হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিরা ‘প্রভাবশালী’, শনাক্ত করতে পারছে না পুলিশ

আজগর আলী ২০২১ সালে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

দুই বছর পেরিয়ে গেলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণার সময় সহিংসতায় নিহত আজগর আলী (বাবুল) হত্যাকাণ্ডের কোনো কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। জামিনে রয়েছেন এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ২০ আসামি। দুই বছরে নতুন কোনো আসামিকেও গ্রেপ্তার করা যায়নি। তদন্তে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ নিহতের পরিবার।

নিহত আজগর আলীর পরিবারের দাবি, সব জেনেও অন্ধের মতো আচরণ করছে পুলিশ। মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাও (ডিবি) বলতে পারছে না, কে বা কারা গুলি করেছিল আজগরকে। উদ্ধার হয়নি ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রও।

এদিকে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। তাই আলোচিত এ ঘটনার তদন্তে প্রত্যক্ষদর্শী কেউ সাক্ষ্য দিতে রাজি হচ্ছেন না। ভিড়ের মধ্য থেকে গুলি করায় কে গুলি করেছিল, তা–ও শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন

ঘটনা ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারির। তখন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা শুরুর পাঁচ দিন চলছে। নগরের পাঠানটুলি ওয়ার্ডের মগ পুকুরপাড় এলাকায় প্রচারণার সময় আওয়ামী লীগসমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর এবং বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদেরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিতে নিহত হন স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী আজগর আলী।

কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া নজরুল শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। কাদের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। তিনি নগর যুবলীগের সদস্য।

নজরুলের পক্ষ নেওয়ার কারণে বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদেরের সঙ্গে আজগরের বিরোধ শুরু হয়। এর আগের (২০১৫) নির্বাচনে আজগর ছিলেন কাদেরের পক্ষে। তখন কাদের নজরুলকে হারিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ২০২১ সালের নির্বাচনে নজরুল নির্বাচিত হন।

হত্যাকাণ্ডের পর নিহত আজগর আলীর ছেলে সেজান মাহমুদ বাদী হয়ে আবদুল কাদেরসহ ১৩ জনকে আসামি করে ডবলমুরিং থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে পুলিশ আরও সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। এ মামলায় কাদেরসহ ২০ জন আসামি গ্রেপ্তার হন। সবাই স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মী। বর্তমানে সবাই জামিনে আছেন।

শুরু থেকে মামলাটি তদন্ত করে গোয়েন্দা পুলিশ। দুই বছরে বদল হয়েছে তিনজন তদন্ত কর্মকর্তা। তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) মুহাম্মদ আলী হোসেন গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, এখনো কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারে কাজ চলছে।

আওয়ামী লীগের লোকজনের হাতেই আজগর আলী মারা যান বলে দাবি করেছেন তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজীবন লোকটা আওয়ামী লীগ করেছে। শেষ পর্যন্ত নিজ দলের লোকের হাতে মরতে হয়েছে, এটা কীভাবে মেনে নিতে পারি? দল ক্ষমতায় থাকার পরও স্বামীর হত্যাকারীকে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। এই কষ্ট বলে বোঝানো যাবে না।’

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাঠানটুলি ওয়ার্ডের মগ পুকুরপাড় এলাকাটি কাদেরের এলাকা হিসেবে পরিচিত। ঘটনার দিন রাতে সেখানে নজরুল তাঁর সমর্থকদের নিয়ে প্রচারণায় যান। এ সময় গুলির ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল ও আশপাশে সাতটি সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। কিন্তু সেগুলো ভাঙা পাওয়া যায়। কয়েকটির ফুটেজ পাওয়া গেলেও তা ছিল অস্পষ্ট। গ্রেপ্তার আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেও পুলিশ কিছুই বের করতে পারেনি।

জানতে চাইলে বর্তমানে জামিনে থাকা নগর যুবলীগের সদস্য আবদুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে তাঁকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। তিনি নিজেও চান, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক, শনাক্ত হোক প্রকৃত আসামি।

এদিকে দুই বছরেও বাবার হত্যার তদন্তে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মামলার বাদী সেজান মাহমুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিচার দূরে থাক, আসামিই শনাক্ত করতে পারেনি। কোথায়, কার কাছে গেলে বিচার পাব, জানি না।’