বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ২০০৯ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা বাস্তবায়নে একটি আইন প্রণয়ন করার কথা। কিন্তু গত ১৪ বছরে এই আইনের খসড়া নিয়ে যতটুকু চর্চা হয়েছে, অগ্রগতি হয়েছে খুব কম। বৃহস্পতিবার এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মানবাধিকার কমিশনের কনফারেন্স কক্ষে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম আয়োজিত ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২২: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০২১’–এর খসড়া তৈরি করে আইনমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনও আলাদা আলাদা খসড়া তৈরি করেছে। এখন সংগঠনগুলো জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে দায়িত্ব নিতে বলছে। তাই কমিশনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ও মতামত নিয়ে পূর্ণাঙ্গ খসড়া প্রণয়ন করে তা মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে। তারপর আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় তা জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে। আইনে সাইবার হয়রানির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়েও তিনি গুরুত্ব দেন।
তবে সভায় এর আগে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের প্রস্তাবিত আইনের খসড়াটি নিয়ে আলোচনা করা হয়। খসড়ায় কোন কোন বিষয়ে অসংগতি আছে, তা নিয়ে আলোচকেরা কথাও বলেন। ফোরামের সচিব নাছিমা আক্তার আইনের খসড়ার বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করেন।
এডুকো বাংলাদেশের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহীন আক্তার।
আলোচনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় কোন কোন জায়গায় অসংগতি আছে, তা তুলে ধরেন। এতে পুলিশকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কমিটির হাতে বিচারিক যে ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তা দিলে হিতে বিপরীত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আইন প্রণয়নের সঠিক প্রক্রিয়া মানার জন্য এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করার বিষয়টিতেও তিনি গুরুত্ব দেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অবৈতনিক সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক আইনে শুধু নারী ও শিশুদের কথা না বলে হিজড়া, ট্রান্সজেন্ডারসহ কেউ যাতে বাদ না পড়ে, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেন।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকাশ কান্তি চৌধুরী প্রস্তাবিত আইনের নামটি স্পষ্ট করার কথা বলেন। তিনি বলেন, আইনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষায় করার কথা। আইনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির বিষয়টি যাতে বাদ না যায়, সেদিকে তিনি গুরুত্ব দেন।
মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ উইমেন জাজেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট তানজিনা ইসমাইল, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব কাজী আরফান আশিক, কমিশনের উপপরিচালক এম রবিউল ইসলাম, সুস্মিতা পাইক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের আইনজীবী ফাহিমদা আক্তার প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।