চিনিকলের বর্জ্যে মাছ ভাসছে কর্ণফুলীতে

কর্ণফুলী নদীতে চিনির গলিত পানি মিশে পানি এখন কালচে বর্ণ ধারন করেছে। বুধবার সকাল থেকে বিপুলসংখ্যক মৃত মাছ ভাসতে দেখা যাচ্ছে। বেলা ১টায় কর্ণফুলী নদীর চট্টগ্রাম বন্দরের এলাকায়ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানা এলাকায় এস আলম চিনিকলের গুদামের অপরিশোধিত চিনির গলিত পানির কারণে কর্ণফুলী নদীতে মাছসহ নানা জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে।

আজ বুধবার সকাল থেকে কর্ণফুলী নদীতে বিপুলসংখ্যক মৃত মাছ ভাসতে দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় জেলে ও পরিবেশবিদদের মতে, নদীর পানি দূষিত হয়ে যাওয়ায় এত মাছ মারা যাচ্ছে।

পানিতে চিনির বর্জ্য মিশে যাওয়ায় দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে। এতে জলজ প্রাণী হুমকিতে পড়বে।
কামরুল হাসান, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক

গত সোমবার কর্ণফুলী নদীর পাড়ে অবস্থিত এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের গুদামে আগুন লাগে। আজ তৃতীয় দিনে এসেও আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। এদিনও ফায়ার সার্ভিসের আটটি গাড়ি আগুন নেভাতে কাজ করছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিনিকলের বর্জ্য মিশ্রিত পানির কারণে বেশ কিছু মাছ ও কাঁকড়া মারা গেছে। আমাদের একটা দল ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করছে।’

নদীতে ভাসতে থাকা মাছ ধরতে সেখানে ভিড় করছেন স্থানীয় লোকজন ও জাহাজের শ্রমিকেরা। বুধবার বেলা ১টায় কর্ণফুলী নদীর চট্টগ্রাম বন্দরের এলাকায়
ছবি-সৌরভ দাশ

গুদামে আগুন লাগার পর থেকে অপরিশোধিত চিনির গলিত পানি গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলীতে। ১০০ মিটারের দুটি নালা ঘুরে নদীটিতে গিয়ে পড়ছে এ পানি। এতে পোড়া তেলের মতো অপরিশোধিত চিনির বর্জ্য ভাসতে দেখা যাচ্ছে নদীতে। গতকাল মঙ্গলবার পরিবেশ অধিদপ্তর নদী থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।

গত সোমবার কর্ণফুলী নদীর পাড়ে অবস্থিত এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের গুদামে আগুন লাগে। আজ বুধবার তৃতীয় দিনে এসেও আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। এদিনও ফায়ার সার্ভিসের আটটি গাড়ি আগুন নেভাতে কাজ করছে।

অধিদপ্তরের উপপরিচালক কামরুল হাসান বলেন, পানিতে চিনির বর্জ্য মিশে যাওয়ায় দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে। এতে জলজ প্রাণী হুমকিতে পড়বে।

নদীর পানি দূষিত হয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভেসে উঠছে মাছ, কাঁকড়াসহ বিভিন্ন পোকামাকড়। বুধবার বেলা ১টায় কর্ণফুলী নদীর বাস্তুহারা এলাকায়
ছবি: সৌরভ দাশ

নদীতে আজ সকাল থেকে মরা মাছ ভাসতে দেখা যায়। কাঁচকি, টেংরা, কাঁকড়া, চিংড়িসহ বিভিন্ন মাছ ও জলজ প্রাণী মরে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে ভাসছিল। কিছু ভাসছিল আধমরা অবস্থায়। স্থানীয় লোকজন মাছগুলো সংগ্রহ করতে নেমে পড়েন নদীতে।

অগ্নিকাণ্ডের পর চট্টগ্রামের এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের গুদামের আগুন নেভাতে এখনও পানি ছিটাচ্ছেন ফায়ারা সার্ভিসের কর্মীরা। সেই পানির সঙ্গে কারখানা থেকে অপরিশোধিত চিনি ও রাসায়নিক গলে নালা দিয়ে সরাসরি পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। বুধবার দুপুর ১২টায় কর্ণফুলী থানার বাংলাবাজার ঘাট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

অন্যদের মতো মাছ ধরায় ব্যস্ত সাইফুল নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, ‘সকাল থেকে বেশ কিছু আধমরা ও মৃত মাছ ধরেছি। নদীর অনেকটা এলাকাজুড়ে মাছ ভাসছে।’

আগুন পুরোপুরি নেভেনি

এদিকে আজ সকালেও আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

চিনি কারখানার গুদামে জ্বলছে আগুন। ৫ মার্চ
ফাইল ছবি

আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর পৃথক দল ঘটনাস্থলে যায়। সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

সুগার মিলটির পাশে অপরিশোধিত চিনি রাখার পাঁচটি গুদাম ছিল। যে গুদামটিতে আগুন লেগেছে, তাতে ৬০ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি ছিল বলে মিল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আবদুল মালেক বলেন, যেহেতু বড় আগুন, তাই পুরোপুরি নেভানোর পর কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত করে বলতে হবে।

আরও পড়ুন

ইতিমধ্যে অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদ্‌ঘাটনে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়। কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমানকে। আর ওই ঘটনায় সুগার মিলের স্থান ইছানগর ও আশপাশের এলাকায় নানা ধরনের পরিবেশগত বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন