কৃতজ্ঞতা, প্রিয় প্রথম আলো

প্রথম আলোর ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কর্মীদের কাছে লেখা আহ্বান করা হয়েছিল। তাঁরা লিখেছেন প্রথম আলোকে নিয়েই। কর্মীদের নির্বাচিত কিছু লেখা নিয়েই এ আয়োজন।

ক্লাস সেভেন-এইটে পড়ার সময় গ্রামের বাড়িতে আমাদের চার পরিবারের জন্য একটি পত্রিকা বরাদ্দ ছিল, সেটা ছিল প্রথম আলো। প্রায় সমবয়সী ভাইবোনেরা কয়েকজন প্রতি সোমবারের অপেক্ষায় থাকতাম ‘আলপিন’ পড়ার জন্য। চার বা পাঁচ ভাইবোন মিলে একটা আলপিন নিয়ে রীতিমতো মিষ্টিমধুর ঝগড়াই বেঁধে যেত! আমার বড় ভাই তো সবার আগে আলপিন নিয়ে ছাদে চলে যেত, সিঁড়ি না থাকায় আমরা অসহায়ের মতো নিচে অপেক্ষায় থাকতাম কখন তার পড়া শেষ হবে আর আমরা হাতে পাব।

কিছুদিন পর আলপিনে প্রায় নিয়মিত লেখা পাঠানো বোন পত্রিকার হকারকে বাড়তি টাকা দিয়ে অতিরিক্ত একটি আলপিন নেওয়ার ব্যবস্থা করে। আলপিন নিয়ে ছাদে চলে যাওয়া আমার বড় ভাইয়ের প্রথম আলোর প্রতি পাগলামি স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা হয়ে ওঠার পরেও আছে। কর্মস্থল সিলেট থেকে ছুটি নিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবারের পাঠক উৎসবে উপস্থিত হয়।

শৈশবে যে পত্রিকা নিয়ে এমন পাগলামি ছিল, সেই পত্রিকায় কাজ করা এখনো স্বপ্নের মতোই মনে হয়। যেদিন প্রথম আলো মানবসম্পদ বিভাগ বা এইচআর থেকে কাজে যোগদানের জন্য কল পেয়েছিলাম, সেদিন আম্মা আর চাচাকে কল দিয়ে জানানোর পর তাঁদের কান্নাজড়িত কণ্ঠে, তুই প্রথম আলোতে কাজ করবি—এই বাক্যের মধ্যে অনেক অর্থ ছিল। যেন অভিভাবক হয়ে মেয়ের জন্য নিরাপদ এবং ভরসা করার মতো এক অভিভাবক পাওয়া। আমার এখনো মনে পড়ে, সাত বছর আগে প্রথম আলোর নিয়োগপত্র পাওয়ার পর থেকে দুই মাস প্রায় প্রতিদিন নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে পড়তাম, সবকিছু কেমন যেন স্বপ্নের মতোই।

প্রথম আলোতে যোগদানের পর থেকে প্রায়ই সম্পাদক থেকে শুরু করে প্রায় সবার সহযোগিতার মনোভাব দেখে অবাক হয়েছি। যোগদানের কিছুদিন পর একদিন লিফটের অপেক্ষায় সম্পাদক স্যার দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেখানে আমিও ছিলাম। যেহেতু সম্পাদক, উনি লিফটে একা উঠবেন এমন চিন্তা করে আমি লিফটে পরে উঠব ভেবে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হতভম্ব হয়ে খেয়াল করলাম, সম্পাদক স্যার লিফটের বাটন ধরে আমাকেও লিফটে ওঠার জন্য ডাকছেন! সেদিন থেকে সম্পাদক স্যারের এমন বিনয়ী আচরণ বহুবার দেখেছি, আর শ্রদ্ধা-ভক্তিতে মন আচ্ছন্ন হয়েছে বারবার।

যখনই জীবনযুদ্ধে হেরে যাচ্ছি ভেবে মন খারাপ করি, তখনই মা-চাচা-ভাইবোনেরাও মনে করিয়ে দেন প্রথম আলোতে আছি, আর এটা যেন অভিভাবক হিসেবে তাঁদের মনেও সাহস দেয়। জীবনের এই পথচলায় মাঝেমধ্যেই মনে হয় কোথাও আটকে যাচ্ছি, প্রতিবার প্রথম আলো ছায়ার মতো পাশে থেকে শক্তি হয়ে উপস্থিত হয়েছে। প্রথম আলোর মানবিকতায় ক্লান্ত মন কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠেছে।

প্রথম আলোর এক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সম্পাদক স্যারের বক্তৃতায় শুনেছিলাম, কোনো এক অভিভাবক প্রথম আলোর জন্য দোয়া করেছিলেন যে আল্লাহ যেন প্রথম আলোকে বেহেশতে নিয়ে যায়। মাঝেমধ্যে প্রথম আলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসায় কেন যেন আমারও সেই অভিভাবকের মতোই একই দোয়া চলে আসে।

সাদিয়া শারমীন ঠাকুর
নিউজ আর্কিভিস্ট
প্রথম আলো লাইব্রেরি ও আর্কাইভ