চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে অর্থ লেনদেনের অডিও ফাঁস, তিনজন বরখাস্ত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে অর্থ লেনদেনের অডিও ও ভিডিও ফাঁসের ঘটনায় দুই কর্মচারী ও এক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে একই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক কর্মকর্তার পদাবনতি ও আরেক কর্মকর্তাকে উপাচার্যের দপ্তর থেকে বদলির সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৫৪৫তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তিরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ওয়ার্কশপের সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী হাদী মো. রশিদ, হিসাব নিয়ামক দপ্তরের কর্মচারী আহমদ হোসেন ও রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের কর্মকর্তা সেলের নিম্নমান সহকারী মানিক চন্দ্র দাশ। আর পদাবনতি পাওয়া ব্যক্তি হলেন উপাচার্য শিরীণ আখতারের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী খালেদ মিছবাহুল। তাঁকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রারের পদ থেকে সহকারী রেজিস্ট্রারে পদায়ন করা হয়েছে। অন্যদিকে উপাচার্য দপ্তরের কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহাবউদ্দিনের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক নিয়োগের ফাইল হারানোর দায়ে বদলির সুপারিশ করা হয়েছে।

আজ বুধবার রাতে প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন সিন্ডিকেট সদস্য নঈম হাসান আওরঙ্গজেব চৌধুরী। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কোন ঘটনায় শাস্তি

গত বছরের আগস্টে কর্মচারী নিয়োগে অর্থ লেনদেন নিয়ে মানিক চন্দ্র দাশ ও একজন নিয়োগপ্রার্থীর ফোনালাপ ফাঁস হয়েছিল। এতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তিনজনের কাছ থেকে মানিক চন্দ্র দাশের ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছিল। যদিও মানিক চন্দ্র দাশ দাবি করেছিলেন, তিনি ব্যক্তিগত কাজে এই টাকা নিয়েছিলেন। এ ঘটনায় দুই দফা কমিটি করেছে কর্তৃপক্ষ। কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে মানিক চন্দ্র দাশকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয় সিন্ডিকেট।

অন্যদিকে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের পাঁচটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছিল। এসব ফোনালাপ ছিল উপাচার্যের তৎকালীন ব্যক্তিগত সহকারী খালেদ মিছবাহুল ও কর্মচারী আহমদ হোসেনের সঙ্গে তিনজন নিয়োগপ্রার্থীর। এ ঘটনায় খালেদ মিছবাহুলকে পদাবনতি ও আহমদ হোসেনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ ছাড়া ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের নিয়োগের ফাইল উপাচার্য দপ্তর থেকে হারিয়েছে। এই ফাইলে নিয়োগপ্রার্থীদের ফোন নম্বর, ঠিকানাসহ জীবনবৃত্তান্ত ছিল। ফাইল হারানোর দায়ে কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহাবউদ্দিনকে উপাচার্য দপ্তর থেকে বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

২০১৮ সালে ৭ আগস্ট এক প্রার্থীর কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ছয় লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল কর্মকর্তা হাদী মো. রশিদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া অর্থ লেনদেন নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছিল বলে তদন্ত কমিটির সদস্যের সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় ২০২১ সালে জুনে তিন সদস্যের একটি কমিটি করেছিল কর্তৃপক্ষ। এ কমিটি যাচাই–বাছাই করে হাদী মো. রশিদকে বরখাস্তের সুপারিশ করেছে।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো নিয়োগ–বাণিজ্যের চক্র রয়েছে কি না, এটি খুঁজে বের করতে খালেদ মিছবাহুল, আহমদ হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে ফৌজদারি আইনে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট।