সাবেক প্রেমিকার ব্যক্তিগত ছবি প্রকাশ, আসামিকে পুলিশে দিলেন হাইকোর্ট

পলাশ মিয়া নামের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই যুবক আগাম জামিন নিতে এলে আবেদন খারিজ করে তাঁকে পুলিশে দিয়েছেন হাইকোর্ট
ছবি: সংগৃহীত

সম্পর্কের সূত্র ধরে গোপনে মেয়েটির ব্যক্তিগত ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের স্থিরচিত্র ধারণ এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে করা এক মামলায় এক আসামিকে পুলিশে দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগাম জামিন চেয়ে আসামির করা আবেদন খারিজ করে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

আসামির নাম মো. পলাশ মিয়া (২৬)। এজাহারে আসামির ঠিকানা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ার মনিয়ন্দ গ্রাম উল্লেখ রয়েছে। শুনানিকালে আসামির উদ্দেশে আদালত বলেন, লক্ষ করা যাচ্ছে যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার করে এ ধরনের অপরাধ প্রায়ই সংঘটিত হচ্ছে। এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করে কেউ হাইকোর্ট থেকে জামিন পেতে পারেন না। পরে জামিন আবেদন উত্থাপিত হয়নি বলে খারিজ করে আদেশ দেন আদালত।

এর আগে মো. পলাশ মিয়া (২৬) ও হৃদয় চৌধুরী (২৭) এবং অজ্ঞাতনামা সহযোগী উল্লেখ করে গত বছরের ২০ নভেম্বর মেয়েটির মা আখাউড়া থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাটি করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে এর আগে পলাশ মিয়া মেয়েটির সঙ্গে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। সুস্পর্কের সুবাদে আসামি অজ্ঞাতসারে মেয়েটির স্পর্শকাতর অঙ্গের ছবি তোলেন। ভিডিও কলে কথা বলার সময় মেয়েটির অজ্ঞাতসারে একাধিক খোলামেলা স্থিরচিত্র ধারণ ও সংরক্ষণ করেন তিনি। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর পলাশ মিয়া বিভিন্ন কুপ্রস্তাব দিলে মেয়েটি যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। গত বছরের ২০ অক্টোবর মেয়েটির বিয়ে হয়। পরে মেয়েটি তাঁর স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। এরপর ২৪ অক্টোবর রাতে ওই বাড়ির সামনে গিয়ে ভুক্তভোগী মেয়েটি ও তাঁর স্বামীকে ডেকে আনেন আসামিরা। ২ নম্বর আসামির (হৃদয় চৌধুরী) সহায়তায় পলাশ মিয়ার মুঠোফোনে ধারণ করা ও সংরক্ষিত ওই সব ছবি তাঁদের দেখিয়ে মেয়েটির স্বামীকে তাঁকে নিয়ে সংসার না করার কথা বলেন। একপর্যায়ে পলাশ মিয়া তাঁর ভুয়া ফেসবুক আইডি এবং ব্যবহৃত আইডি থেকে মেয়েটির ওই সব ছবি প্রকাশ করেন।

মামলার অভিযোগ অনুসারে, গত বছরের ২৪ অক্টোবর রাত আটটা থেকে ৪ নভেম্বর বেলা ১১টার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে হৃদয় চৌধুরীর সহায়তায় পলাশ মিয়া বিভিন্ন ফেসবুক আইডি থেকে মেয়েটির বিভিন্ন পর্নো ছবি প্রকাশসহ তাঁদের আত্মীয়স্বজনের কাছে প্রচার করে মেয়েটিকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে আসছিলেন।

এই মামলায় আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন আসামি পলাশ মিয়া। আবেদন শুনানির জন্য থাকায় আসামি আজ আদালতে হাজির হন। আদালতে তাঁর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফজলুর রহমান, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী বদরুন নাহার। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমি।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাসুদ রুমি প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন আসামি। পরে মেয়েটির অজ্ঞাতসারে ব্যক্তিগত ও তাঁদের ঘনিষ্ঠ স্থিরচিত্র ধারণ ও সংরক্ষণ করেন আসামি। মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেলে এসব দেখিয়ে তাঁর স্বামীকে মেয়েটিকে নিয়ে সংসার না করতে বলেন তিনি। একপর্যায়ে ধারণ করা স্থিরচিত্র ফেসবুকে আপলোড করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন আসামি। এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করে কেউ হাইকোর্ট থেকে জামিন পেতে পারেন না বলে উল্লেখ করেন হাইকোর্ট। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট দুপুরে আগাম জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়ে ওই মামলা সূত্রে আসামিকে পুলিশে সোপর্দ করার নির্দেশ দেন। পরে পুলিশ এসে আসামিকে আটক করে নিয়ে যায়।