সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছাতেই তিন দিন সংকটাপন্ন রোগীর

সংকটাপন্ন দুই রোগী ও একজন বিদেশগামী যাত্রী নিয়ে উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে আজ সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রাম আসে এই নৌযানপ্রথম আলো

দুর্ঘটনায় মাথায় মারাত্মক আঘাত পাওয়া আবদুর রহমানের (১০) চিকিৎসা হচ্ছিল না সন্দ্বীপে। স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলেছেন, দ্রুত চট্টগ্রামে নিয়ে যেতে। এরপর তিন দিন ধরে বাড়ি আর হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে থাকেন আবদুর রহমানের বড় ভাই মো. ইসমাঈল। মুমূর্ষু ভাইটিকে বাঁচাতে দ্রুত অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করতে হবে তাকে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে গত তিন দিন চট্টগ্রাম যাওয়ার কোনো উপায় বের করতে পারেননি তাঁরা। একই সময়ে সন্দ্বীপে আটকা পড়েন একজন প্রসূতি নারী। চিকিৎসকেরা কিছু জটিলতা চিহ্নিত করে সন্তানসম্ভবা ওই নারীকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এ ছাড়া ভিসার মেয়াদ বা টিকিটের মেয়াদ ফুরিয়ে যাচ্ছে—এমন বিদেশগামী যাত্রীও আটকে পড়েছিলেন। ঘূর্ণিঝড় রিমালের উন্মত্ততা কেটে গেলেও চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌ যাতায়াত শুরু না হওয়ায় বিপাকে পড়েন তাঁরা।

ছোট ভাইকে বাঁচাতে ইসমাঈল তিন দিন ধরে ছুটেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আর বিভিন্ন ঘাটের ইজারাদারদের কাছে। ঝুঁকিপূর্ণ আবহাওয়ায় সাগর পাড়ি দেওয়ার আবেদনে কারও সাড়া পাননি তিনি। অবশেষে আজ মঙ্গলবার সাগর পাড়ি দেওয়ার সুযোগ মিলেছে তাঁদের। ফোনে ইসমাঈল প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, কয়েকজন আত্মীয়সহ আবদুর রহমানকে নিয়ে তাঁরা চট্টগ্রামের পথে আছেন। যাবেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ সময় দ্রুত অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ইসমাঈল।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে শনিবার থেকে উত্তাল হয়ে ওঠে সাগর। উপকূলীয় এলাকায় এ সময় বাড়ে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কসংকেতও। এই পরিস্থিতেই বন্ধ হয়ে যায় সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম নৌ যাতায়াত। দুর্ঘটনায় মাথায় জখম হয় সন্দ্বীপ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হেদায়েত উল্লাহর ছেলে আবদুর রহমানের। বাড়ির নির্মাণাধীন একটি দেয়ালে উঠে বসলে সেটি ধসে গিয়ে জীবনের ঝুঁকিতে পড়তে হয় ১০ বছর বয়সী আবদুর রহমানকে। স্থানীয় সন্দ্বীপ মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা অবস্থা গুরুতর জানিয়ে বলেন, তার চিকিৎসা সন্দ্বীপে সম্ভব নয়। এ সময় তার নাকেমুখে রক্তপাত শুরু হলে ঘাবড়ে যান পরিবারের সদস্যরা। এর পর থেকে তাঁরা সাগরপথে চট্টগ্রাম নিয়ে যেতে সবার সাহায্য চান। ব্যর্থ হয়ে হেলিকপ্টার ভাড়া করতে চাইলেও পারেননি। দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে হেলিকপ্টারের সাহায্যও যে পাবেন না, তা বুঝতে পেরে বস্তুত কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন তাঁরা।

এ সময় ফেসবুক পোস্ট করা একটি ভিডিওতে ছোট ভাইকে নিয়ে চট্টগ্রামে নিয়ে যেতে কান্নারত ইসমাঈলকে করুণ আকুতি জানাতে দেখা যায়। তার এই ভিডিও মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়। সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুরোধে আজ গাছুয়া আমীর মোহাম্মদ ঘাটে রোগী এবং বিদেশগামী যাত্রীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনায় একটি স্পিডবোটে যাত্রী পার করা হয়। ওই বোটেই আবদুর রহমানকে নিয়ে চট্টগ্রামে রওনা হন স্বজনেরা। একই বোটে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের উদ্দেশে রওনা দেন সন্তান প্রসবের অপেক্ষায় থাকা একজন নারী এবং বিদেশগামী কয়েকজন যাত্রী। সন্তোষপুর ইউনিয়নের মো. আকবর হোসেন জানিয়েছেন, তাঁর ফ্লাইট মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। পরিস্থিতি যা-ই হোক, আজ সাগর পাড়ি দেওয়া ছাড়া তাঁর উপায় ছিল না।

সন্দ্বীপের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিগ্যান চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত বজায় থাকলে নৌ চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। এমনকি সাগরের অবস্থাও সে ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় নয়। আবার সতর্কতা সংকেত না থাকলে সাগরে অতি উত্তাল অবস্থা বিরাজ করলেও যাত্রী পারাপার চলতে থাকে। বিপদাপন্ন মানুষদের জন্য আমরা বিশেষ বিবেচনায় আজ একটি স্পিডবোট ছাড়ার অনুরোধ করেছি। সেখানে কেবল সংকটাপন্ন রোগী আর বিদেশগামী যাত্রীরা পার হয়েছেন।’