সাইবার নিরাপত্তা বিল ঢেলে সাজাতে সংসদ সদস্যদের কাছে চিঠি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো সাইবার নিরাপত্তা বিল যাতে মত, চিন্তা, বিবেক, বাক্‌ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ারে পরিণত না হয়, তা নিশ্চিত করতে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের জোরালো ভূমিকা প্রত্যাশা করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের পাশাপাশি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের ই–মেইলে চিঠি দিয়েছে তারা। একই চিঠি দেওয়া হয়েছে অন্য সংসদ সদস্যদেরও।

গত বৃহস্পতিবার পাঠানো ওই চিঠিতে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ থেকে খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩: তুলনামূলক পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ সংক্রান্ত টিআইবির পর্যবেক্ষণও যুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানিয়েছে টিআইবি।

উল্লেখ্য, সাইবার নিরাপত্তা বিল-২০২৩ গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়। বিলটি পরীক্ষা করে পাঁচ দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দিতে সেদিনই তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

সাইবার নিরাপত্তা আইন-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও চর্চার আলোকে এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সাইবার নিরাপত্তা বিল-২০২৩ সম্পূর্ণরূপে ঢেলে সাজাতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সব সংসদ সদস্যের প্রতি টিআইবি আহ্বান জানিয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটি ও সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) ব্যবহার ও অপব্যবহারের মাধ্যমে বাক্স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মতো বিভিন্ন মৌলিক মানবাধিকারের ব্যাপক লঙ্ঘনের ফলে জনমনে উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতাবোধ তৈরি হয়েছে। সরকার তা অবসানের বাধ্যবাধকতার যথার্থতা উপলব্ধি করেছে। তিনি বলেন, ‘যৌক্তিকভাবে মানুষের মধ্যে এরূপ প্রত্যাশা জন্ম নিয়েছে যে যেসব কারণে ডিএসএ রহিত করা হচ্ছে, সিএসএতে (প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনে) সেসব উপাদান থাকবে না এবং এর পরিধি ও উদ্দেশ্য হবে সুনির্দিষ্টভাবে সাইবার অবকাঠামো, ইন্টারনেট ও সংশ্লিষ্ট সব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের নিরাপত্তা এবং এসবের অবাধ ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত আইনি কাঠামো তৈরি করা।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিবর্তনমূলক উপাদানসহ এর বেশির ভাগ ধারাই প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনে হুবহু প্রতিস্থাপিত হয়েছে উল্লেখ করেছে টিআইবি। তারা বলছে, ক্ষতিকর কনটেন্ট (আধেয়) অপসারণ করার প্রয়োজন আছে, তবে তা সীমিত পরিধির মধ্যে থাকতে হবে এবং বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। প্রস্তাবিত আইনের বিভিন্ন ধারার মাধ্যমে মতপ্রকাশ, ভিন্নমত, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা চর্চা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে কর্তৃপক্ষের ইচ্ছেমতো অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ রাখা হয়েছে, যা উদ্বেগজনক।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি আরও বলেছে, এই বিলে দক্ষতা ও সক্ষমতাকে বিবেচনা না করে এবং বিচারিক নজরদারি ব্যতিরেকে অপরাধ তদন্ত এবং আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশকে ঢালাও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিচারিক নজরদারির যে সক্ষমতা দরকার, তা আছে কি-না, তা বিবেচনা করা হয়নি। মত ও তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতার চর্চার কারণে মানহানির মতো অভিযোগের প্রচলিত আইনে বিচার করা সম্ভব, এমন অনেক বিষয় অযৌক্তিকভাবে এই বিলের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। অথচ আন্তর্জাতিক চর্চা অনুযায়ী সাইবার নিরাপত্তা আইনের জন্য অপরিহার্য অনেক উপাদান এই খসড়ায় নেই এমন বেশকিছু বিষয় সংশোধিত খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে সুপারিশ করছে টিআইবি।