কেউ মিথ্যা মামলা করলে সাজার বিধান যুক্ত হচ্ছে

জাতীয় সংসদ ভবন
ফাইল ছবি

সাইবার নিরাপত্তা বিলে নতুন একটি ধারা সংযোজনের সুপারিশ করেছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সেটি হলো কেউ মিথ্যা মামলা করলে সেটিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে সাজার ব্যবস্থা রাখা। এ ছাড়া বিলের ৩২ নম্বর ধারা বাদ দেওয়া এবং কয়েকটি ধারায় শব্দগত পরিবর্তন আনারও সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

সাইবার নিরাপত্তা বিল–২০২৩ পরীক্ষা করে আজ রোববার জাতীয় সংসদে প্রতিবেদন দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। সেখানে এসব সুপারিশ করা হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এসব সুপারিশ চূড়ান্ত করে সংসদীয় কমিটি।

বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার এ–সংক্রান্ত বিল সংসদে তোলা হয়। সংসদের চলতি অধিবেশনেই (এ সপ্তাহে) বিলটি পাস হতে পারে।

সংসদীয় কমিটি এই বিলে মিথ্যা মামলা ও অভিযোগ দায়েরের অপরাধ ও দণ্ড নিয়ে নতুন ধারা যুক্ত করার সুপারিশ করেছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের অভিপ্রায়ে এই আইনের কোনো ধারায় মামলা বা অভিযোগ দায়ের করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ না জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান, তাহলে তা হবে একটি অপরাধ। এই অপরাধে অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি এবং যিনি অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন, ওই ব্যক্তি মূল অপরাধটির জন্য যে দণ্ড নির্ধারিত রয়েছে, সে দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

যদি এই আইনের একাধিক ধারায় কোনো মামলা বা অভিযোগ করেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট ধারায় বর্ণিত অপরাধগুলোর মধ্যে মূল অপরাধের জন্য যেটার দণ্ডের পরিমাণ বেশি হয়, সেটাই দণ্ডের পরিমাণ হিসেবে নির্ধারণ করা যাবে।

বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল মিথ্যা মামলা ও অভিযোগ দায়েরের অপরাধে অভিযোগ গ্রহণ ও মামলার বিচার করতে পারবে।
এ ছাড়া বিলের ২১ ধারায় শব্দগত পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই ধারায় মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রোপাগান্ডা ও প্রচারণাসংক্রান্ত অপরাধের কথা বলা আছে। এখানে ‘প্রোপাগান্ডার’ স্থলে ‘বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক’ শব্দ প্রতিস্থাপনের সুপারিশ করেছে কমিটি।

বিলের ৩২ ধারা বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই ধারায় অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের আওতাভুক্ত অপরাধ ও সাজার বিষয় যুক্ত করা হয়েছিল। ডিজিটাল মাধ্যমে কেউ অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টভুক্ত অপরাধ করলে তার সাজার বিধান করতে এটি যুক্ত করা হয়েছিল।

বিলের ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া আছে পুলিশকে। এখানে সংশোধনী এনে বলা হচ্ছে, এই ধারায় সাব ইন্সপেক্টর পর্যায়ের কর্মকর্তার জায়গায় পুলিশ পরিদর্শক পর্যায়ের কর্মকর্তা বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তার করতে পারবেন।

বিলের ৮ ধারায়ও সংশোধনী আনা হচ্ছে। ডিজিটাল মাধ্যম থেকে তথ্য–উপাত্ত অপসারণ ও ব্লক করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এই ধারায়। এখানে আগে বলা ছিল, যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘প্রতীয়মান’ হয় ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের বা দেশের কোনো অংশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ণ করে বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণার সঞ্চার করে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওই তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ব্লক করার জন্য মহাপরিচালকের মাধ্যমে বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবে।

এখানে ‘প্রতীয়মান’ শব্দের জায়গায় ‘তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ সাপেক্ষে, বিশ্বাস করিবার কারণ থাকে যে’ প্রতিস্থাপন করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।