কিমেকারস কনসাল্টিং বাংলাদেশের একটি বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান। আমরা বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার হয়ে বাংলাদেশে গবেষণা পরিচালনা করি।
প্রথম আলো আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়ে জাতীয় জনমত জরিপ-২০২৫-এর দায়িত্ব দিয়েছে। এই জরিপে এ বছরের ২১ থেকে ২৮ অক্টোবর আমরা ৬৬৮ জন নারী ও ৬৭৪ জন পুরুষ—মোট ১ হাজার ৩৪২ জনের মতামত সংগ্রহ করেছি। যেকোনো জরিপের ক্ষেত্রেই টার্গেট পপুলেশন (উদ্দিষ্ট বা নির্ধারিত জনগোষ্ঠী) নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়ে জনমত জরিপের ক্ষেত্রে আমাদের প্রধান বিবেচনা ছিল দুটি। প্রথমত, মতামতদাতাকে বাংলাদেশে ভোট দেওয়ার উপযুক্ত হতে হবে, অর্থাৎ তাঁর বয়স ১৮ বছরের বেশি হতে হবে এবং তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। দ্বিতীয়ত, মতামতদাতার অন্তত সাক্ষরতা থাকবে (আনুষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও), যাতে জরিপের প্রশ্নগুলো বুঝে উত্তর দিতে সক্ষম হন। সুতরাং এই জরিপের একটি সীমাবদ্ধতা এই যে এটি দেশের সম্পূর্ণ নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর মতামতের প্রতিনিধিত্ব করে না।
জাতীয় পর্যায়ের একটি জরিপে যথেষ্টসংখ্যক মতামতদাতাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়, যাতে তাঁদের মতামতের প্রবণতা পুরো দেশের মানুষের মতামতের প্রবণতার প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। কোনো জরিপই একটি উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মতামতের শতভাগ বা নির্ভুল প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। কিন্তু জরিপে মতামতদাতার সংখ্যা এমন হতে হয়, যাতে নমুনা নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানগত তাৎপর্য (স্ট্যাটিস্টিক্যাল সিগনিফিকেন্স) বজায় থাকে। পরিসংখ্যানগত তাৎপর্য বজায় থাকলেই জরিপের ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতা বাড়ে এবং ভুল ফল পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। বড় আকারের জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য অন্তত ৩৮৪ মতামতদাতার ওপর জরিপ করা উচিত। এতে জরিপে ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতা ৯৫ শতাংশের ওপরে এবং ভুলের পরিধি ৫ শতাংশের নিচে থাকে, অর্থাৎ জরিপের ফলাফল পরিসংখ্যানের মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য হয়। আন্তর্জাতিকভাবে এটি স্বীকৃত।
দেশে ভোটারের সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখের বেশি। এটি মাথায় রেখে আমরা ১ হাজার ৩৪২ জনের নমুনা নির্বাচন করেছি, যাতে ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতা (কনফিডেন্স লেভেল) ৯৯ শতাংশের ওপরে এবং ভুলের পরিধি (মার্জিন অব এরর) ২ দশমিক ৭ শতাংশের নিচে থাকে। সুতরাং গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়ে প্রথম আলোর জাতীয় জনমত জরিপ-২০২৫–এর ফলাফলকে অনায়াসে গ্রহণযোগ্য বলা যায়। এমনকি আলাদাভাবে নারী মতামতদাতা ও পুরুষ মতামতদাতাদের জরিপের ফলাফলও গ্রহণযোগ্য ফলের নির্ভরযোগ্যতা ৯৯ শতাংশ ও ভুলের পরিধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশের নিচে আছে।
এটি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বমূলক জরিপ, নির্দিষ্টভাবে কোনো নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্বমূলক নয়। জরিপের জন্য আমরা ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেটের শহরাঞ্চল এবং ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও মধুখালী উপজেলা; বরিশালের গৌরনদী উপজেলা; কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা; ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা এবং রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার গ্রামগুলোকে বেছে নিয়েছি।
নির্বাচিত এলাকায় মতামত সংগ্রহকারীরা দৈবচয়নের মাধ্যমে মতামতদাতাদের নির্বাচন করেছেন, যাতে কোনো পক্ষপাতের সুযোগ না থাকে। যেসব মতামতদাতা স্বেচ্ছায় মতামত দিতে সম্মত হয়েছেন এবং জরিপের উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর অংশ, শুধু তাঁদের কাছ থেকেই মতামত সংগ্রহ করা হয়েছে। মতামত সংগ্রহের সময় মতামতদাতাদের চিন্তাভাবনা করে মতপ্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক মতামতদাতার কাছ থেকে মতামত সংগ্রহে গড়ে ৪০ মিনিট সময় লেগেছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা নীতিমালা অনুসরণ করে আমরা প্রথম আলোর কাছে এমন কোনো তথ্য দিইনি, যা দিয়ে কোনো নির্দিষ্ট মতামতদাতাকে চিহ্নিত করা যায়।
জরিপকারীরা চেষ্টা করেছেন মতামতদাতাদের মধ্যে নারী ও পুরুষের সংখ্যায় সমতা রক্ষা করতে এবং শেষ পর্যন্ত মোট মতামতদাতার মধ্যে আমরা ৪৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ নারী ও ৫১ দশিমক ২২ শতাংশ পুরুষ মতামতদাতাকে পেয়েছি।
জরিপে মোট ৫০টি প্রশ্ন ছিল। এর মধ্যে ১৩টি মতামতদাতার আয়, পেশা ও অভ্যাস–সংক্রান্ত এবং ৩৭টি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ের ওপর। মতামতদাতারা ধৈর্য ধরে সব কয়টি প্রশ্ন শুনেছেন এবং তাঁর সুচিন্তিত উত্তর দিয়েছেন। আমরা মতামতদাতাদের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য তাঁদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা আশা করব, প্রথম আলো এই মতামত নিরপেক্ষতা ও সুবিবেচনার সঙ্গে প্রকাশ করে তাঁদের আন্তরিক সহযোগিতা এবং জরিপে আমাদের প্রচেষ্টাকে অর্থবহ করে তুলবে।
খন্দকার স্বনন শাহরিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কিমেকারস কনসাল্টিং লিমিটেড