দীর্ঘ চার বছর পর চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মূল ফটকে আজ মঙ্গলবার বসানো হয়েছে পুলিশের তল্লাশিচৌকি। একই সঙ্গে আদালতের নিরাপত্তায় নতুন করে যুক্ত হয়েছেন ২৮ জন পুলিশ সদস্য। এতে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে।
গতকাল সোমবার প্রথম আলোর অনলাইনে ‘ঢাকায় জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর চট্টগ্রামের আদালতেও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, চট্টগ্রামে ৭৬টি আদালতে জঙ্গি ও দুর্ধর্ষ আসামিদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ সদস্য নেই। সাধারণত আদালতের হাজতখানা থেকে প্রতিটি এজলাসে আসামি আনা–নেওয়ার জন্য মাত্র একজন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োজিত থাকেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আদালতে নগর পুলিশের ১৭০ থেকে ২০০ পুলিশ সদস্য প্রয়োজন হলেও আছেন মাত্র ৬০ জন। একই অবস্থা জেলা পুলিশেও। সেখানে ২০০ পুলিশ সদস্যের স্থলে রয়েছে ১৩০ জন। নিরাপত্তা জোরদার করা না হলে ঢাকার আদালতের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চট্টগ্রামে হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন আইনজীবীরা।
আজ মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, আদালত ভবনের মূল ফটক সোনালী ব্যাংকের সামনে তল্লাশিচৌকিতে চারজন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। সন্দেহজনক হলে আদালতে আসা দর্শনার্থীদের তল্লাশি করছেন। শিক্ষানবিশ আইনজীবী সাবেকুন নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকার আদালত থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার পর থেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। শুনেছি আগে চট্টগ্রাম আদালতে বোমা হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। কিন্তু পুলিশের কোনো তল্লাশিচৌকি ছিল না। মঙ্গলবার সকালে আদালতে এসে তল্লাশিচৌকি দেখে কিছুটা স্বস্তিবোধ করছি।’
আদালত ভবনের নিচতলায় মহানগর হাজতখানায় গিয়ে দেখা যায়, এটির সামনে তিনজন পুলিশ সদস্য পাহারায় আছেন, যা আগে ছিল না। একই চিত্র জেলা হাজতখানায়ও। কারাগার থেকে আসামিদের আদালতে আনা–নেওয়ায় ছিল বাড়তি নিরাপত্তা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ লাইনস থেকে আদালতে নিরাপত্তায় অতিরিক্ত ২০ জন পুলিশ সদস্যকে পাঠানো হয়েছে। এর সঙ্গে আরও যুক্ত হবে। বন্ধ থাকা তল্লাশিচৌকিও চালু হয়েছে। আদালতপাড়ায় পুলিশি টহল আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। কোতোয়ালি থানা–পুলিশের দুটি দল টহলে রয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট পরিদর্শক জাকের হোসাইন মাহমুদ জানান, জেলা পুলিশ লাইনস থেকে তারা মঙ্গলবার থেকে আটজন অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য পেয়েছেন আদালতের নিরাপত্তায়। পর্যায়ক্রমে এই সংখ্যা বাড়বে বলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গত রোববার ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশ সদস্যদের চোখে স্প্রে ছিটিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি মইনুল হোসেন শামীম ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেলকে ছিনিয়ে নেন জঙ্গিরা। পালিয়ে যাওয়া দুজন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সদস্য। তাঁরা জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এ ঘটনার পর চট্টগ্রামের আদালতের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
আদালতের নিরাপত্তায় মঙ্গলবার থেকে বাড়তি পুলিশ নিয়োজিত করায় আইনজীবীরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়া উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নিরাপত্তার স্বার্থে যা যা করা দরকার, সবকিছু করতে হবে।