‘কী কারণে জানি না, আমাদের হাত ও চোখের বাঁধন খুলে দেওয়া হলো’

ইয়েমেনের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে দেশটির আবিয়ান ও সাবওয়াহ্‌ প্রদেশে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা ছিল। সেখানে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে নিরাপত্তা পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য গিয়েছিলেন এডেনে জাতিসংঘের সাব–অফিসে নিরাপত্তা সমন্বয়কারীর দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ কে এম সুফিউল আনাম। কিন্তু তিনি ও তাঁর দলকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে। ৫৪৫ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর অস্ত্রধারীদের কাছ থেকে মুক্তি পান তিনি। সেই জিম্মিদশার রোমহর্ষক বর্ণনা তিনি দিয়েছেন প্রথম আলোর ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত একটি লেখায়। তাঁর সেই লেখাটি পাঠকদের জন্য তিন পর্বে প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ প্রকাশিত হলো তৃতীয় ও শেষ পর্ব।

দুবাই থেকে দেশের পথে। আগস্ট, ২০২৩ছবি: লেখকের কাছ থেকে পাওয়া

নিভে গেল আলো

কিন্তু ২০২২ সালও শেষ হয়ে এল, আমাদের বন্দিদশার তবু অবসান হলো না। আমরা অপহরণকারীদের কাছে জানতে চাইলাম, আমাদের মুক্তির কী হলো।

তারা বলল, ‘সবই ঠিক ছিল, কিন্তু তোমাদের সংস্থার অসহযোগিতার কারণে সব বানচাল হয়ে গেছে।’

তারা ‘তোমাদের সংস্থা’ বলতে ঠিক কোন কর্তৃপক্ষের কথা বোঝাতে চাইল, তা বোধগম্য হলো না। কারণ, তারা ‘আমাদের সংস্থা’ বলতে জাতিসংঘ, ইয়েমেন, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, সংযুক্ত আবর আমিরাত ইত্যাদি সবাইকে বোঝাত। পরিস্থিতি দেখে মনে হলো, মুক্তি সুদূরপরাহত। অনিশ্চয়তাবোধ, শঙ্কা, উদ্বেগ, হতাশা আমার মর্মের গভীরে কামড় দিয়ে বসল। মনে হলো, সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তের সর্বশেষ আলোটুকুও নিভে গেছে।

লক্ষ করলাম, অনিশ্চয়তা আর হতাশা শুধু আমাদের নয়, অপহরণকারীদেরও গ্রাস করেছে। তারা এখন নানা উপায়ে আমাদের থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার চেষ্টা করছে। একপর্যায়ে তারা আমাদের অপরাধী প্রমাণ করার চেষ্টা শুরু করল। আমাকে তারা আগেই ‘মার্কিন গুপ্তচর’ বলে সাব্যস্ত করেছিল, সে জন্য কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণের প্রয়োজন মনে করেনি। তাদের শুধু এটুকু প্রমাণ করলেই চলবে যে আমার সঙ্গের চারজন ইয়েমেনি আমার গুপ্তচরবৃত্তির সহযোগী। তাহলেই নিশ্চিন্তে আমাদের খতম করে দিতে পারবে।

আরও পড়ুন

তারা আমাদের তাদের কাজির আদালতে হাজির করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। সেটা ভয়াবহ এক সময়। সময়টা সম্ভবত ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস। আমার সঙ্গী চার ইয়েমেনিকে প্রায় প্রতিদিনই তিন থেকে চার ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের কথাগুলো লিখে নেওয়া হচ্ছে, ভিডিওতে ধারণ করা হচ্ছে। সেগুলো তাদের সদর দপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা এলে সে অনুযায়ী আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তদন্তকারী দলের নেতা একদিন আমাদের সোজাসাপ্টা বলে দিল, ‘তোমাদের ভার আমরা আর বহন করতে পারছি না। আমাদের সামনে এখন দুটো মাত্র রাস্তা খোলা: এক. অন্য কোনো পার্টির কাছে তোমাদের বিক্রি করে দেওয়া। দুই. তোমাদের বিষয়টা কাজির আদালতে পাঠানো। কাজি অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে হয় তোমাদের হত্যা করার সিদ্ধান্ত দেবেন, নয়তো ছেড়ে দিতে বলবেন। তবে মুক্তিপণ না পাওয়া পর্যন্ত কোনো বিদেশি নাগরিককে ছাড়া হবে না।’

