প্রযুক্তিবান্ধব ফ্রিজে স্বস্তির জীবন

রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ এখন প্রতিটি বাসাবাড়ির গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। স্মার্ট জীবনযাপনের অংশ হিসেবে ফ্রিজও এখন স্মার্ট বা আধুনিক। খাবারের গুণগত মান ঠিক রাখাই স্মার্ট ফ্রিজের অনন্য বৈশিষ্ট্য। এখন শুধু খাবার ঠান্ডা রাখার সুবিধাই নয়, ফ্রিজ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে কি না, খাবারে বরফ জমায় কি না—এসব বিষয়ও বিবেচনায় রাখেন ক্রেতারা।

প্রযুক্তির সমাহার

বর্তমানে প্রায় সব ব্র্যান্ডের ফ্রিজেই সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ফ্রিজের ‘হৃদয়’ (হার্ট) হচ্ছে কম্প্রেসর। আধুনিক ফ্রিজের কম্প্রেসর হচ্ছে ইনভার্টার প্রযুক্তিসমৃদ্ধ। ফ্রিজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি হচ্ছে ইনভার্টার। ইনভার্টার থাকার কারণে ফ্রিজ হয় বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী। ফলে বিদ্যুৎ বিল অনেক কম আসে। আধুনিক ফ্রিজগুলোয় আরও রয়েছে স্মার্ট নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা। রয়েছে ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) প্রযুক্তি। অর্থাৎ ইন্টারনেটেও যুক্ত হতে পারে ফ্রিজ। ফ্রিজে রাখা খাবারদাবারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

আধুনিক রেফ্রিজারেটরে রয়েছে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য। টুইন কুলিং প্লাস প্রযুক্তি থাকায় দুটি কুলিং ফ্যান ও দুটি ইভাপোরেটর কাজ করে। এতে দুর্গন্ধ ছড়ায় না, ৭০ শতাংশ আর্দ্রতা বজায় থাকে। রয়েছে স্মার্ট কনভারশন। ডিজিটাল ইনভার্টার প্রযুক্তির ফলে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। আরও আছে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক, কুল প্যাক (সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা ব্যাকআপ), কুল সিলেক্ট জোন বা ফ্লেক্স জোন, বিল্ট-ইন স্ট্যাবিলাইজার, ডোর অ্যালার্ম ও ডিওডোরাইজিং ফিল্টার।

স্মার্ট ফ্রিজের যত মোড

স্মার্ট ফ্রিজে অনেক আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ইনভার্টার প্রযুক্তি থাকে। এতে পাঁচটি মোড কাজ করে। এর মধ্যে একটিতে ওপরে ডিপ আর নিচে নরমাল সুবিধা থাকে। রয়েছে টুইন কুলিং প্লাস প্রযুক্তির সুবিধা। নতুন এই প্রযুক্তিসমৃদ্ধ ফ্রিজে ডিপ কনভার্ট করে পুরোটাই নরমাল করে ফেলা যায়। কেউ বাসার বাইরে গেলে দীর্ঘ সময়ের জন্য এনার্জি সেভিং মোড চালু করে রাখতে পারেন।

তখন চাইলে শুধু ডিপ চালু রাখতে পারবেন। এভাবেই পাঁচটি মোডে ফ্রিজ কাজ করে। ফ্রিজে আগে একটা ফ্যানে নরমাল মোড চালু করা যেত। এখন টুইন কুলিংয়ের কারণে কম্প্রেসরের ওপর চাপ কমেছে। একাধিক ফ্যান ব্যবহৃত হচ্ছে। আলাদা চেম্বারে আলাদা ফ্যান ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ইওটি প্রযুক্তির রেফ্রিজারেটর। যেটি যুক্ত থাকবে ইন্টারনেটে, যা প্রযুক্তির সহায়তায় ফ্রিজে খাবার কতটুকু আছে, তা নিয়ন্ত্রণ করবে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সুপারশপে ফ্রিজ থেকে স্বয়ংক্রিয় বার্তা (নোটিফিকেশন) যাবে।

প্রযুক্তির ভিন্নতা

বাজারে পাঁচ রকমের রেফ্রিজারেটর পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো হলো ডিপ ফ্রিজার, ডিরেক্ট কুল, নো ফ্রস্ট, সাইড বাই সাইড ও সেমিকমার্শিয়াল সিরিজ। প্রতিটি ফ্রিজই আলাদা প্রযুক্তিসমৃদ্ধ। দেশের বাজারে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন মাউন্ট, সাইড বাই সাইড, বটম মাউন্ট এবং আপরাইট ক্যাটাগরির বিভিন্ন মডেলের ফ্রিজ রয়েছে। টুইন কুলিং প্লাস ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া ফিল্টারের মতো উদ্ভাবনী প্রযুক্তির মাধ্যমে ফ্রিজে অনেক দিন পর্যন্ত খাবার সতেজ থাকে।

প্রযুক্তিসহ অন্য সুবিধাগুলো

রেফ্রিজারেটর কেনার আগে ফ্রিজের ঠান্ডা করার প্রযুক্তি কেমন, সেটা দেখে নেওয়া উচিত। যে ফ্রিজের কম্প্রেসর যত ভালো, সেই ফ্রিজ তত ভালো। তাই ফ্রিজ কেনার সময় কম্প্রেসরের কর্মদক্ষতা দেখে নেওয়া উচিত। দেখা উচিত ফ্রিজের বিল্ড কোয়ালিটি কেমন।

বিক্রয়পরবর্তী সেবার ব্যাপারে খোঁজ নিতে হবে। কেউ বিক্রয়পরবর্তী সেবা দেয় ৫ বছর, আবার কেউ দেয় ১৫ বছরও। ওয়ারেন্টি ও গ্যারান্টির বিষয়টা ভালোভাবে বুঝে তারপর পণ্যটি কেনা উচিত। বর্তমানে বেশির ভাগ কোম্পানির রেফ্রিজারেটর কিস্তিতে কেনা যায়।

কত মাসের কিস্তি বা প্রতি মাসে কী পরিমাণ টাকা পরিশোধ করতে হবে, সেটা কেনার আগে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। ফ্রি ডেলিভারি ও ইনস্টলেশনের বিষয়টাও জানতে হবে। সার্ভিস সেন্টারের বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। যে ব্র্যান্ডের ফ্রিজটি কিনছেন, তার সার্ভিস সেন্টার আপনার শহরে রয়েছে কি না, সেটা আগে দেখে নিন। এসব বিষয় খোঁজখবর নিয়ে, জেনে-বুঝে কিনলে পরবর্তী সময়ে ঝামেলা এড়ানো সম্ভব।