ঢাকার ওসিরা ঢাকাতেই

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অনুমোদনের পর সারা দেশের ৩৩৮ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বদলি করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তর এক প্রজ্ঞাপনে এই বদলির কথা জানিয়েছে।

বদলির তালিকায় দেখা গেছে, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৫০ থানার মধ্যে যে ৩৪ জন ওসিকে বদলি করা হয়েছে, তাঁদের ঢাকাতেই রাখা হয়েছে। ডিএমপির একজন ওসিকে থানা থেকে গোয়েন্দা বিভাগে (ডিবি) বদলি করা হয়েছে। ডিবি থেকে একজনকে ওসি করা হয়েছে। তবে ঢাকার মতোই অন্যান্য মহানগরেও তেমন রদবদল হয়নি।

ঢাকার বাইরে অনেক ওসিকে ভিন্ন জেলায় বদলি করা হয়েছে। তবে ঢাকার আশপাশের ওসিদের দু–একটি ব্যতিক্রম ছাড়া একই জেলায় কিংবা নিকটবর্তী জেলার থানায় বদলি করা হয়েছে। তালিকায় থাকা সাভার থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহাকে বদলি করে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা, সোনারগাঁ থানার ওসিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় বদলি করা হয়েছে। বদলির তালিকায় মানিকগঞ্জের সাত থানার ওসিদের এক থানা থেকে অন্য থানায় বদলি করা হয়েছে। গাজীপুরের একটি থানার ওসিকে বদল করে সাভার থানায় দেওয়া হয়েছে।

ডিএমপির ৫০ থানার মধ্যে অন্তত ২১ থানার ওসি ডিএমপিতেই দুই বছরের বেশি সময় ধরে চাকরি করছেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কামরুল আহসান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ইসির অনুমোদনের পর গতকাল ৩৩৮ থানার ওসিকে বদলি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার ১১ জন ওসি নানাভাবে ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ঘুরেফিরে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় থাকছেন। দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে থানার ওসিদের বদলির নিয়ম রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র। তবে ডিএমপির ৫০ থানার মধ্যে অন্তত ২১ থানার ওসি ডিএমপিতেই দুই বছরের বেশি সময় ধরে চাকরি করছেন। পুলিশ পরিদর্শক বি এম ফরমান আলী ২০১৩ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল থানায় ওসি হিসেবে যোগ দেন। পরে তাঁকে মতিঝিল থেকে বনানী থানার ওসি হিসেবে বদলি করা হয়। সেখান থেকে ডিএমপির বিমানবন্দর থানার ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। পুলিশের এই কর্মকর্তাকে গত বছর গুলশান থানার ওসি করা হয়। প্রায় ১০ বছর ঘুরেফিরে তিনি ডিএমপিরই বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালন করছেন। গতকাল তাঁকে গুলশান থেকে বদলি করে যাত্রাবাড়ী থানায় দেওয়া হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ওসি বদলি করা হয়েছে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে।

ইসি সূত্র জানায়, গত ৩০ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন সব ওসিকে বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সব থানার ওসিদের পর্যায়ক্রমে বদলি করার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে যেসব থানার ওসির বর্তমান কর্মস্থলে ছয় মাসের বেশি চাকরিকাল সম্পন্ন হয়েছে, তাঁদের অন্য জায়গায় বদলির প্রস্তাব ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো প্রয়োজন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠিতে অনুরোধ করা হয়। পরে ওসিদের বদলির প্রস্তাব পাঠানোর সময় বাড়িয়ে ৮ ডিসেম্বর করা হয়।

আরও পড়ুন

এদিকে একই সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বদলির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার প্রথম পর্যায়ে ৪৭ জন এবং গতকাল ১৫৮ জন ইউএনওকে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বদলি করা হয়।

পুলিশ পরিদর্শক বি এম ফরমান আলী প্রায় ১০ বছর ঘুরেফিরে ডিএমপিরই বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালন করছেন। গতকাল তাঁকে গুলশান থেকে বদলি করে যাত্রাবাড়ী থানায় দেওয়া হয়েছে।

ওসিদের বদলির প্রজ্ঞাপনে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ওসি বদলি করা হয়েছে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে। চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড থানার সেই আলোচিত ওসি তোফায়েল আহমেদকে একই জেলার বাঁশখালী থানায় বদলি করা হয়েছে। গত বুধবার ‘ওসির “চাঁদাবাজি” ১৯৬ কারখানায়’ শিরোনামে প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশিত হয়। চট্টগ্রাম জেলার একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার ইচ্ছাতেই ওসি তোফায়েলকে বাঁশখালী থানায় বদলি করা হয়েছে।

পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বলছে, ঢাকা ও আশপাশ জেলার ওসিদের বদলি না হওয়ার পেছনে পুলিশের ভেতরে কয়েক দিন ধরে দেনদরবার হয়েছে। একাধিক ওসি ঢাকায় থাকার জন্য বিপুল অর্থ খরচ করেছেন বলে আলোচনা আছে।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে করার জন্য এই বদলি। কিন্তু পুলিশসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো এখন দলীয় অনুগত হয়ে গেছে। ফলে এসব বদলি তেমন প্রভাব ফেলবে না বলে তিনি মনে করেন। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ঢাকার ওসিদের ঢাকায় থাকার জন্য যে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে, এটা অবাক করার মতো কোনো বিষয় নয়। আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ আগেও ছিল, এখন হয়তো এটা আরও বেড়েছে।