২০২৩ সালের রমজান মাস এসে গেল, কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে তাদের ‘তদন্ত’ থামল না। এই দুর্বিষহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য প্রতিদিন ইফতার শেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে লাগলাম।

আরও পড়ুন

রমজানের পরপর আমাদের মুক্তিপ্রক্রিয়ার শেষ চেষ্টা হিসেবে তারা আরেকটি ভিডিও বার্তা রেকর্ড করল। সেটার মাধ্যমে তারা আলটিমেটাম দিয়ে দিল যে খুব দ্রুত মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত করা না হলে আমাদের পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। ভিডিওতে এই বার্তা পড়ে শোনাতে হলো আমাকেই।

ভিডিও বার্তাটি ধারণ করা হলো ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে। মিডিয়ায় প্রচার করা হলো জুনে। আমি ধরে নিলাম, তাদের চূড়ান্ত এই শর্ত না মানলে চার ইয়েমেনির মধ্যে তিনজনকে তারা মুক্তি দেবে, আর আমাকে ও মাজেনকে হত্যা করবে।

আমি শুধু ভাবছিলাম, আমার কী অপরাধ! কোন অপরাধে তারা আমাকে এমন গুরুদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কে তাদের এই অধিকার দিয়েছে? সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হলো, তারা এসব করছে পবিত্র ইসলাম ধর্মের নামে। আমি এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। নিজেকে ফাঁসির আসামির মতো মনে হতে লাগল। আদালতে ফাঁসির রায় পাওয়া অপরাধীরা হয়তো এমনটাই ভাবে। আমি সামরিক বাহিনীর একজন পেশাদার কর্মকর্তা। ৩০ বছরের সামরিক জীবনে বহু কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছি, কিন্তু জীবনে কখনো এতটা অসহায় বোধ করিনি। আমি যে পরিস্থিতিতে নিক্ষিপ্ত হয়েছি, অবশেষে সেটাকে আল্লাহর সিদ্ধান্ত হিসেবে মেনে নিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে আল্লাহর প্রার্থনায় মগ্ন হলাম।

ফিরে আসা। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ছবি: লেখকের কাছ থেকে পাওয়া

মরুভূমিতে তাঁবুর মধ্যে আমাদের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। আকাশে মার্কিন ড্রোনের আনাগোনা বেড়ে গেছে। তারা আমাদের অবস্থান জেনে যেতে পারে, এ আশঙ্কায় অপহরণকারীরা আমাদের তাঁবুর বাইরে পা রাখতে দেয় না। এমনকি প্রাকৃতিক প্রয়োজনেও এর ব্যতিক্রম হয় না।

অপহরণকারীরা এবার একটা নতুন প্রসঙ্গ তুলল। তারা বলল, আমার সহযাত্রী ইয়েমেনিরা এখান থেকে ছাড়া পেলে জীবনে আর কখনো জাতিসংঘ বা কোনো এনজিওর অধীন চাকরি করতে পারবে না। যদি করে, তাহলে তারা ওদের হত্যা করার অধিকার রাখবে এবং সে হত্যাকাণ্ড তাদের জন্য হালাল হিসেবে বৈধ হবে। এই মর্মে তারা একটা চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দিতে শুরু করল। ইয়েমেনিদের প্রবল আপত্তির মুখে তারা এতে সাময়িকভাবে ক্ষান্ত হলেও হুমকি অব্যাহত থাকল। তারা ক্রমেই অধৈর্য হয়ে উঠতে লাগল। অধৈর্য হয়ে আমাদের ওপর নানা ধরনের মানসিক চাপ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে লাগল। আমাদের জীবন হয়ে উঠল আরও দুঃসহ।

গোলকধাঁধার শেষে

এর মধ্যে একদিন প্রায় হঠাৎ করেই আমাদের আবার স্থানান্তর করার তোড়জোড় শুরু হলো। সেটা ২০২৩ সালের জুন মাসের কথা। প্রায় ১০ মাস মরুভূমিতে থাকার পর এক রাতে আমাদের যাত্রা শুরু হলো। হাত-চোখ বাঁধা অবস্থায় আবারও মরুভূমির মধ্য দিয়ে চললাম। এবার একটা ব্যতিক্রম দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। অপহরণকারীরা এবার আমার সঙ্গের ইয়েমেনিদেরও হাত বেঁধে দিয়েছে। এর কারণ বুঝতে পারলাম না। তবে কি কাজির নির্দেশ পালন করার জন্য আমাদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?

