সদ্য পাস হওয়া ‘টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং’ নীতিমালাকে বৈষম্যমূলক বলে জানিয়েছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা। তাঁরা বলছেন, লাইসেন্সের কয়েকটি স্তর বাদ দেওয়ায় এবং নতুন পদ্ধতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্ষতির মুখে ফেলবে। এতে সরকার রাজস্ব হারাবে। এই নীতিমালা তৈরির প্রক্রিয়ায় সব পক্ষের সঙ্গে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়নি বলেও অভিযোগ করা হয়। উদ্যোক্তাদের দাবি না মানা হলে আইনি পথে এগোনোর কথাও জানানো হয়েছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর মহাখালীর একটি রেস্তোরাঁয় টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ‘নতুন টেলিকম পলিসি: দেশি উদ্যোক্তাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলা হয়। ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ), ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স), ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী (আইএসপি) এবং ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) লাইসেন্স বা অনুমতিপ্রাপ্তদের নিয়ে এ সভা হয়।
গত ৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) প্রণীত নতুন টেলিকম লাইসেন্সিং নীতিমালা পাস হয়। এ নীতিমালা নিয়ে দেশীয় বিভিন্ন অপারেটর আপত্তি জানিয়ে আসছে।
মতবিনিময় সভায় উল্লিখিত লাইসেন্স বা অনুমতিপ্রাপ্তদের সংগঠন থেকে নিজ নিজ অবস্থান ও বক্তব্য তুলে ধরা হয়। আন্তর্জাতিক গেটওয়ে অপারেটরদের সংগঠন আইজিডব্লিউ অপারেটরস ফোরামের (আইওএফ) চিফ অপারেটিং অফিসার মুশফিক মঞ্জুর নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। তাতে বলা হয়েছে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের স্বার্থ উপেক্ষা করে বড় বিদেশি অপারেটরদের একচেটিয়া আধিপত্যের পথ খুলে দেওয়া হয়েছে। এ নীতিমালা সরকারের রাজস্ব আহরণ ও দেশীয় বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থ ও ডিজিটাল সার্বভৌমত্বও হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব আইসিএক্স অপারেটরস অব বাংলাদেশের (এআইওবি) পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের নির্বাহী সদস্য আহমেদ উর রহমান। তিনি বলেন, নীতিমালায় আইসিএক্স বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা দেশীয় উদ্যোক্তাদের ধ্বংস করবে এবং সরকার রাজস্ব হারাবে। নীতিমালাটি প্রণয়নে অংশীজনদের মতামত যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। নীতিমালার মাধ্যমে আইসিএক্স বাদ না দিয়ে বাজার বাস্তবতায় টিকে থাকার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (আইআইজিএবি) পক্ষ থেকে মেজর (অব.) মাহমুদ শাহেদ বলেন, নীতিমালায় আইটিসি লাইসেন্সধারীদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইসিএসপিতে রূপান্তর করার সুযোগ দেওয়া হলে তা ইন্ডাস্ট্রিতে বৈষম্য তৈরি করবে। আইআইজির চেয়ে আইটিসির রাজস্ব অবদান ও অবকাঠামোগত বিনিয়োগ তুলনামূলক কম।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আইআইজিএবি বলেছে, আইআইজি ও আইটিসি উভয়কেই তাদের পরিচালন দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আইসিএসপিতে রূপান্তরের ন্যায্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হোক।
আইএসপিএবির যুগ্ম মহাসচিব ফুয়াদ মুহাম্মদ শরফুদ্দিন বলেন, ছোট ও মাঝারি আইএসপি উদ্যোক্তাদের জন্য বৈষম্যমূলক ধারা রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে আইএসপিএবি। লাইসেন্স মাইগ্রেশনে অস্পষ্টতা, জেলা পর্যায়ের সীমাবদ্ধতা এবং প্রান্তিক সংযোগে জটিলতা ছোট উদ্যোক্তাদের টিকে থাকার পথে বাধা সৃষ্টি করবে। তারা বৈষম্যমূলক ধারা বাতিল করে সব ধরনের অপারেটরের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
নতুন নীতিতে একটা গোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিয়ে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে অভিযোগ করে আইওএফ সভাপতি আসিফ রাব্বানী বলেছেন, আইজিডব্লিউ থেকে সরকারকে ১৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে এখন শুনতে হয় মধ্যস্বত্বভোগী।
আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম আশা করেন, সরকার তাঁদের ডাকবে এবং আলোচনা করবে। তাঁদের ন্যায্য দাবি না মানা হলে আইনের আশ্রয় নেবেন বলেও জানান।
টিআরএনবির সভাপতি সমীর কুমার দের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন এআইওবি সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান, আইআইজিএবির মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ, আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া, টিআরএনবির সাবেক সভাপতি রাশেদ মেহেদী প্রমুখ।