যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে বাধা সামাজিক কুসংস্কার

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) আয়োজিত এক সেমিনারে গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য ও ফলাফল উপস্থাপন করা হয়ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক কুসংস্কার যক্ষ্মা রোগী ও আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারকে প্রভাবিত করছে। এতে করে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া যক্ষ্মার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন সামাজিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

‘বাংলাদেশে যক্ষ্মা সম্পর্কিত কুসংস্কার পরিস্থিতি’ শীর্ষক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) আয়োজিত এক সেমিনারে গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য ও ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়নে যৌথভাবে গবেষণাটি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি) ও আইসিডিডিআরবি।

সেমিনারে আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সায়েরা বানুর অধীনে আইসিডিডিআরবির পাবলিক–প্রাইভেট মিক্স শাখার কারিগরি পরামর্শক নাদিম রেজা, জ্যেষ্ঠ পরিসংখ্যান কর্মকর্তা তানজিন রহমান ও গবেষণা কর্মকর্তা তামান্না সুলতানা গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ২৮ শতাংশ যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তি তাঁদের চিকিৎসা গ্রহণ ও সেবাচক্রের প্রথম তিনটি পর্যায়ে কুসংস্কারের প্রভাব অনুভব করেন। তাঁদের পরিবারের প্রায় ২২ শতাংশ সদস্য কুসংস্কারের সম্মুখীন হন। এ ছাড়া ১৪ ভাগ যক্ষ্মা রোগী ও তাঁদের পরিবারের ১১ শতাংশ সদস্য বাড়িতেও কুসংস্কার অনুধাবন করেন।

গবেষণায় আর্থসামাজিক বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হয়। তা থেকে জানা যায়, যক্ষ্মার কুসংস্কার নারীদের বেশ প্রভাবিত করে। এতে নারীরা সামাজিকভাবে অসম্মান, হয়রানি ও আর্থিক অসুবিধায় পড়েন।

গবেষণাটি বাংলাদেশে যক্ষ্মা নিয়ে কুসংস্কারের ব্যাপক প্রভাবকে তুলে ধরে এটিকে যক্ষ্মার সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এতে কুসংস্কারের কাঠামোগত ও সামাজিক কারণগুলো মোকাবিলা করতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়, যা মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা এবং জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাকে শক্তিশালী করবে।

গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ঢাকা জেলা শহর ও গ্রাম এলাকায় পরিচালিত এ সমীক্ষায় স্টপ টিবি পার্টনারশিপের ‘টিবি স্টিগমা অ্যাসেসমেন্ট ডেটা কালেকশন টুল’ ব্যবহার করা হয়। গত পাঁচ বছরে যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের সদস্য, সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের নিয়ে সমীক্ষাটি চালানো হয়।

গবেষণায় যক্ষ্মা রোগী ও তাঁদের পরিবারের সদস্য, সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিসহ যাঁরা এ রোগের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে কুসংস্কারের উপস্থিতি ও মাত্রার বিষয়টি যাচাই করে দেখা হয়। এতে দেখা যায়, কুসংস্কারকে এমন একটি সামাজিক আচরণ হিসেবে দেখা হয়, যেখানে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়। তাঁরা অপমানজনক ও নেতিবাচক আচরণের শিকার হন।

সেমিনারের শুরুতে আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদ বলেন, একসময় মানুষ যক্ষ্মা নিয়ে কথা বলতে ভয় পেত। তবে এখন দেশের যেকোনো প্রান্তে গেলেই যক্ষ্মার নাম শোনা যায়। এটা জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সফল উদ্যোগ, সরকারের বলিষ্ঠ ভূমিকার পাশাপাশি আইসিডিডিআরবিতে যাঁরা যক্ষ্মা নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের কারণে সম্ভব হয়েছে। যক্ষ্মার কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে এভাবেই কাজ করতে হবে।

সেমিনারে অতিথিদের মধ্যে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক টিটু মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন পরিচালক মাহাফুজার রহমান সরকারসহ অন্য অতিথিরা গবেষণায় পাওয়া ফলাফলের ওপর আলোচনা করেন। সামাজিক কুসংস্কার কাটিয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।