শুরু হচ্ছে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন

জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন পরিষদের ৪২তম বার্ষিক অধিবেশনের কর্মসূচি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় পরিষদের পক্ষ থেকে। বাঁ থেকে লিলি ইসলাম, বুলবুল ইসলাম, আতিউর রহমান, শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় ও লাইসা আহমদ লিসা। ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন, ঢাকা, ৬ মার্চছবি: আশীষ উর রহমান

রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় আয়োজন জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন শুরু হচ্ছে আগামী শুক্রবার, ৮ মার্চ। এবার উদ্বোধনী অধিবেশনে গাজায় ইসরায়েলের বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে মনুষ্যত্বের জয়গান করা হবে। থাকবে আরও বৈচিত্র্যময় আয়োজন।

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় তিন দিনের এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। এবার শিল্পগুরু মুস্তাফা মনোয়ারকে রবীন্দ্রপদক প্রদান করে সম্মাননা জানানো হবে। ‘নিশিদিন ভরসা রাখিস, ওরে মন, হবেই হবে’ বোধনসংগীত হিসেবে কবিগুরুর এই গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হবে।

আজ বুধবার দুপুর ১২টায় ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনের রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের এক সংবাদ সম্মেলনে এবারের আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। লিখিত বক্তব্যে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের ৪২তম অধিবেশন। এতে ঢাকাসহ সারা দেশের সম্মিলন পরিষদের ৮২টি শাখার সাত শতাধিক শিল্পী, সংগঠক ও সংস্কৃতিকর্মী অংশ নেবেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী জাহিদুর রহিমের প্রয়াণের পর ১৯৭৯ সালে তাঁর নামে ‘জাহিদুর রহিম স্মৃতি পরিষদ’ গঠন করে দেশব্যাপী রবীন্দ্রসংগীতচর্চার প্রসারের কাজ শুরু হয়। এরপর কবিগুরুর নাম যোগ করে সংগঠনের নামকরণ করা হয় ‘জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ’। সংগঠনের লক্ষ্য ছিল সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে বাঙালির জাতীয় সংস্কৃতির সুষ্ঠু বিকাশের ধারাকে বেগবান করতে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া। সংগঠনের নাম পরিবর্তন করা হলেও শিল্পী জাহিদুর রহিমের স্মৃতি রক্ষার্থে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ‘জাহিদুর রহিম স্মৃতি পুরস্কার’ প্রবর্তন করা হয়।

প্রথম পর্যায়ে কেবল ঢাকায়ই জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের অধিবেশনগুলো অনুষ্ঠিত হতো। সংগঠনের কার্যক্রমকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ১৯৮৪ সাল থেকে এক বছর ঢাকায় ও পরের বছর অন্য কোনো জেলায় সম্মেলনের অধিবেশন করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ঢাকায় অনুষ্ঠিত অধিবেশনে কিশোর ও সাধারণ বিভাগে সংগীত প্রতিযোগিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়
সংগৃহীত

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের নির্বাহী সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আতিউর রহমান বলেন, সংগঠনের সভাপতি সংগীতজ্ঞ সন্‌জীদা খাতুনের পরামর্শ নিয়ে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তাঁরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহুমাত্রিক কাজ ও ভাবাদর্শ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার রূপরেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। সম্মিলন পরিষদ এখন প্রতিবছর ঢাকা ও ঢাকার বাইরে যেসব জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করছে, তা রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় আয়োজনে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, এসব অধিবেশন কেবল সংগীত, আবৃত্তি বা নৃত্যচর্চার ভেতরই সীমিত থাকে না, সমাজের নানা রকম অসংগতি ও দুর্ভোগ থেকে মুক্তির উপায় নিয়েও এখানে আলোচনা করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেবল বাংলার কবি নন, তিনি ছিলেন বিশ্বকবি। বিশ্বমানবতার কল্যাণ ও সংকট নিয়ে তিনি ভেবেছেন। সে কারণে এবার ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বর্বর হামলার প্রতিবাদ করা হবে। এটা এবারের সম্মেলনের বড় সংযোজন।

