মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির কারাবাসকে ১০ বছরের সাজাভোগ গণ্য করে খালাসের রায় স্থগিত

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

৩ কেজি ৭০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধারের ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা এক মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে এক আসামির মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। এই আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে এবং তাঁর কারাভোগের সময়কে ১০ বছরের সাজাভোগ হিসেবে গণ্য করে তাঁকে খালাস দিয়ে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন। এ রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে শরীফুল নামের ওই আসামিকে কনডেমড সেল থেকে সাধারণ সেলে স্থানান্তর করতেও বলা হয়েছে।

মামলাসংক্রান্ত নথিপত্র থেকে জানা যায়, ৩ কেজি ৭০০ গ্রাম হেরোইনসহ শরীফুলকে ২০১২ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আটক করে বিজিবি। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়। এই মামলায় ২০১৭ সালে শরীফুলকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন বিচারিক আদালত।

এরপর আসামির মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য বিচারিক আদালতের রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টে আসে, যা ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনসংক্রান্ত মামলা) মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। অন্যদিকে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে শরীফুল জেল আপিল ও আপিল করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের তথ্যমতে, ডেথ রেফারেন্স এবং আসামির জেল আপিল ও আপিলের ওপর একসঙ্গে শুনানি শেষে ১২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রায় দেন। রায়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পরিবর্তন করে শরীফুলকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে আসামি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন—কারাবাসের এই সময় তাঁর ১০ বছরের সাজাভোগ হয়ে গেছে গণ্য করে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।

হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ১৮ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগে আবেদন করে, যা আজ চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৫ গ্রামের বেশি হেরোইন পাওয়া গেলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান আইনে আছে। আইনে বিকল্প সাজার বিধান নেই। শরীফুলের কাছে ৩ কেজি ৭০০ গ্রাম হেরোইন পাওয়া যায়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই আসামিকে হাইকোর্ট ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে আসামি কারাগারে আছেন। তাই তাঁর কারাভোগের সময় ধরে সাজা খাটা হয়ে গেছে গণ্য করে হাইকোর্ট তাঁকে খালাস দিয়েছেন। অথচ ১০ বছরের সাজা আইন সংগত নয়, যে কারণে রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের আপিল বিভাগে আবেদন করে। চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে ওই আদেশ দেন।’

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে) আবেদন করা হবে বলে জানান রাষ্ট্রের এই আইন কর্মকর্তা।