মরুভূমির মধ্য দিয়ে আমাদের গাড়ি চলছে। একসময় রাত পেরিয়ে ভোর হলো। আমরা চলতেই থাকলাম। সময় গড়িয়ে চলল, কিন্তু পথ আর শেষ হয় না। মরুভূমির মাঝখানে হঠাৎ ভয়ংকর দুর্ঘটনায় আমাদের গাড়ি বালুতে আটকা পড়ে প্রায় উল্টে যাওয়ার উপক্রম হলো। সবাইকে গাড়ি থেকে নামানো হলো। কী কারণে জানি না, আমাদের হাত ও চোখের বাঁধন খুলে দেওয়া হলো।

বালু থেকে গাড়ি উদ্ধার করার পর আবার শুরু হলো যাত্রা। এবার আমাদের হাত বা চোখ আর বাঁধা হলো না। চারদিকের সবকিছু আমরা দেখতে পারছিলাম। একপর্যায়ে আশপাশে সাইনবোর্ড পড়ে অনুমান করলাম, আমাদের সাবওয়াহ্ প্রদেশের কোনো এক শহরের কাছাকাছি নিয়ে আসা হয়েছে।

সেখানে গাড়ি বদল করে অন্য আরেকটি দলের কাছে আমাদের হস্তান্তর করা হলো। নতুন দলটি আমাদের নিয়ে চলল শহর ছাড়িয়ে পর্বতমালার দিকে। পর্বতমালার গভীরে একটা জায়গায় এসে গাড়ি থামল। আমাদের রাখা হলো গাছপালার আড়ালে লতাগুল্মের আচ্ছাদনে তৈরি একটা অস্থায়ী মসজিদের ভেতরে।

আমরা কিছুটা স্বাধীনতার ভাব অনুভব করলাম। আমাদের পাহারায় নিয়োজিত লোকগুলোকে অনেকটাই ভদ্র ও সংযত বলে মনে হলো। তাদের আচরণ মার্জিত ও সহযোগিতাপূর্ণ। আমাদের চলাফেরা করতে তারা বাধা দিল না। খোলা আকাশের নিচে মুক্ত আলো-বাতাসে থাকতে বেশ ভালো লাগছিল। দীর্ঘ ১৬টি মাস পর ভালোভাবে আকাশ দেখতে পারছি।

রাতে আকাশের অগণিত তারার নিচে শুয়ে দেশ ও পরিবারের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, জানি না। ঘুম ভাঙল ফজরের আজানের শব্দে। এখানে সবকিছু অনেক সহজ হলেও মনে আশঙ্কা জেগে উঠল। হঠাৎ এই স্বাধীনতা কেন? এটা কি আমাদের নির্মূল করার আগের পরিস্থিতি? কোরবানির পশু হালাল করার আয়োজন?

যা-ই হোক, যতক্ষণ শ্বাস রয়েছে, ততক্ষণই আশ! হাতের কাছে যা পাওয়া গেছে, মনের আনন্দে সেটুকুই নাহয় উপভোগ করা যাক। জায়গাটা পার্বত্য এলাকার রিসোর্টের মতো। দুই দিকে উঁচু পাহাড়। একধারে শুকিয়ে যাওয়া একটা পাহাড়ি নদী। নদীটা বৃষ্টির সময় স্রোতস্বিনী হয়ে ওঠে। চারদিকে চরে বেড়াচ্ছে উট, ছাগল, ভেড়া ও গাধা।
এখানে বসবাস অপেক্ষাকৃত সহজ, কিন্তু বন্দিজীবন আর কতটা আনন্দময় হতে পারে। তা ছাড়া মুক্তির কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।

দেখতে দেখতে ২০২৩ সালের কোরবানির ঈদ পার হয়ে গেল। এক বর্ষণমুখর রাতের শেষে হঠাৎ আমাদের একজন প্রহরী এসে দ্রুত তৈরি হতে বলল। আমাদের স্থানান্তর করা হবে। সঙ্গে কিছুই নেওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রায় খালি হাতে রওনা হলাম। আমাদের চোখ বাঁধা হলো না। জানি না এর কারণ কী। আমাদের মন সন্দেহে ভরে উঠল। একসময় মনে হলো, আমাদের হয়তো আবারও সেই মরুভূমিতে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে ভয়ংকর অপহরণকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

