কিস্তিতে ঘরে আসুক স্বস্তির এসি

প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

দিন দিন বাড়ছে গরমের প্রকট। ইট-পাথরের ঘরবাড়িতে নাভিশ্বাস উঠে যায় যাপিত জীবনে। ফ্যানের বাতাসে পাওয়া যায় না পুরো স্বস্তি। দরকার হয় এয়ার কন্ডিশনার বা এসির।

পরিবেশ গরম কিন্তু পকেট শীতল থাকার কারণে ঘরে এসি আনাটা হয়ে যায় চিন্তার বিষয়। কিন্তু মানুষ এখন সমস্যার চেয়ে বেশি কাজ করেন সমাধান নিয়ে। তাই ঘরে এসি আনার চিন্তার সমাধানের পথ বের হয়ে যায় কিস্তি–সুবিধার মাধ্যমে। এখন কিস্তিতে খুব সহজেই এসি নিয়ে আসতে পারেন আপনার ঘরে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এসি কিনতে দিচ্ছে ঋণ। ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে মাসে মাসে কিস্তিতে টাকা দেওয়ার সুবিধার জন্য এসি এখন নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠছে মধ্যবিত্তদেরও। সেই সঙ্গে পরিবেশক ও ডিলাররা কিস্তিতে এসি কেনার জন্য দিচ্ছেন নানা সুযোগ-সুবিধা।

কিস্তিতে এসি কেনার বিষয়ে র‌্যাংগস ই-মার্টের বিপণন প্রধান সায়েদুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, এসি এখন আর বিলাসিতার বস্তু নয়। এটা প্রয়োজনের। গত বছরগুলোর চরম গরমে মধ্যবিত্তরাও কিনছেন এসি। ঘরে ঘরে এমন এসির ব্যবহার অনেকটাই সহজ হয়েছে কিস্তিতে কেনার সুবিধার জন্য।

সায়েদুর রহমান খান জানান, কিস্তিতে এসি কিনতে অনেক সময় অতিরিক্ত সুদ গুনতে হয়। বেশির ভাগ ব্যাংকের কার্ডেও রয়েছে সুদ। তবে এখন বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই এসির ক্ষেত্রে সুদ নিচ্ছে না। ফলে কিস্তিতে এসি কিনলে বাড়তি টাকা গোনার কোনো ঝামেলা নেই। তাই সবাই আগ্রহী হচ্ছেন কিস্তিতে কিনতে। এর সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংক ও নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এসি কিনতে ঋণসুবিধা চালু করেছে। ফলে এখন সহজেই কেনা যায় ঘরের এ প্রয়োজনীয় যন্ত্রটি।

ব্যবসা বাড়াতে এসির উৎপাদক, বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এসি কিনতে গ্রাহকদের ঋণ দিচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ কিস্তি সুবিধায় এসি কিনতে উৎসাহিত হচ্ছেন। এখন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে এসি কিনে তা মাসে মাসে শোধ করা যায়, যাকে বলা হয় ইকুয়েটেড মান্থলি ইনস্টলমেন্ট বা ইএমআই। এর মাধ্যমে ১ লাখ টাকার পণ্য ক্রয় করে ১২ মাসে টাকা শোধ করা যায়।

ক্রেডিট কার্ড দিয়ে এলজি বাটারফ্লাই, সিঙ্গার, গ্রি, ট্রান্সটেক, স্যামসাং, যমুনা, ভিশন, মিনিস্টার, ট্রান্সটেকসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এসি কেনা যাচ্ছে। পাশাপাশি ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকসে এসি কিনতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্স দিচ্ছে বিশেষ ভোক্তা ঋণ। এর মাধ্যমে ২০ হাজার টাকার বেশি বেতনভোগী যেকেউ ঋণ নিয়ে এসি কিনতে পারবেন।

দেশের বাজারে পাওয়া প্রায় সব ব্র্যান্ডের এসিতেই রয়েছে কিস্তির সুবিধা। ৬ থেকে ১২ মাসের কিস্তিতে পরিশোধ করা যাচ্ছে এসির দাম। কোনো কোনো ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে মিলছে ১৮ মাসের কিস্তির সুবিধাও। দেশের প্রায় সব কটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের গ্রাহক এ সুবিধা পাচ্ছেন। বেসরকারি খাতের মিউচুয়াল ট্রাস্ট, সাউথইস্ট, ঢাকা, ব্র্যাক, ইউসিবি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এসআইবিএল, আল-আরাফাহ ইসলামী, প্রিমিয়ার, ইস্টার্ন, লংকাবাংলা, প্রাইম, কমার্স ব্যাংক অব সিলন, এবি, ওয়ান, ট্রাস্ট, এনআরবি, মিডল্যান্ড, এনসিসি, যমুনা, ডাচ্-বাংলা, শাহজালাল ইসলামী, ব্যাংক এশিয়া ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকেরা পাচ্ছেন এ সুবিধা।

২০২৩ সালের জুনে এসি কিনেছেন সরকারি চাকরিজীবী আরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, ‘বাসায় একটি এসি ছিল। কিন্তু এখন আমার মা আমাদের সঙ্গেই থাকেন। সন্তান হয়ে এসিতে আমি ঘুমাব আর মা গরমে কষ্ট পাবেন—এটা ভেবে কষ্ট পাচ্ছিলাম। পরে উদ্যোগ নিই কিস্তিতে এসি কেনার।’

আরিফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘কার্ড দিয়ে বাকিতে এসি কিনেছি। টাকা শোধ দিতে হবে ১২ মাসে। তবে কোনো সুদ দিতে হবে না। দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা দেওয়ায় চাপ কিছুটা কমেছে। কিস্তিতে এসি কেনার এমন সুবিধা আসলে মানুষকে পারিবারিক অনেক ঝামেলা থেকে বাঁচিয়ে দেয়। পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুন্দর জীবনযাপনে এমন সুবিধা আসলেই প্রয়োজন।’