সংবাদ সম্মেলনে এবারের আয়োজনের সাংগঠনিক বিষয়, প্রশিক্ষণ, প্রতিযোগিতা, অনুষ্ঠানের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন পরিষদের তিন সহসভাপতি। তাঁদের মধ্যে শিল্পী লাইসা আহমদ লিসা বলেন, কোভিডের পর এবার সম্মেলন উপলক্ষে সারা দেশে প্রতিযোগীদের নিয়ে বছরভর ব্যাপক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছিল। অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকেরা তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে সংগীত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ জন্য তরুণদের নিয়ে পরিষদের এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নিরন্তর চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

শিল্পী বুলবুল ইসলাম বলেন, এবারে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। সারা দেশ ঘুরে প্রশিক্ষণ পর্ব দেখে মনে হয়েছে,অনেক প্রতিভাবান নবীন শিক্ষার্থী রয়েছে। এবারের প্রতিযোগিতা পর্ব থেকে অনেক প্রতিভাবান নতুন শিল্পী বেরিয়ে আসবে। দর্শকদের জন্যও প্রতিযোগিতা উপভোগ্য হয়ে উঠবে।

লিলি ইসলাম বলেন, এ আয়োজন সারা দেশের শিল্পী, সংগঠক, সংস্কৃতিকর্মীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। এবার অনুষ্ঠানের গান, নৃত্য, গীতি ও নৃত্যালেখ্য পরিকল্পনা করা হয়েছে সমকালীন বিভিন্ন বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে। গানে থাকবে প্রেম ও বসন্ত, নারী দিবসে গীতি-আলেখ্য করা হয়েছে কবিগুরুর নারীদের নিয়ে লেখা গান নিয়ে। একইভাবে আবৃত্তির একটি বিশেষ পরিবেশনা থাকবে গাজায় ইজরায়েলি হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে। সব মিলিয়ে এবারের অনুষ্ঠানে প্রতিটি পরিবেশনা বৈচিত্র্যময় ও উপভোগ্য হতে যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের নির্বাহী সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আতিউর রহমান বক্তব্য দিচ্ছেন
সংগৃহীত

কর্মসূচি:

শুক্রবার ৮মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন পরিষদের নির্বাহী সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আতিউর রহমান। পরে থাকবে আজিজুর রহমান তুহিনের গ্রন্থনায় ‘সত্যের আনন্দ রূপ এই তো জাগিছে’ শীর্ষক গীতি-আলেখ্য।

এরপর বেলা আড়াইটা থেকে শুরু হবে কিশোর বিভাগের সংগীত প্রতিযোগিতা। সন্ধ্যায় নৃত্যালেখ্য ‘তুমি অনন্যা’। এই দিনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এ জন্য দিবসটিকে স্মরণ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতিনাট্যের নারী চরিত্রগুলো নিয়ে এই নৃত্যালেখ্য গ্রন্থনা করেছেন শিল্পী লিলি ইসলাম। এ ছাড়া থাকবে সংগীত, আলোচনা, পাঠ ও আবৃত্তি।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাধারণ বিভাগের সংগীত প্রতিযোগিতা শুরু হবে। বেলা সাড়ে তিনটায় প্রতিনিধি সম্মেলন, সাড়ে চারটায় হবে ‘রবীন্দ্র-শিক্ষাদর্শ ও বাংলাদেশের নবশিক্ষাযাত্রা’শীর্ষক সেমিনার। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক। সন্ধ্যায় গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় পিষ্ট মানবতার আর্তধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে ধরে পরিবেশিত হবে বিশেষ রবীন্দ্র গীতি–আলেখ্য ‘মানুষগুলো সব ইতিহাসের ছেঁড়া পাতা’। এটি গ্রন্থনা করেছেন প্রাবন্ধিক মফিদুল হক। এরপর থাকবে সংগীত ও নৃত্যানুষ্ঠান।

রোববার ১০ মার্চ সমাপনী অধিবেশন সকাল ৯টায় শুরু হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। পরে থাকবে সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে সনদ ও পুরস্কার প্রদান। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় থাকবে পাঠ, আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠান।