হ্যাকিংয়ের কবলে সার্ভার, পাওয়া যাচ্ছে না জন্মসনদ

জন্ম নিবন্ধন
প্রতীকী ছবি

বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ভাতিজার জন্মনিবন্ধন সনদ দরকার। এ জন্য এক সপ্তাহ ধরে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে ঘুরছেন চাচা রিপন দাশ। দুই–এক দিন পরপর যান। কিন্তু সনদ নিতে পারছেন না। কবে পাবেন, তা–ও তাঁকে জানানো হচ্ছে না।

চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজারে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে রিপন দাশের সঙ্গে কথা হয় গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে। অনলাইনে ভাতিজা রুপন মালির জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে গত ২৫ জানুয়ারি আবেদন করেছিলেন রিপন। দুই দিন পরই তা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনো পাননি। কাউন্সিলর কার্যালয়ের জন্মনিবন্ধন সহকারী তাঁকে জানান, হ্যাকাররা জালিয়াতি করে জন্মনিবন্ধন সনদ বের করে নিয়েছে। এ জন্য আপাতত জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু কার্যক্রম বন্ধ।

রিপন দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ভাতিজার জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে গত ২০ জানুয়ারি থেকে অনলাইনে আবেদনের চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সার্ভারে ধীরগতি থাকায় পারেননি। অবশেষে ২৫ জানুয়ারি আবেদন করেন। দুই দিন পরেই সনদ পাওয়ার কথা। কিন্তু জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াতির কারণে সার্ভার বন্ধ থাকায় সনদ দিতে পারছে না কাউন্সিলর কার্যালয়। এর মধ্যে ভাতিজার ভর্তির সময়ও শেষ হয়ে গেছে। পরে টিকা কার্ড দেখিয়ে ও নানা অনুরোধ করে ভর্তি করাতে সক্ষম হন। তবে দু-তিন দিনের মধ্যে সনদ জমা দিতে বলা হয়েছে।

শুধু লালখান বাজার নয়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আরও পাঁচটি ওয়ার্ডে জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে স্থানীয় সরকার বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়। গত ৮ থেকে ২৪ জানুয়ারি নগরের এই ৬ ওয়ার্ডের আইডি ব্যবহার করে সার্ভারে ঢুকে ধাপে ধাপে ৭৯৬টি জন্মনিবন্ধন সনদ বের করে নেওয়া হয়েছে।

এর পর থেকে ছয়টি ওয়ার্ডে জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে—নগরের লালখান বাজার, দক্ষিণ কাট্টলী, পাহাড়তলী, আন্দরকিল্লা, দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ও উত্তর পতেঙ্গা।

জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াত চক্র শনাক্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলছে। ইতিমধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত সাত–আট মাসে পাঁচ হাজারের বেশি জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়েছে চক্রটি। তবে সার্ভার হ্যাক করে নাকি পাসওয়ার্ড দিয়ে জালিয়াত চক্র ঢুকেছে, তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও জন্মনিবন্ধন সহকারীরা ধারণা করছেন, তাঁদের আইডি হ্যাক করে এসব জন্মনিবন্ধন সনদ বের করে নেওয়া হয়েছে।

সনদ ইস্যু কার্যক্রম স্থগিত করা হলেও প্রতিদিনই লোকজন আসছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে। আবার কেউ কেউ কাউন্সিলরদের বাসা ও ব্যক্তিগত কার্যালয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁরা কোনো সমাধান দিতে পারছেন না।

সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যালয়ে ভর্তিসহ নানা কারণে ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে জন্মনিবন্ধন সনদ নেওয়ার চাপ থাকে। বছরের অন্যান্য সময় প্রতিদিন গড়ে যেখানে ১৫ থেকে ২০টি আবেদন জমা হয়, সেখানে জানুয়ারিতে জমা হয় ১০০ থেকে ১৫০টি। কখনো কখনো ২০০টি আবেদনও জমা পড়ে। বিদ্যালয়ে ভর্তি ছাড়াও পাসপোর্ট, ভোটার তালিকায় নাম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজনে জন্মনিবন্ধন সনদ লাগে।

গতকাল দুপুরে নগরের লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে এসেছিলেন এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী। তিনি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নিজের জন্মনিবন্ধন সনদের নাম সংশোধনের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু এখনো পাননি। পাসপোর্ট করতে এই সনদ জরুরি বলে জানান তিনি।

নগরের লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল আজ বুধবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, জালিয়াত চক্র হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন সনদ বের করে নেওয়ার পর সনদ দেওয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যুর বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাননি।

নগরের পাহাড়তলী ওয়ার্ডে আজ সকালে জন্মনিবন্ধন সনদের জন্য এসেছিলেন তিনজন। কিন্তু সার্ভার বন্ধ থাকায় পাননি। তাঁদের একজন বলেন, আগে একটি জন্মনিবন্ধন সনদ ছিল। কিন্তু সেটা অনলাইনে করা হয়নি। এখন অনলাইনে করতে হবে।

পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, লোকজন তাঁদের কাছে আসছেন। কিন্তু তাঁদের কিছু করার নেই। আগে তাঁরা যাচাই-বাছাই করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সনদ ইস্যু করতেন।

জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু কার্যক্রম স্থগিত থাকায় জনদুর্ভোগের বিষয়টি অবগত আছেন বলে জানান সিটি করপোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ। তিনি বলেন, এখন বিদ্যালয়ে ভর্তির সময়। ভর্তিতে জন্মনিবন্ধন সনদ দরকার। স্থগিতাদেশ তুলে নিতে ইতিমধ্যে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন