বৃষ্টির এমন রূপ ৩৮ বছরে দেখেনি চট্টগ্রাম

 ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রাম শহরে ৩৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছিল। গতকাল রোববার এ বন্দর নগরে বৃষ্টি হয় ৩২২ মিলিমিটার

পানির জন্য ঘর থেকে বের হওয়া দায়। চকবাজার চেয়ারম্যানঘাটা এলাকা। চট্টগ্রাম, ৭ আগস্ট
ছবি: প্রথম আলো

বান্দরবান থেকে বরিশাল, চট্টগ্রাম থেকে হাতিয়া। পাহাড়ি এলাকা থেকে উপকূলীয় জনপদে একযোগে এমন প্রবল বর্ষা খুব কমই দেখা গেছে। সর্বশেষ ১৯৮৫ সালে বর্ষার এমন রূপ দেখা গিয়েছিল।

১৯৮৫ সালের ৯ জুলাই শুধু চট্টগ্রাম শহরে ৩৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছিল। উপকূলের অন্য জেলাগুলোতেই ওই দিন ৩০০ মিলিমিটারের ওপরে বৃষ্টি হয়। দীর্ঘ ৩৮ বছর পর আবারও গতকাল রোববার এমন প্রবল বৃষ্টি হলো চট্টগ্রামে।  রোববার চট্টগ্রামে ৩২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। আর সোমবার বান্দরবানের বৃষ্টি চট্টগ্রামকেও ছাড়িয়ে গেছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ওই পার্বত্য জেলায় ৩৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে।

চট্টগ্রামে আগের দিনের চেয়ে সোমবার বৃষ্টিপাত কমেছে। সেটিও সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৪ মিলিমিটার। বরিশাল ও খুলনায় প্রায় একই ধারায় বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। তবে সোমবার রাজধানীসহ দেশের মধ্যাঞ্চলে সকাল থেকে ঝিরিঝিরি ধারায় বৃষ্টি ঝরলেও, পরিমাণের দিক থেকে চট্টগ্রাম বা উপকূলীয় এলাকা থেকে ছিল অনেক কম। সারা দিনে ঢাকায় ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে এই পরিস্থিতিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর দিয়েছে। সারা দেশে আগামী দুই-তিন দিন বৃষ্টি কমতে পারে। এরপর শনিবার থেকে আবারও প্রবল ধারায় বৃষ্টি শুরু হতে পারে।

খাবারের দোকানে জমেছে হাঁটুসমান পানি। এর মধ্যেই চলছে খাওয়াদাওয়া। চকবাজার ফুলতলা এলাকায়।চট্টগ্রাম, ৭ আগস্ট
ছবি: প্রথম আলো

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, গত মে, জুন ও জুলাই মাসে বাংলাদেশ থেকে শুরু করে ভারত হয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে রীতিমতো খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। জুলাইতে মৌসুমি বায়ু আসার পরেও বৃষ্টির দেখা পাওয়া যায়নি; বরং জুলাইয়ে অর্ধেক সময় জুড়ে দেশের কোথাও না কোথাও তাপপ্রবাহ ছিল। টানা ওই উষ্ণতার কারণে উল্টো প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। সাগর ও নদীর পানি উত্তপ্ত হয়ে মেঘ বেড়ে যায়। ফলে গত রোববার থেকে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. বজলুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, মৌসুমি বায়ু গত দুই-তিন দিন বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। চট্টগ্রামে এর আগে ১৯৮৫ সালের জুলাই মাসে বর্ষা এতটা প্রবল হতে দেখা গেছে। আগামী কয়েক দিনে বৃষ্টি কমতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী শনিবার থেকে আবারও বৃষ্টি বাড়তে পারে।    

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, মঙ্গলবার দেশের বেশির ভাগ এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ভারী বৃষ্টির সঙ্গে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিতে দমকা হাওয়া বইতে পারে। অতি ভারী বৃষ্টির ফলে চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও পাহাড়ধসের আশঙ্কার কথাও বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

জমে থাকা পানিতে দাঁড়িয়েই চলছে সবজি বেচাকেনা। চকবাজার কাঁচাবাজার এলাকা । চট্টগ্রাম, ৭ আগস্ট
ছবি: প্রথম আলো

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ১৯৮৩ সালের ৪ আগস্ট চট্টগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি ঝরেছে। ওই দিন সেখানে ৫১১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। একই বছরের ৫ জুলাই চট্টগ্রামে ৪০৭ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরে। এরপর ১৯৮৫ সালের ৯ জুলাই ৩৭৪ ও ১৯৮৮ সালের ৮ জুলাই ৩০৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এরপর চলতি বছর রোববার চট্টগ্রামে ৩২২ মিলিমিটার এবং সোমবার বান্দরবানে ৩৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।