রার টিকিট মঙ্গলবার অনলাইনে বাতিল করতে গিয়ে দেখতে পান যে বাড়তি টাকা কাটা হচ্ছে। কারণ, যাত্রার আগে টিকিট বাতিল করলে টাকা কেটে রাখার নিয়ম। অবশ্য রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রেন চালু হবে কি না, এ অনিশ্চয়তার কারণে মঙ্গলবার রাতে শতভাগ টাকা ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে টিকিট বাতিল করার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।
সূচি বিপর্যয়
সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস টেনটি ছাড়ার কথা ছিল বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে। কিন্তু সোয়া তিনটার সময়ও ট্রেনটিকে কমলাপুর স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো থাকতে দেখা গেছে। যাত্রীরা তখন ট্রেনটির ভেতরে বসা ছিলেন। নির্ধারিত সময়ের প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা পর ট্রেনটি বিকেল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যায়।
ট্রেনটির যাত্রী আশরাফুল হক বলেন, ট্রেন দেরিতে চলছে। তবে চলাচল শুরু হওয়া স্বস্তির।
গতকাল বেলা তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশনে অবস্থান করে দেখা গেছে, দুই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পাঁচটি ট্রেন ছেড়ে যায়। পাঁচটির মধ্যে চারটিই আধ ঘণ্টা থেকে সোয়া এক ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে ছাড়ে। বাকি একটি ট্রেন ছাড়ে আট মিনিট দেরিতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকালের দিকের ট্রেনগুলোও দেরিতে ছেড়েছে। এর মধ্যে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস চার ঘণ্টা দেরিতে যায়। দেরি করে ছাড়া ট্রেনের মধ্যে ছিল সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, কক্সবাজারগামী পর্যটক এক্সপ্রেস, চট্টগ্রামের মহানগর প্রভাতি, দিনাজপুরের একতা এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জের তিস্তা এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, কর্ণফুলী এক্সপ্রেস।
সকালে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ট্রেনে যাত্রী কম। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে সকালে প্রথম ট্রেন ছাড়ার কথা সকাল ছয়টায়। ঢাকামুখী চট্টলা এক্সপ্রেস ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট দেরিতে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম ছাড়ে। দেরিতে চট্টগ্রাম ছেড়েছে সিলেটের পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ও কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন।
চট্টগ্রাম স্টেশনের ব্যবস্থাপক আবু বক্কর সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, ট্রেনের চালকেরা সকাল ছয়টার পর যোগ দিয়েছেন। তাই সার্বিক প্রস্তুতি যথাসময়ে নেওয়া যায়নি। এ জন্য সকালে সূচি মেনে ট্রেন চালানো সম্ভব হয়নি।