মধ্যস্থতা নিয়ে আদানির প্রস্তাবে রাজি নয় পিডিবি

বিদ্যুৎ খাতপ্রতীকী ছবি

ভারতীয় কোম্পানি আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি। সিঙ্গাপুরের সালিসি আদালতের মাধ্যমে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে আদানি। তবে এতে রাজি নয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

পিডিবি সূত্র বলছে, আদানির সঙ্গে তাদের বিদ্যুৎ কেনার চুক্তির প্রক্রিয়া তদন্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এতে অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে চুক্তি পর্যালোচনা কমিটি। প্রমাণ সংগ্রহে আরও মাসখানেক সময় লাগবে।

সূত্রমতে, গত সরকারের সময় রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে একতরফা চুক্তির সুযোগ নিয়েছে আদানি। এ চুক্তির বৈধতা নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট মামলা বিচারাধীন। আদালতের আদেশে তদন্ত চলছে। এতে আদানিকে দেশি-বিদেশি আদালতে জবাবদিহি করার মতো তথ্য-প্রমাণ আসছে। এসব প্রমাণ আদালতে জমা দেওয়া হবে। এ কারণে মধ্যস্থতার জন্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগপ্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে অনুরোধ করে সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের রেজিস্ট্রারের কাছে ২ নভেম্বর একটি চিঠি পাঠিয়েছে পিডিবি।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিরোধের ধরন অত্যন্ত জটিল। আর্থিক পরিমাণও অনেক বড়। আদানির অনুরোধ বিবেচনায় নিয়েই বর্তমান পরিস্থিতি এই বিরোধ মধ্যস্থতায় পাঠানোর জন্য উপযুক্ত নয় বলে মনে করছে পিডিবি। এতে দুই পক্ষের সময় ও অর্থের অপচয় হতে পারে।

এতে আদানিকে দেশি-বিদেশি আদালতে জবাবদিহি করার মতো তথ্য-প্রমাণ আসছে। এসব প্রমাণ আদালতে জমা দেওয়া হবে। এ কারণে মধ্যস্থতার জন্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগপ্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে অনুরোধ করে সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের রেজিস্ট্রারের কাছে ২ নভেম্বর একটি চিঠি পাঠিয়েছে পিডিবি।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশে কমিটি গঠিত হয়েছে। এসব অভিযোগ আদানির আবেদনের সঙ্গে সম্পর্কিত। গত ৫ অক্টোবর চিঠি দিয়ে এটি আদানিকে জানানো হয়েছে এবং তদন্তের জন্য বাড়তি সময় চাওয়া হয়েছে।

বিরোধ নিয়ে সালিসি আদালতে যাওয়ার আগে প্রথম ধাপ হচ্ছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠক; যাতে কোনো সমাধান আসেনি। দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে দুই পক্ষের সমঝোতায় মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করা; সিঙ্গাপুরে যেটি নিয়োগের প্রস্তাব করেছে আদানি।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, আদানির চুক্তিতে দুর্নীতি তদন্তে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। জাতীয় চুক্তি পর্যালোচনা কমিটি কাজ করছে। আদালতের নির্দেশনায় কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হবে। তাই এখন মধ্যস্থতার সুযোগ নেই, আদালত অবমাননা হতে পারে। বকেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বকেয়া আগের সরকারের সময় থেকে জমেছে। অধিকাংশ ইতিমধ্যে শোধ করা হয়েছে, হচ্ছে। এরপরও বিদ্যুৎ বন্ধ করা হলে তা হবে দুঃখজনক।

বিরোধের বাইরে থাকা এ পাওনা পরিশোধে পিডিবি ব্যর্থ হলে চুক্তি অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থগিত করার অধিকার আছে আদানির। প্রসঙ্গত, গত বছর একবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করেছিল আদানি।

সরবরাহ বন্ধের কথা জানিয়ে চিঠি

এদিকে বকেয়া শোধ না হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হবে জানিয়ে গত ৩১ অক্টোবর পিডিবিকে চিঠি দিয়েছে আদানি। গত বছরের নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ২০টি চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় ওই চিঠিতে। তাতে বলা হয়, আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়ার অর্থ শোধ করা না হলে ১১ নভেম্বর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থগিত করতে বাধ্য হবে তারা। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থগিত থাকার সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) পাবে আদানি।

আদানির চিঠিতে বলা হয়, এর আগে গত ২৭ অক্টোবর পাঠানো চিঠিতে ৪৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার বকেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ কোটি ২০ লাখ ডলার পাওনা নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। বিরোধের বাইরে থাকা এ পাওনা পরিশোধে পিডিবি ব্যর্থ হলে চুক্তি অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থগিত করার অধিকার আছে আদানির। প্রসঙ্গত, গত বছর একবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করেছিল আদানি।

চুক্তি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন জমা

ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যে নির্মিত আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে পিডিবি। এ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২৫ বছর ধরে কিনবে বাংলাদেশ।

আদানির চুক্তি পর্যালোচনা করে গত রোববার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে জাতীয় চুক্তি পর্যালোচনা কমিটি। এরপর মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সদস্য ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ফ্যাকাল্টি অব ল অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সের অর্থনীতির অধ্যাপক মোশতাক হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, আদানির চুক্তির অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে মাসখানেকের মধ্যে শক্ত প্রমাণ সামনে আসবে। এসব প্রমাণ নিয়ে দেশে–বিদেশে আইনি প্রক্রিয়া নেওয়া যাবে।