কিশোর গ্যাং ঠেকাতে পরিবার থেকে সচেতন হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে ভবন নির্মাণে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা বজায় রাখা এবং খাদ্য মজুতের বিরুদ্ধে কঠোর হতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চার দিনব্যাপী বার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ৩ মার্চছবি: পিআইডি

সন্তানসন্ততিদের প্রতি নজরদারি বাড়াতে প্রতিটি পরিবারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কারও ছেলেমেয়ে যেন কিশোর গ্যাং, জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়তে না পারে। শুধু গ্রেপ্তার করে লাভ নেই, সচেতন হতে হবে। তাই গোড়া থেকে ধরতে হবে, পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী আজ রোববার তাঁর কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চার দিনব্যাপী বার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে সারা দেশে ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড (ইমারত নির্মাণ বিধিমালা) বজায় রাখা এবং আসন্ন পবিত্র রমজানে খাদ্য মজুত ও ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর হতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন।

সমাজে কিশোর গ্যাং সমস্যা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাবে, পড়াশোনা করবে—সেই সময় এই সমস্যাটা দেখা দেয়। এটি কোভিড-১৯ চলার সময় বিস্তার লাভ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সময়ই এটি সবচেয়ে বেশি সামনে এসেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ জন্য এলাকাভিত্তিক নজরদারি বাড়াতে হবে। যারা লেখাপড়া করবে, তারা তা না করে কেন বিভিন্ন অসামাজিক কাজে জড়াবে? এ ব্যাপারে কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকদের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবকদের নিয়ে সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। যেন কারও ছেলেমেয়ে এ ধরনের কিশোর গ্যাং, জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়তে না পারে। সে জন্য প্রতিটি পরিবারকে নিজের সন্তানসন্ততিদের প্রতি নজরদারি বাড়াতে হবে।

প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধের দিকে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পরিবারগুলোকে একটু সচেতন করতে হবে, শুধু গ্রেপ্তার করে বা ধরে লাভ নেই। সে ক্ষেত্রে সেখানে থাকা বড় অপরাধীদের সংস্পর্শে এসে এরা আরও বড় কোনো ধরনের অপরাধ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যেতে পারে। সে কারণে গোড়া থেকেই আমাদের ধরতে হবে এবং পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয়ে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সম্মেলন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ফটোসেশনে অংশ নেন। ঢাকা, ৩ মার্চ
ছবি: পিআইডি

ইমারত নির্মাণ বিধিমালা বজায় রাখার নির্দেশ

সারা দেশে ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড (ইমারত নির্মাণ বিধিমালা) বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষ করে মাঠপর্যায়ের প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে সঠিকভাবে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কি না, তা সবাইকে লক্ষ রাখতে হবে। শুধু সিটি করপোরেশন এলাকায় নয়, দেশের অন্যান্য স্থানেও এটি অনুসরণ করতে হবে। তিনি বলেন, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত আলো–বাতাস সরবরাহের ব্যবস্থা, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা—এগুলো রেখেই ভবন নির্মাণ করতে হবে।

মূল্যস্ফীতি ১০ ভাগের নিচে

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশের উন্নয়ন করছে, পাশাপাশি দেশের মানুষের অধিকারও নিশ্চিত করা দরকার। তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ অতিমারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়েছে। পৃথিবীতে এখন এমন দেশও রয়েছে, যেখানে মূল্যস্ফীতি ৪০ ভাগে উঠে গেছে। বাংলাদেশও এর থেকে দূরে নয়, যদিও বাংলাদেশে এখনো মূল্যস্ফীতি ১০ ভাগের নিচে রয়েছে। কিন্তু তার পরও সমস্যা রয়ে গেছে। আমাদের সব সময় লক্ষ রাখতে হবে আমাদের বাজার পরিস্থিতি কেমন রয়েছে।’

মজুতদারি ঠেকাতে নজর দেওয়ার নির্দেশ

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাস আসছে। এ সময় কিছু কিছু ব্যবসায়ী সব সময় মজুতদারি করে, পণ্যের দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটতে চায়। সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে, কেননা এটি আমাদের আশু করণীয় কাজ।’ তিনি বলেন, ‘কোথাও যেন ভোক্তাদের কোনোরকম হয়রানির শিকার হতে না হয়। আমাদের দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। পরনির্ভরশীলতা কমাতে হবে, আর এটা যে আমরা করতে পারি, সেটা কিন্তু আমরা অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণ করেছি। সেদিকে একটু নজর দেওয়া একান্তভাবে দরকার।’

শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটি বিষয় হচ্ছে সরবরাহ। সেটা নিয়েও সমস্যার সৃষ্টি হয় অথবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। কেউ কেউ মজুতদারি করে। পণ্য পচিয়ে ফেলবে, তবু বাজারে ছাড়বে না। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

খাদ্যে ভেজাল দেওয়া প্রতিরোধেও জেলা প্রশাসকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোজা এলেই এই সমস্যাগুলো বেশি পরিমাণে দেখা দেয়। এগুলোর দিকেও নজর দেওয়া একান্তভাবে দরকার।

’৭৫-এর পর সবচেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে ভোট দিয়ে পুনরায় সরকার পরিচালনার সুযোগ করে দেওয়ায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ‘আমি ১৯৭৫ সালের পর যে নির্বাচনগুলো প্রত্যক্ষ করেছি এবং অংশ নিয়েছি, তার মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবচেয়ে সুষ্ঠু, অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যভাবে অনুষ্ঠানে মাঠপর্যায়ের প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাঁদের দায়িত্ব পালনের জন্য ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

সরকারের উন্নয়নকাজে ‘পরশ্রীকাতরতায়’ ভুগে জনগণের সামনে সরকারের অবাধ তথ্যপ্রবাহের সুযোগ নিয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন টক শোতে তা বিকৃতভাবে উপস্থাপনেরও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাগত বক্তব্য দেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়াও বক্তব্য দেন।

বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম এবং জেলা প্রশাসকদের পক্ষে বক্তব্য দেন চট্টগ্রামের ডিসি আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও গাইবান্ধার ডিসি কাজী নাহিদ রসুল।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্ভাবন, সেবা এবং সার্বিক উন্নয়নের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।