সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাউকে না কাউকে ছাড় দিতে হবে: সুজন

সুজনের মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। শাহবাগ, ঢাকা, ৫ আগস্ট
ছবি: সাজিদ হোসেন

আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনীতিতে যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে কোনো সমঝোতা না হলে সামনের দিনগুলোতে আরও সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হতে পারে।

এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বলেছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে দলগুলোর কাউকে না কাউকে ছাড় দিতে হবে এবং সংলাপে বসতে হবে।

রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আজ শনিবার সুজনের এক মানববন্ধনে এসব কথা বলা হয়। রাজনৈতিক সংকট দূর করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার আহ্বানে সারা দেশে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সুজন।

মানববন্ধনে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান সমস্যাটা দলীয় সরকার বনাম তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়। এটা যদি ইস্যু হয়, তাহলে কোনো দিন সমঝোতা হবে না। এখানে কাউকে না কাউকে ছাড় দিতে হবে। সমস্যা ভোটাধিকার। দেশের মানুষ বহুদিন থেকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত।

মূল সমস্যায় নজর দিয়ে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতার আহ্বান জানিয়ে সুজন সম্পাদক বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কী কী শর্ত প্রয়োজন, তা দেখতে হবে। নির্বাচন প্রক্রিয়া সঠিক হতে হবে। নির্বাচন কমিশন, সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা অপরিহার্য। গণমাধ্যম এবং নাগরিক সমাজ যেন নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য।

বিদেশিদের হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ভোটাধিকার এগুলো কোনো দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। আন্তর্জাতিক আইনে, সর্বজনীন মানবাধিকার সনদসহ অনেকগুলো সনদে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশ এগুলো রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। তাই যেকোনো রাষ্ট্রই বাংলাদেশকে দায়বদ্ধ করতে পারে।

মানববন্ধনে সুজনের সহসম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, দেশের নেতৃত্বে এখন অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন। তাঁরা যেন দেশের কথা চিন্তা করে একটি সমাধানের পথ দেখান।

মানববন্ধনে বলা হয়, আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক। কিন্তু বিরাজমান রাজনৈতিক বাস্তবতা অংশগ্রহণমূলক বা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য অনুকূল নয়। নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলগুলো পরস্পর বিরোধী অবস্থানে অনড়। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, রাজপথ ততই উত্তপ্ত হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। রাজপথে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।

এই পরিস্থিতিতে সুজন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়া কী ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা নির্ধারণ, নির্বাচনের পর বিজয়ী ও বিরোধী দলের সমঝোতা ও ভূমিকা কী হবে, তা ঠিক করার আহ্বানও জানিয়েছে তারা। রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা স্মারকে কিছু বিষয়ে অঙ্গীকারের আহ্বান জানিয়েছে সুজন। সেগুলো হলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে শক্তিশালী করা এবং দলীয়করণের প্রভাবমুক্ত রাখা।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলা, বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক, কল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা। যেকোনো রাষ্ট্রীয় সংকট মোকাবিলায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনা এবং প্রয়োজনে নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাসিমা আক্তার জলি, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক ইসমাইল সম্রাট প্রমুখ।