সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা উদীচীর

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী

দেশজুড়ে চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, অব্যাহত শিক্ষক নির্যাতন, নিপীড়ন, লাঞ্ছনা এবং বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির প্রতিবাদে ২৯ থেকে ৩১ জুলাই দেশব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ বেশ কয়েকটি প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন। কর্মসূচিতে দেশের সব জেলা ও উপজেলায় প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ ও স্মারকলিপি দেওয়া হবে।

আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উদীচী এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৯ ও ৩০ জুলাই দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ করা হবে। ৩১ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সব জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

উদীচী জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে একই কৌশলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্ম অবমাননার ভুয়া অভিযোগ তুলে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই অপরাধীরা একই কৌশল অবলম্বন করলেও প্রশাসন সেই কৌশল ঠেকাতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব অপকর্মে সহযোগীর ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে তাদের। এ ছাড়া অধিকাংশ অপরাধের ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা গেছে।
গত কয়েক বছরে শুধু হিন্দু বা আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ নির্যাতনই নয়, আশঙ্কাজনক হারে শিক্ষক লাঞ্ছনা, নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনাও বেড়েছে।

নারায়ণগঞ্জের শ্যামল কান্তি ভক্ত থেকে শুরু করে নওগাঁর আমোদিনী পাল, মুন্সিগঞ্জের বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল, নড়াইলের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস, রাজশাহীর গোদাগাড়ীর অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বা আশুলিয়ার কলেজশিক্ষক উত্পল কুমার সরকার পর্যন্ত একের পর এক শিক্ষক লাঞ্ছিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত, এমনকি হত্যাকাণ্ডের শিকারও হচ্ছেন। প্রতিটি ঘটনার পেছনেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতিতে বাধা দেওয়া বা অনিয়ম-দুর্নীতির পথ সুগম করার অভিপ্রায় প্রমাণিত হয়েছে।

দেশব্যাপী তিন দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে উদীচীর সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছে প্রগতি লেখক সংঘ, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্র, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, প্রাচ্যনাট, বটতলা, থিয়েটার বায়ান্ন।

প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো মনে করে, এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর এখনই সময়। সাধারণ জনগণকে সচেতন করে এই বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বা শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিটি ঘটনার কুশীলবদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।