ডিম–মুরগিতে মুনাফা করছে মধ্যস্বত্বভোগীরা: বিপিআইসিসি
বাজারে ডিম ও মুরগির দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার পেছনে চাহিদা ও জোগান ফারাক এবং সুযোগসন্ধানী মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করেছে পোলট্রিশিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠন—বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)। একই সঙ্গে এই মূল্যবৃদ্ধিতে ভোক্তাদের ভোগান্তি বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। আজ শুক্রবার বিপিআইসিসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ডিম ও মুরগির দাম বাড়ার পেছনের কারণ নিয়ে গত মঙ্গলবার বিপিআইসিসি জরুরি বৈঠকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, ৬ আগস্ট পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৩৬ টাকা। বাদামি ডিম ৯ টাকা ১০ পয়সা ও সাদা ডিম ৮ টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রি হয়েছিল। সেদিন দিবাগত রাত ১২টা থেকে জ্বালানি তেলের বর্ধিত দাম কার্যকর হয়।
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পর ৭ আগস্ট পরিবহনসংকট দেখা দেয়। এতে ঢাকাসহ জেলা ও বিভাগীয় শহরে ডিম ও মুরগির সরবরাহ কমে যায়, দাম বাড়ে। এরপর ১৩ ও ১৪ আগস্ট মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজিতে দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। পাইকারি পর্যায়ে বাদামি ডিম ১০ টাকা ৯০ পয়সা ও ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ১৭০-১৭৫ টাকায় ওঠে। এই মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ খামারিদের কোনো হাত নেই।
প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৫ আগস্ট থেকে ডিম ও মুরগির দাম কমতে শুরু করে। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রয়লার মুরগির পাইকারি দাম প্রতি কেজিতে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কমে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় এবং ১০০টি বাদামি ডিমের দাম ১৩০ টাকা কমে ৯৬০ টাকায় (প্রতিটি ৯ টাকা ৬০ পয়সা) এবং সাদা ডিম ১৪০ টাকা কমে ৯৫০ টাকায় (প্রতিটি ৯ টাকা ৫০ পয়সা) বিক্রি হয়েছে।
বিপিআইসিসি সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, বর্তমানে এক কেজি ওজনের ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে খামারির খরচ পড়ে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। আর প্রতিটি ডিমে তাঁদের ন্যূনতম খরচ ৯ টাকা ৫০ পয়সা। আন্তর্জাতিক বাজারে পোলট্রি ফিড তৈরির কাঁচামালের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার ব্যাপক দরপতন, পণ্য আমদানিতে মাত্রাতিরিক্ত জাহাজভাড়া, লোডশেডিং ইত্যাদি কারণে ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে খামারিরা লোকসান গুনলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা অনায্য মুনাফা লুটছেন।
পোলট্রি খামারিদের রক্ষায় সরকারকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার আহ্বান জানান মসিউর রহমান। তিনি বলেন, ৬ আগস্টের আগে খামারিরা কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি গড়ে ১২ থেকে ১৪ টাকা লোকসানে বিক্রি করলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভ করেছেন ২৭ থেকে ৩২ টাকা। বাজারব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীরা থাকবেই, তবে লাভের পরিমাণ যৌক্তিক হতে হবে। প্রান্তিক খামারিরা নায্যমূল্য না পেলে উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।
ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সভাপতি কাজী জাহিন হাসান বলেন, পোলট্রির সরবরাহ দুর্বল হয়ে পড়ছে। কারণ, লোকসানের ভয়ে অনেক খামারি এ পেশা ছেড়ে চলে গেছেন। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে এক দিন বয়সী সাদা ব্রয়লার বাচ্চার সাপ্তাহিক উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৮০ লাখের ওপরে। বর্তমানে তা ১ কোটি ৩০ থেকে ৩৫ লাখে নেমে এসেছে। ব্রিডার খামারগুলো লোকসানে বাচ্চা বিক্রি করার পরও খামারিরা তা কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এটা উদ্বেগজনক।
পোলট্রির খাবারের দাম (ফিড) বৃদ্ধির বিষয়ে ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (এফআইএবি) সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ফিড তৈরির কাঁচামালের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। ফিড তৈরির কাঁচামাল ভুট্টা ও সয়াবিনসহ অধিকাংশ উপকরণই আমদানিনির্ভর। এ ছাড়া জাহাজভাড়া ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচে কোনোভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না।