এসিআই-ইয়ানমার হারভেস্টার: সহজ করে কৃষকের জীবন

এসিআই-ইয়ানমার হারভেস্টার দিয়ে সযত্নে ফসল তোলার কাজ করা যায়। কৃষকের সুবিধা হয়ছবি: সংগৃহীত

কৃষিকাজ মানেই রোদ-বৃষ্টি-ঘাম। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলানো। বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষের ইতিবাচক প্রভাব আমরা দেখতে পাই কৃষিকাজেও। আগে কৃষিকাজ মানেই ছিল শারীরিক শ্রম। প্রযুক্তি এখন জীবনকে করেছে সহজ। কৃষিকাজের ধাপে ধাপে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে নানা ধরনের যন্ত্র। এসব যন্ত্রের সহযোগিতায় কৃষকের জীবন হয়েছে ঝামেলাহীন ও সহজ। তেমনই একটি যন্ত্র হলো ‘হারভেস্টার’।

হারভেস্টার একটি বাহন, যা দিয়ে সযত্নে ফসল তোলার কাজ করা যায়। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কৃষক যে ধান, গম বা ফসল চাষ করেন; সেটির সফলতাই হলো ফসল ঘরে তোলা। সেই সোনার ফসল ঘরে তোলার কাজটা আরো সহজ করে দিয়েছে ইয়ানমার হারভেস্টার। এটির সাহায্যে খুব সহজেই এখন মানুষ একরের পর একর ধান ঘরে তুলতে পারছেন।

২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে ধান কাটার শ্রমিক পাচ্ছিলেন না জমির মালিকেরা। অধিকাংশ জমির ধান পেকে ঝরে যাচ্ছিল। সেই সময় হারভেস্টার বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে আসে। বাংলাদেশে হারভেস্টার ব্যবসায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এসিআই মোটরস। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে আসে ইয়ানমার কম্বাইন হারভেস্টার।

অত্যাধুনিক জাপানি প্রযুক্তির এ হারভেস্টার দিয়ে ঘণ্টায় প্রায় এক একর জমির ধান বা গম কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দী করা যায়। এতে করে প্রতি একরে জ্বালানি খরচ হয় মাত্র ৮ থেকে ৯ লিটার। এই হারভেস্টারে রয়েছে ছয় শ কেজির বেশি ধানের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ট্যাংক। ইয়ানমার ডিজেল ইঞ্জিন ৭০ হর্স পাওয়ারবিশিষ্ট। কাটার পর ধানের খড় পুরোটাই আস্ত থাকে। জমিতে পানি উঠলে আতঙ্কের কিছু নেই। কাদা জমিতে এবং নুয়ে পড়া ধান ও গম কাটতে পারে এসিআই-ইয়ানমার হারভেস্টার। অন্যান্য হারভেস্টারের চেয়ে ইয়ানমার হারভেস্টারে থ্রেশিং ড্রাম ও ফ্যান বেশি থাকায় ধানমাড়াই ও ঝাড়াই হয় পরিষ্কারভাবে।

যেকোনো যন্ত্র ব্যবহার মানেই থাকে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে ইয়ানমার হারভেস্টারে রয়েছে ছয়টি বিশেষ সেন্সর। সার্ভিস চার্ট অনুযায়ী নিয়মিত সার্ভিস করালে পাঁচ বছর পর্যন্ত কোনো জটিলতা ছাড়াই ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া ‘এসএআর সিস্টেম’ ইয়ানমার হারভেস্টারের বড় সুবিধা। যেহেতু ধান কাটার জন্য বিভিন্ন জায়গায় হারভেস্টার পাঠাতে হয়, তাই মালিক ঘরে বসেই মোবাইলে সহজেই জানতে পারবেন তাঁর হারভেস্টারের অবস্থান। অবগত থাকতে পারবেন কতটুকু জমির ধান কাটা হচ্ছে, কতক্ষণ সময় ধরে চলল, কত ঘণ্টা ধরে চলছে মেশিন কিংবা মেশিনের কোনো সমস্যা হলো কি না, ইত্যাদি। ফলে হারভেস্টারের মালিক ঘরে বসেই থাকতে পারেন দুর্ভাবনাহীন ও নিশ্চিন্ত।

দিনাজপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মো. ফরিদ হারভেস্টার ব্যবহার করে খুবই খুশি। তিনি বলেন, ‘যখন ফসল তোলার সময় হয়, তখন শ্রমিক পাওয়া যায় না। এত এত ধান জমি থেকে তুলতে শ্রমিকের ভোগান্তি ছিল যুগ যুগ। অনেক সময় ধান ২-১ দিন দেরি করে তুললে বৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। এই হারভেস্টার কম সময়ে অনেক বেশি ধান কাটে, ফলে ধান বা গম কাটার জন্য আগে যে ভোগান্তি পোহাতে হতো তা থেকে রেহাই পেয়েছি। ইয়ানমার হারভেস্টার আমার জীবকে সহজ করে দিয়েছে।’

ইয়ানমার হারভেস্টার ব্যবহার করেন আরেক কৃষি উদ্যোক্তা আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘কৃষকের সময় কম, পরিশ্রম কম লাগে হারভেস্টারে। হারভেস্টারের মাধ্যমে খুব সহজেই কম খরচে কয়েক একর ধান ঘরে তোলা যায়। আবার খেতে যদি পানি উঠে যায় সেখানেও কোনোরকম ঝামেলা ছাড়া ধান তোলা যায়। আগে যখন আমরা অন্যান্য হারভেস্টার ব্যবহার করতাম, তখন দেখতাম অন্য হারভেস্টার দিয়ে যেখানে ২০ বিঘা ধান কাটা যায়, সেখানে ইয়ানমার হারভেস্টার দিয়ে কাটা যায় ২৫ থেকে ৩০ বিঘা। ঝড়–বৃষ্টির আগে কোনোরকম ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া এই হারভেস্টারে আমরা খুব সহজেই ঘরে ধান তুলতে পারি।’

ইয়ানমার হারভেস্টার ব্যবহারে যন্ত্রাংশের ঝামেলা প্রতিরোধে দিনাজপুরেই আছে এর তিনটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। দিনাজপুরের রহমান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. শাহিনুর বলেন, ‘এসিআইয়ের পণ্য উচ্চ মানসম্পন্ন। তারপরও সব ধরনের যন্ত্রাংশ আমার কাছে আছে। ভালো মানের হওয়ার কারণে অন্য হারভেস্টাররাও আমার কাছ থেকে যন্ত্রাংশ নিয়ে যায়।’

যন্ত্রাংশ ঠিক করার এমন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সার্বক্ষণিক এসিআই ভ্যানের সুবিধা পাচ্ছেন কৃষকেরা। ফলে থাকছেন নিশ্চিন্ত।