দিনের শেষবেলায় সত্যিই আমাদের সেই অপহরণকারী দলের এক নেতার হাতে সোপর্দ করা হলো। হতাশায় মুষড়ে পড়লাম। ফিরে চলেছি আবার সেই মরুভূমির পথে। কিন্তু এবার যেন কিছুটা পরিবর্তন অনুভব করছি। অপহরণকারীদের নেতাটি আগের মতো কঠোর আচরণ করছে না। তাকে বরং কিছুটা হাসিখুশিই দেখাচ্ছে। সে বন্ধুবৎসল হওয়ার চেষ্টা করছে। আমার সঙ্গী ইয়েমেনিদের সঙ্গে বেশ উৎফুল্লচিত্তে কথাবার্তা বলছে। কিছুক্ষণ পর আমাদের একজন ইশারায় জানাল, ভালো খবর আছে। ভালো খবরের আশ্বাস আগেও বহুবার পেয়েছি। তাই মনে কোনো উৎসাহ পেলাম না।

বেশ কিছু দূর যাওয়ার পর জোহরের নামাজ আর দুপুরের খাওয়ার বিরতির জন্য গাড়ি থামল। সে সময় আমার সঙ্গী ইয়েমেনিরা জানাল, আমাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মুক্তিপ্রক্রিয়ায় সমঝোতাকারীর বাড়িতে। সেখান থেকে আমাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু আশাহত হতে হতে মনের অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে এখন আশা করতেও ভয় হচ্ছে। পাছে এটাও ভন্ডুল হয়ে যায়।

সন্ধ্যা নাগাদ আমরা একটি শহরে পৌঁছালাম। আমাদের একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো। বলা হলো, ‘এখন থেকে তোমরা নিজেদের মুক্ত ভাবতে পারো।’ কিন্তু কোথায় মুক্ত? আমাদের চারদিকে সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র উপস্থিতি; তাদের মধ্যে আরও বেশি সতর্কতার ভাব লক্ষ করে মুক্তির কোনো স্বাদই অনুভব করতে পারছিলাম না।

ওই বাড়িতে আমাদের রাখা হলো দুই দিন। তৃতীয় দিন সন্ধ্যায় নিয়ে যাওয়া হলো প্রকৃত সমঝোতাকারী স্থানীয় শেখের প্রাসাদে। সেখানে আমাদের রাখা হলো আরও তিন দিন। সেই তিনটা দিন কাটল আশা আর নিরাশার ভীষণ দোলাচলের মধ্যে।

২০২৩ সালের ৭ আগস্ট ভোরে সেই সমঝোতাকারী শেখ অবশেষে ইয়েমেনে অবস্থানকারী সংযুক্ত আরব আমিরাতের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আমাদের সমর্পণ করল। সেদিন রাতের বেলাতেই আমাকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নিরাপত্তা বাহিনীর সামরিক বিমানে করে আবুধাবি নিয়ে যাওয়া হলো। আর আমার সঙ্গের চার ইয়েমেনি নাগরিককে তিন থেকে চার দিন পর হস্তান্তর করা হলো ইয়েমেন সরকার ও জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের কাছে। আমিরাতের নিরাপত্তা বাহিনী ৮ আগস্ট আবুধাবিতে অপেক্ষমাণ বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধির হাতে আমাকে হস্তান্তর করল। এখানে এসে বুঝতে পারলাম, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ও বাস্তবায়িত হয় আমার উদ্ধারপ্রক্রিয়া। হস্তান্তরের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি পরদিন সকালে আমিরাত এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে করে আমাকে ঢাকা নিয়ে এলেন।

এভাবেই অবশেষে আমার দীর্ঘ ১৮ মাসের অপহৃত জীবনের অবসান ঘটল। আপাতদৃষ্টে সুস্থ বোধ করলেও কোথায় যেন একটু অস্বস্তি রয়ে গেছে বলে মনে হলো। অনিশ্চিত পরিস্থিতি থেকে অকস্মাৎ মুক্ত হওয়ার স্নায়বিক চাঞ্চল্যে আমার মনমানসিকতা সম্ভবত উত্তেজিত হয়ে ছিল। ঠিক হওয়ার জন্য আরও কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। তবে স্ত্রী-পুত্র-কন্যা, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সান্নিধ্যে এসে কী যে স্বস্তি বোধ করলাম।

মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, ধর্মের নামে সৃষ্টিকর্তার দোহাই দিয়ে সন্ত্রাসীরা বিশ্বজুড়ে যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, তার আশু অবসান হোক। আর কাউকে যেন আমার মতো সন্ত্রাসী চক্রের অপহরণের শিকার হতে না হয়।