শীর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গি ছাড়া অন্যদের ডান্ডাবেড়ি পরানো যাবে না: হাইকোর্ট

হাইকোর্ট ভবনফাইল ছবি

শীর্ষ সন্ত্রাসী, দুর্ধর্ষ অপরাধী ও জঙ্গির মতো কারাগারে আটক বিশেষ প্রকৃতির বন্দীদের আদালতে হাজির বা অন্যত্র স্থানান্তরের সময় আনা-নেওয়ার পথে ডান্ডাবেড়ি পরানোসংক্রান্ত পরিপত্র অনুসরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

কারা মহাপরিদর্শকের পক্ষে ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক পরিপত্রটি জারি করেন। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার রুলসহ এ আদেশ দেন। আদেশের আগে আদালত বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী, দুর্ধর্ষ ও জঙ্গি ছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রে এটি (ডান্ডাবেড়ি) পরানো যাবে না। আইন অনুযায়ী করতে হবে।

২০২২ সালের ২১ নভেম্বরের ওই পরিপত্রে বলা হয়, এখন থেকে কারাগারে আটক বিশেষ প্রকৃতির বন্দী, যেমন শীর্ষ সন্ত্রাসী, দুর্ধর্ষ, জঙ্গি (জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, হিযবুত তাহরির, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম, আনসার আল-ইসলাম ইত্যাদি) বন্দীদের বিজ্ঞ আদালতে হাজির বা অন্যত্র স্থানান্তরের সময় আনা-নেওয়ার পথে ডান্ডাবেড়ি পরানোসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করা হলো।

ডান্ডাবেড়ি পরানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মো. নাজমুল হোসেন মৃধা নামের ছাত্রদলের এক স্থানীয় নেতা ২৩ জানুয়ারি রিটটি করেন। প্যারোলে মুক্তি পেয়ে ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন নাজমুল। তিনি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি ১৭ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান।

আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কায়সার কামাল, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. মাকসুদ উল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ।

‘ডান্ডাবেড়ি নিয়েই মারা গেলেন কাজল’ শিরোনামে একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের অংশবিশেষ শুনানিতে তুলে ধরেন আইনজীবী কায়সার কামাল। তিনি বলেন, বিএনপির কারাবন্দী নেতা–কর্মীদের কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছেন কারাগারে বা হাসপাতালে। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাঁদের ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ডান্ডাবেড়ি নিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে, এগুলোর একটি হচ্ছে কাজল।

আদালত বলেন, ডান্ডাবেড়ির বিষয়ে ১৮৯৪ সালের প্রিজন্স অ্যাক্ট ও কারাবিধিতে উল্লেখ রয়েছে। শুধু রুল দিলেই হবে না। গাইডলাইন দিতে হবে। মানুষকে রক্ষা করতে হবে। আইন ও সালিস কেন্দ্রের করা এক মামলার রায়ের প্রসঙ্গ টেনে আদালত বলেন, নির্দেশনা অনুসারে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে অথবা বন্দীদের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা যদি মনে করেন আসামি পালিয়ে যেতে পারেন, সে ক্ষেত্রে দিতে পারেন। তখন আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, আপিল বিভাগে বিষয়টি বিচারাধীন।

শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘আমাদের কাজটা হবে রাষ্ট্রযন্ত্র এবং জনগণের মধ্যে একটা সেতুবন্ধ তৈরি করা।’ আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, পরিপত্রটি প্রতিটি কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আদালত বলেন, মিলিট্যান্ট (জঙ্গি) ১৫–১৬টি যেগুলো নিষিদ্ধ আছে, সেগুলো। আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের রেনডম ডান্ডাবেড়ি পরানো হচ্ছে। রিট আবেদনকারীর বয়স ২১ বছর। যে মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়, সেই মামলার এজাহারে তাঁর নাম ছিল না।

রুলের পাশাপাশি ডান্ডাবেড়ি পরোনো নিয়ে নির্দেশনা দেওয়ার আরজি জানান আইনজীবী কায়সার কামাল। আদালত বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী, দুর্ধর্ষ, জঙ্গি ছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রে এটি (ডান্ডাবেড়ি) পরানো যাবে না। আইন অনুযায়ী করতে হবে। ২১ নভেম্বরের পরিপত্র অনুসরণ করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হলো। রুল ও নির্দেশনা দেওয়া হলো। শুনানির জন্য ১১ মার্চ দিন নির্ধারণ করা হলো।