ধর্ষণ প্রমাণে ‘টু ফিঙ্গার’ পরীক্ষা নিষিদ্ধ হলেও সচেতনতা কম

টু ফিঙ্গার টেস্ট করার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন পর্যালোচনা নিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মতবিনিময় সভা করেছবি: বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সৌজন্যে

ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের শারীরিক পরীক্ষায় ‘টু ফিঙ্গার’ (দুই আঙুলের পরীক্ষা) পদ্ধতি নিষিদ্ধ করেছেন হাইকোর্ট। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা, মেডিকো-লিগ্যাল পরীক্ষার সঙ্গে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অনেকেই রায়টি সম্পর্কে জানেন না। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগও সীমিত আকারের। রায়টি বাস্তবায়নে সচেতনতা তৈরি প্রয়োজন।

আজ শনিবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা উঠে আসে বলে তাদের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট করার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন পর্যালোচনা’ শিরোনামে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদা রেহানা বেগম। ধারণাপত্রে বলা হয়, হাইকোর্ট বিভাগ ‘দ্বি-আঙুলের পরীক্ষা’ বা ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ অবৈজ্ঞানিক, অনির্ভরযোগ্য এবং অবৈধ ঘোষণা করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। দেশের বিভিন্ন স্থানে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মেডিকো-লিগ্যাল পরীক্ষার সঙ্গে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অনেকেই রায়টি সম্পর্কে অবগত নন।

ধারণাপত্রে আরও বলা হয়, হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে সব মেডিকেল কলেজ, হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে পাঠালেও পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে তেমন কোনো নজরদারি করা হয়নি। রায়টি বাস্তবায়নে সচেতনতা তৈরিতে ব্যাপক প্রচার চালানো দরকার।

আইসিডিডিআরবির মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের ইমেরিটাস বিজ্ঞানী রুচিরা তাবাস্‌সুম নভেদ্‌ বলেন, টু ফিঙ্গার টেস্ট নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে নানা বিভ্রান্তি আছে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণিত হয় কি না, তা পরিষ্কার নয়; এই ধারণা অবৈজ্ঞানিক।

আইসিডিডিআরবির জেন্ডার সমতাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ নাহিদা আক্তার বলেন, টু ফিঙ্গার টেস্টের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন মূল্যায়নের লক্ষ্যে ঢাকা, দিনাজপুর ও রংপুরে স্বাস্থ্য ও আইন সহায়তাদানকারী এনজিওগুলোর ওপর গবেষণা করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার বাইরে চিকিৎসক, আইনি সেবাদানকারী সংস্থার প্রতিনিধি, পুলিশ টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে তেমন সচেতন নয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহসভাপতি রওশন আরা বেগম, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ রাহাত আরা নূর।