গেইটেড কমিউনিটি: আধুনিক আবাসনের নতুন দিগন্ত
বর্তমান সময়ে আবাসনের জন্য যে সমস্যাটি সবচেয়ে গুরুতর হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হলো, দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকা জনসংখ্যা। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ, আর রাজধানী ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর একটি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, অথচ জমির পরিমাণ সীমিত। তাই নতুন আবাসন প্রকল্পগুলোকে পরিকল্পিতভাবে সাজানো এবং জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
এমন পরিস্থিতিতে প্রচলিত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অ্যাপার্টমেন্ট বা অনিয়ন্ত্রিত আবাসন মডেল আর যথেষ্ট নয়। নিরাপদ, আরামদায়ক এবং সবুজ পরিবেশে আধুনিক জীবনযাপনের জন্য বিশ্বজুড়ে গেইটেড কমিউনিটির ধারণা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে এই মডেল ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশেও বেশ কিছু রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানের আবাসন পরিকল্পনাতেও এই মডেল এখন গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে।
এ বিষয়ে কথা হয় এডিসন রিয়েল এস্টেটের হেড অব মার্কেটিং মোহাম্মদ তাইয়েবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বজুড়ে গেইটেড কমিউনিটির ধারণাটি জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি এখনো এতটা বিস্তার লাভ করতে পারছে না। কারণ, এর জন্য প্রয়োজন বিশাল জায়গা। আর বাংলাদেশে এত বড় প্লট পাওয়া মুশকিল। এ ছাড়া যেহেতু এগুলো অনেক বড় প্রজেক্ট, তাই রিস্ক ফ্যাক্টরও থাকে বেশি। বড় ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া এ ধরনের প্রকল্প অন্যরা নিতে পারছে না।
গেইটেড কমিউনিটির ধারণা
গেইটেড কমিউনিটি বলতে বোঝায় একটি আবাসিক এলাকা, যা চারপাশে সুরক্ষা প্রাচীর বা ফেন্স দ্বারা ঘেরা এবং যেখানে প্রবেশ ও প্রস্থান নিয়ন্ত্রিত। প্রবেশপথে নিরাপত্তারক্ষী, সিসিটিভি এবং ডিজিটাল মনিটরিং ব্যবস্থা থাকে। এখানে একসঙ্গে একাধিক আবাসিক ভবন, পার্ক, খেলার মাঠ, সুইমিং পুল, জিমনেসিয়াম, শপিং জোন, কমিউনিটি সেন্টার সবকিছু এক ছাতার নিচে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়।
বিশ্বজুড়ে এই মডেলটি জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে রয়েছে কয়েকটি কারণ। গেইটেড কমিউনিটিতে বসবাসরত বাসিন্দারা একই সঙ্গে অনেক সুবিধা পান। সেই সঙ্গে এই কমিউনিটিগুলোতে তুলনামূলক বড় জমিতে পরিকল্পিতভাবে বসবাস করা যায়। একই আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের মানুষ একত্রে বসবাস করায় সামাজিক সম্প্রীতিও বাড়ে।
সুবিধা ও নিরাপত্তা
গেইটেড কমিউনিটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো নিরাপত্তা। সীমিত প্রবেশপথ ও ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তার কারণে অবাঞ্ছিত ব্যক্তি সহজে প্রবেশ করতে পারে না। শিশুদের জন্য নিরাপদ খেলার মাঠ, প্রবীণদের জন্য হাঁটার পথ এবং পুরো পরিবারের জন্য বিনোদনমূলক সুযোগ—সবই থাকে এক জায়গায়। অনেক ক্ষেত্রে নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, পানীয় জলের সাপ্লাই ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো সুবিধাও থাকে, যা জীবনযাপনকে আরও সহজ করে। এ ছাড়া যানজট ও শব্দদূষণের মতো শহুরে সমস্যা থেকে কিছুটা মুক্তি মেলে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা এবং সবুজায়নের কারণে পরিবেশও স্বাস্থ্যকর হয়।
এডিসন রিয়েল এস্টেটের হেড অব মার্কেটিং মোহাম্মদ তাইয়েবুর রহমান বলেন, গেইটেড কমিউনিটি সামাজিক সম্পর্ককে নতুনভাবে দৃঢ় করে। উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কমিউনিটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাসিন্দাদের মধ্যে আন্তরিকতা গড়ে ওঠে। এই সুবিধাগুলো সাধারণত ফ্ল্যাট কিংবা অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে পাওয়া যায় না। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার জন্যই গেইটেড কমিউনিটি খুবই সুবিধাজনক।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশে দ্রুত নগরায়ণ এবং অপরিকল্পিত বাসস্থান থেকে মুক্তি পেতে চাইলে সরকার ও বেসরকারি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা, যাতে গেইটেড কমিউনিটি শুধু নির্দিষ্ট শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সবার জন্য সহজলভ্য হয়। জমির সঠিক ব্যবহার, অবকাঠামোগত সমন্বয় এবং ন্যায্য নীতি থাকলে গেইটেড কমিউনিটি নগর উন্নয়নে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, সীমিত জমি এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সঠিক নীতি ও অবকাঠামোর সমন্বয়ে গেইটেড কমিউনিটি বাংলাদেশের আবাসন খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।