বিদেশে নারীদের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করার আহ্বান

ফাইল ছবি

মধ্যপ্রাচ্যসহ বিদেশে বাংলাদেশি নারীদের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সেন্টার ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন স্টাডিজের (সিডব্লিউসিএস) সভাপতি ইশরাত শারমিন।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সিডব্লিউসিএসের আয়োজনে এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও কানাডার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স শাখার উদ্যোগে নারী অভিবাসী শ্রমিকের অধিকারবিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।

মধ্যপ্রাচ্যসহ যেসব দেশে নারী কর্মী পাঠানোর বিষয়ে সরকার চুক্তি করছে, সেসব ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ইশরাত শারমিন। তিনি বলেন, নারী কর্মীদের সাপ্তাহিক ও বার্ষিক ছুটির বিষয়টি চুক্তিতে থাকা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া তাঁদের বেতন, স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য নিশ্চিতকরণে গুরুত্বারোপ করতে হবে। দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে তাঁদের আইনি কাঠামোয় এনে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

সিডব্লিউসিএসের সভাপতি আরও বলেন, ‘আমরা বিমানবন্দর পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা জানান, বিদেশফেরত অনেক নারী কর্মী এতটাই মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত যে বিমানবন্দরে কর্মরত কারও সঙ্গে কথা বলতে চান না। বিদেশে কাজ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার এই নারীদের কাউন্সেলিং করতে হবে। এই নারী কর্মীরা কম টাকা আনলে পরিবারের কাছে নিগৃহীত হন, আবার বেশি আনলেও পরিবার ও আশপাশের মানুষের বিরূপ মন্তব্যের শিকার হন। আমরা ১৬টি কমিউনিটিতে এ ব্যাপারে কাউন্সেলিং করেছি। আমাদের সমাজেও অনেকে আছেন, যাঁরা এসব নারী অভিবাসী শ্রমিক সম্পর্কে নানা রকম নেতিবাচক কথা বলেন। এ ক্ষেত্রে সবাইকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে।’

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিডব্লিউসিএসের নির্বাহী সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ‘আমরা নারী অভিবাসী কর্মীদের বিষয়ে ১৫টি সংবাদপত্র, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দরের তথ্য নিয়ে কাজ করেছি। এ বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৯৯ হাজার ৬৮৪ নারী অভিবাসী কর্মী হিসেবে গেছেন। নারী শ্রমিকদের ৬৬ শতাংশ সৌদি আরবে কাজ করতে যাচ্ছেন। কিন্তু সেখানে নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন তাঁরা।’

যেসব নারী কর্মীর মরদেহ দেশে আসছে, প্রতিটি মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে উল্লেখ করে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘প্রতিটি লাশের ময়নাতদন্ত করতে হবে। কারণ, আমরা দেখেছি, হার্ট অ্যাটাকের কথা বললেও তাঁদের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন আছে। ধর্ষণের শিকার কোনো অভিবাসী কর্মী সন্তান নিয়ে ফেরত এলে ওই সন্তানের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। ফিরে আসা নারী কর্মীদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংককে আরও প্রবাসীবান্ধব করে তুলতে হবে। অভিবাসন নিয়ে দ্রুত আইনের সংশোধনী পাস করা হোক।’

নিরাপদ অভিবাসনের জন্য আরও কয়েকটি পরামর্শ দেন ফরিদা ইয়াসমিন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অর্থনীতিতে নারীদের কাজের স্বীকৃতি প্রদান; সরকার যে পুনর্বাসন কৌশল নিয়েছে, তা দ্রুত পাস করা; দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন; গৃহকর্মীদের কাজকেও স্বীকৃতির মাধ্যমে দক্ষ কর্মী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা; ইউনিয়ন পরিষদে অভিবাসন কমিটি করা ও তথ্য দেওয়ার ব্যবস্থা; নারী কর্মীদের বিদেশে যাওয়ার খরচ শূন্যতে নামিয়ে আনা; যাঁরা ফেরত আসছেন, তাঁদের তথ্য সংযুক্ত করা; ট্রাভেল ভিসায় যাতে কেউ বিদেশে কাজ করতে না যান, সেটা নিশ্চিত করা এবং ১১ লাখ নারী কর্মীর জন্য আলাদা প্রকল্প হাতে নেওয়া।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সিনিয়র কো–অর্ডিনেটর প্রোগাম মহুয়া লিয়া ফলিয়া বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘অভিবাসনের বিষয়টি মানবাধিকারের লেন্স দিয়ে দেখতে হবে। কারণ, নারীদের চেয়ে পুরুষেরা ক্ষমতার জায়গাটা বেশি চর্চা করেন। আমাদের আইনগুলো কতটা নারীর অধিকারকে সমন্বিত করছে, আইনের আওতায় মানবাধিকারের দৃষ্টি থেকে অভিবাসী নারীর অধিকারকে প্রতিফলন করতে হবে।’

এসআইওয়াইবি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রুবিনা হোসেন জানান, শ্রমের মর্যাদা ও নারীর মর্যাদা গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।