পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে নির্বাচনী ইশতেহারে রূপরেখা দাবি

‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ১৯৯৭ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া গতিশীল করার লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে সংলাপ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে আলোচকেরা। দ্য ডেইলি স্টার ভবন, ফার্মগেট, ঢাকাছবি: প্রথম আলো

শাসকগোষ্ঠীর আন্তরিকতার অভাবে গত ২৬ বছরেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হয়নি। পাহাড়ের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের মামলা–হামলা, ভয়ভীতি সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়াচ্ছে। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করার রূপরেখা থাকতে হবে।

পার্বত্য চুক্তির ২৬ বছর উপলক্ষে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ১৯৯৭ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া গতিশীল করার লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে সংলাপ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে আলোচকদের কথায় উঠে এল এসব বিষয়। আজ মঙ্গলবার ফার্মগেটে দ্য ডেইলি স্টার ভবনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল কেপাং ফাউন্ডেশন।

আলোচকেরা বলেন, ১৯৯৭ সালে যে দল সরকারে থাকা অবস্থায় চুক্তি হয়েছিল, সেই আওয়ামী লীগ ১৮ বছর ক্ষমতায় থাকলেও পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হয়নি। চুক্তি বাস্তবায়ন না করায় পার্বত্য এলাকায় ভূমি দখল, নারী নির্যাতন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও জাতিগত সংঘাতের মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। একই সঙ্গে নাশকতা সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলোর উত্থান ঘটেছে।

পাহাড়ের ভূমির বিরোধ নিষ্পত্তি হচ্ছে না উল্লেখ করে আলোচকেরা বলেন, কমিশনে ২২ হাজার ৪৬৮টি আবেদন জমা হলেও একটিও নিষ্পত্তি করা হয়নি। কমিশনের চেয়ারম্যান, রেজিস্ট্রার ও সচিব ঢাকায় বসে দাপ্তরিক কাজ সারেন। গত বছর ভূমিসংক্রান্ত ৪০টি সহিংসতা ও জুমচাষের ৩৫০ একর জমি পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হন ৪৪৮ জন। চুক্তি বাস্তবায়ন না করায় হতাশা, ভয়, নিরাপত্তাহীনতা ও অসন্তোষ নিয়ে বাস করছেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দাবি রাখতে হবে, এবার নির্বাচনী ইশতেহারে যেন পাবর্ত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে রূপরেখা থাকে। পাবর্ত্য এলাকার নিরাপত্তার জন্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিসহ কমিউনিটি পুলিশের ব্যবস্থা করতে হবে। যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প শুরুর আগে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের কথা শোনা ও এ ক্ষেত্রে তাঁদের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।

জাতীয় সংসদে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘুবিষয়ক সংসদীয় ককাসের সমন্বয়কারী মেসবাহ কামাল বলেন, একটি দেশে একটি জাতিগোষ্ঠীকে ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন উঠছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যে স্থবির অবস্থা, তার দায় আওয়ামী লীগ সরকার এড়াতে পারে না। এটি একটি রাজনৈতিক সমস্যা। একে রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। সেটা না হলে চুক্তি হওয়ার আগের অশান্ত অবস্থায় ফিরে যেতে পারে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল।

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য চঞ্চু চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে দাঁড়ি–কমার মাধ্যমেও বিভ্রান্ত করা হয়েছে। এমনভাবে চুক্তি করা হয়েছে যে প্রতিটি ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হতে হয়। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে এ চুক্তি বাস্তবায়নে সব রাজনৈতিক দলের সমর্থন প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের বন ও পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক জুমলিয়ান আমলাই। তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের মামলা–হামলা, ভয়ভীতি সারাক্ষণ তাড়া করছে। গণমাধ্যমে খবর পড়ে হয়তো আপনাদের মনে আর তেমন আঘাত লাগে না। তবে আমরা এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।’ নাগরিক সমাজের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের যদি দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে না করেন, তাহলে এই চুক্তি বাস্তবায়নে সংলাপ করতে সরকারকে চাপ দিন।’

কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সতেজ চাকমা, জান্নাতুল ফেরদৌসী, অজয় চাকমা, হরেন্দ্র নাথ সিংহ, তাজুল ইসলাম, জাহেদ আহসান প্রমুখ।