জুলাই সনদে মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের ভূমিকা নিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ‘মাদ্রাসা রেজিস্ট্যান্স ডে’ কর্মসূচি পালন করা হয়। ঢাকা, ২১ জুনছবি: সৈয়দ রিফাত মোসলেম

জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদেরা দেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন, জীবন দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের সেই আত্মত্যাগের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়নি বলে মনে করেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের অভিযোগ, শহীদদের হত্যার বিচার এখনো দৃশ্যমান হয়নি। খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে জুলাই সনদে মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালার ‘মাদ্রাসা রেজিস্ট্যান্স ডে’ কর্মসূচিতে এই দাবি জানান শহীদ পরিবারের সদস্যরা। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।

বেলা সাড়ে তিনটায় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন তাঁরা। ৫ আগস্ট শহীদ হওয়া মাদ্রাসাশিক্ষার্থী খোবায়েবের ভাই মুফতি সোহাইল বলেন, শহীদেরা দেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন, জীবন দিয়েছেন যে উদ্দেশ্যে তার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তাঁরা জীবন দিয়েছেন ইসলামের জন্য। কিন্তু এখন সব উল্টো হচ্ছে।

শহীদ উসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান বলেন, তাঁর ছেলের শরীরে ৫৫টি গুলি করা হয়েছিল। ছেলে হত্যার বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের কলিজা যারা খালি করছে, তাদের বিচার, এই বাংলার জন্য আমরা তাদের বিচার কামনা করছি।’ বিচার এখনো দৃশ্যমান হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে মামলা করার দুই মাস পর আসামি কীভাবে পালিয়ে যায়?

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানবিরোধী সংগ্রাম এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আলেম সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।

মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ট্যাগ লাগিয়ে হেয় করার চেষ্টা হয়েছে উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, ধৈর্য ধরতে হবে, আখলাক ও আত্মনিয়ন্ত্রণের চর্চা বজায় রাখতে হবে। যাতে কেউ মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ন্যায্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে। এমন কিছু করা যাবে না, যার সুযোগ নিয়ে আবারও আলেম-ওলামাদের ওপর দমন-পীড়নের পথ তৈরি হয়।

অনুষ্ঠানে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, মাদ্রাসার ছাত্ররা দেশের কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তির জন্য, জনগণের অধিকারের জন্য পরিশ্রম করেছেন, রক্ত দিয়েছেন, জেল খেটেছেন। আলিয়া ও কওমিনির্বিশেষে মাদ্রাসাশিক্ষার্থীরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, তা দেশের মুক্তি আন্দোলনের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।

জুলাই অভ্যুথানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি রাত সাড়ে ৯টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাতের কারণে সন্ধ্যা ৬টার পরে দোয়া–মোনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ করা হয়।

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব খ ম কবিরুল ইসলাম অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।