সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ কমছে, কিশোর গ্যাং বাড়ছে

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জাতীয় জাদুঘরে আয়োজিত জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা পরিষদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ৮ মার্চছবি: জাহিদুল করিম

সরকারের পালাবাদল হয় কিন্তু কিশোর, তরুণেরা সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ পায় না। প্রগতিশীল, সংস্কৃতি চর্চা করা তরুণের সংখ্যা কমছে। রাষ্ট্র মানবিক হচ্ছে না। বাড়ছে কিশোর গ্যাং। কিশোরেরা নিরাপত্তাহীন। খুনিরা চোখের সামনে ঘুরছে। খুনের বিচার না হলে গণতন্ত্র হবে না।

রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে আজ শুক্রবার সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন।

২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জে খুনের শিকার কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর ২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা পরিষদ আজ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ত্বকীর মতো মেধাবী কিশোর যারা সংস্কৃতির চর্চা করে, প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে থাকে, তাদের সংখ্যা কমছে। আর কিশোর গ্যাং বাড়ছে, যারা জনপ্রতিনিধিদের প্রশ্রয় পাচ্ছে। সংস্কৃতিচর্চা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু কিশোর-তরুণদের সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ দেয় না। যার বড় একটি উদাহরণ ছাত্র সংসদ নির্বাচন না করা।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কৈশোর বিপথগামী হচ্ছে। কিশোর গ্যাং তৈরি হচ্ছে। রাষ্ট্রের কোনো উদ্যোগ নেই। বাংলাদেশে কৈশোর আজ বিপর্যস্ত। তারা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ এখন প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ত্বকী হত্যার বিচার আজ না হোক, কাল বা ১০ বছর পর হলেও হবে।

অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, খুন হলে বিচার হতে হয়। আইনের শাসন না থাকলে সুশাসন হয় না। আর সুশাসন না থাকলে গণতন্ত্র হয় না। তিনি আরও বলেন, ত্বকীর হত্যাকারীরা চোখের সামনে ঘুরছে। কিন্তু সরকার নিষ্ক্রিয়।

সংস্কৃতিচর্চাহীন একটি সমাজে বসবাসের কথা উল্লেখ করে নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, এমন পরিস্থিতি হচ্ছে যে সামনে শিল্পী, ভালো শিক্ষক, ভালো চিন্তাবিদ খুঁজে পাওয়া যাবে না। রাজনীতির জগতে সংস্কৃতিচর্চা শূন্যে নেমেছে। সংস্কৃতিচর্চা রাষ্ট্রের কাছে কম গুরুত্ব পাচ্ছে। তিনি বলেন, ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়া বিচারহীনতার দৃষ্টান্ত। ক্ষমতার এত হাতবদল হলো, কিন্তু রাষ্ট্র অমানবিকই রয়ে গেল।

অতিথিদের সঙ্গে জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতায় পুরস্কারবিজয়ী শিশুরা। ঢাকা, ৮ মার্চ
ছবি: জাহিদুল করিম

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জ সংস্কৃতি, সভ্যতায় অনেক এগিয়ে ছিল, সুনাম ছিল। কিন্তু এখন এই পর্যায়ে কেন এল? সংস্কৃতি, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ছিল, যা বদলে গেছে। ত্বকীসহ শিশু-কিশোর হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে বলেন, একটা ঘটনার অন্তত একটি উপযুক্ত শাস্তি হলে বাকিরা ভয় পাবে।

ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি সভাপতির বক্তব্যে অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, সন্তানদের লড়াই করার শিক্ষা দিতে হবে। তারা যেন দেশ ছেড়ে চলে না যায়।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক শওকত আরা হোসেন, সাবেক সচিব ভুঁইয়া শফিকুল ইসলাম, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ, জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা পরিষদের আহ্বায়ক জাহিদুল হক। অনুষ্ঠানে ত্বকীর মা রওনক রেহানাসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে ত্বকী রচিত কবিতা আবৃতি করেন ভবানী শংকর রায়। আলোচনা পর্ব শেষে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।