নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে রোববার দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেনছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে রোবাবার দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট রাত ১টা ৪০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সফরসূচি অনুযায়ী, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। এছাড়া তিনি একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক এবং গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। ভাষণে তিনি বিগত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারমূলক উদ্যোগ, ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার তুলে ধরবেন।

সফরসঙ্গী হিসেবে ছয়জন রাজনৈতিক নেতা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রয়েছেন। তাঁরা হলেন: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের ও জামায়াত নেতা নকিবুর রহমান তারেক এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনিম জারা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বছরের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির সভাপতিত্বে ‘হাই লেভেল কনফারেন্স অন দ্য সিচুয়েশন অব রোহিঙ্গা মুসলিমস অ্যান্ড আদার মাইনোরিটিস ইন মিয়ানমার’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এটি জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রথমবারের মতো এমন একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক।

উড়োজাহাজে ওঠার আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জে অপেক্ষা করেন প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী রাজনীতিবিদেরা
ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

এই বৈঠক থেকে কার্যকর সমাধান উদ্ভাবনের জন্য গত মাসে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক অংশীদার ও রোহিঙ্গা প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অধ্যাপক ইউনূসের প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে, যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সর্বসম্মতিক্রমে সমর্থন পেয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা ২৫ সেপ্টেম্বর যুবকদের জন্য কর্মপরিকল্পনার ৩০তম বার্ষিকী উপলক্ষে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকেও অংশ নেবেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের শান্তি ও নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং মানবাধিকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরবেন। ভাষণে তিনি শান্তিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন, নিরাপদ অভিবাসন, অবৈধ অর্থপাচার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠার মতো বিষয়ও তুলে ধরবেন।

সফরকালে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এবং বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনও কমনওয়েলথ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সভা, পিসবিল্ডিং কমিশন মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠক, ‘জি-৭৭ ও চীন’ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক, নারী-শান্তি ও নিরাপত্তা ফোকাল পয়েন্ট নেটওয়ার্ক, ওআইসি বার্ষিক সমন্বয় সভা, বিমসটেক, সিকা এবং এলডিসি মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

প্রধান উপদেষ্টা ২ অক্টোবর দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।